কলকাতা: চলে গেলেন কলকাতার ‘গ্রামফোন ম্যান’ মহম্মদ ইলিয়াস। বয়স হয়েছিল ৬৮। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছেন বলে পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে। আদতে হাওড়ার বাঁকড়ার বাসিন্দা ইলিয়াসের দোকান ছিল ১৫৫ নম্বর লেনিন সরণিতে। কমলালয় সেন্টারের কাছেই নিগম বিল্ডিংয়ের একতলায় এক চিলতে দোকান নিয়েই ছিল তাঁর জীবন। প্রথমে গ্রামফোন রেকর্ডার সারাতেন। তারপরই নেশা চেপে বসে পুরনো রেকর্ড সংগ্রহ এবং বিক্রির। ক্রমে ক্রমে ইলিয়াস হয়ে ওঠেন শহরের ‘গ্রামাফোন ম্যান’।
ছোটবেলা থেকেই ভারতীয় মার্গ সঙ্গীত এবং পুরনো হিন্দিগান শুনতে ভালবাসতেন ইলিয়াস। যদিও পরিবারের আর কোনও সদস্যের গানের প্রতি কোনও উৎসাহ ছিল না। গান শুনতে শুনতে মাথায় আসে পুরনো রেকর্ড সংগ্রহ এবং তা বিক্রি করার কথা।
১৯৮০ সাল থেকে লেনিন সরণির ওই এক ফালি দোকানই হয়ে ওঠে ইলিয়াসের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, পুরনো দিনের হিন্দি গান, পুরানো বাংলা গানের রেকর্ডের বিচিত্র সংগ্রহ ছিল তাঁর দোকানে। ইলিয়াসের নিজের কথায়, আমার সবচেয়ে প্রিয় পরিচালক ছিলেন নওশাদ আলি।
বাড়িতে ছিল একটা মান্ধাতার আমলের রেকর্ড প্লেয়ার। ছেলেবেলা থেকে সেই রেকর্ডারে পুরনো দিনের গান শুনতে ভালবাসতেন ইলিয়াস। তাঁর সংগ্রহে ছিল গওহর জান, জানকী বাই, আবদুল করিম খান-সহ অনেকের গানের রেকর্ড। এছাড়াও বলিউডের বিভিন্ন সিনেমার গান, গজল, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রচুর রেকর্ড ছিল তাঁর কাছে।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মতো বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীরা পুরনো রেকর্ডের খোঁজে ভিড় জমাতেন লেনিন সরণিতে ইলিয়াসের দোকানে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে কেউ কেউ ইলিয়াসের দোকানে টুলের উপর বসে থাকতেও দেখেছেন একসময়।
আরও পড়ুন- ‘আমরা হেরে যাবো, জিতে যাবে সঙ্গীত’
এক সাক্ষাৎকারে কয়েক বছর আগে ইলিয়াস জানিয়েছিলেন, শুধু প্রবীণরাই নন, নবীন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরাও পুরনো রেকর্ডের খোঁজে তাঁর কাছে আসতেন। অল্প বয়স্কদের পুরানো দিনের গানের প্রতি নেশা দেখে তিনি অভিভূত হয়ে যেতেন। ইলিয়াসকে দেখেই অনেকে পুরনো রেকর্ড বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। বস্তুত তাঁর দৌলতেই লেনিন সরণিতে একের পর এক গজিয়ে উঠেছিল পুরনো রেকর্ডের দোকান। এখন অবশ্য সেসব অতীত হয়ে গিয়েছে।