ইসলামাবাদ: শিক্ষার (Education) প্রতি অবহেলার শিকার পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (PoK) পড়ুয়ারা, বিশেষত কন্যাসন্তানরা (Girl Student)। একটি প্রখ্যাত সংবাদমাধ্যম এশিয়ান লাইট ইন্টারন্যাশনালে (Asian Lite International) এই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যার ফলে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে উচ্চশিক্ষার (Higher Education) সুযোগও অনেক কম। সংবাদে প্রকাশ পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী সর্দার তনবির ইলিয়াস খান (Sardar Tanvir Ilyas Khan) সম্প্রতি স্কুলছুটের (Dropout) সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। বিশেষত একটা বয়সের পর মেয়েরা পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দৈনিক সংবাদপত্র 'সিয়াসত'এর একটি সম্পাদকীয় তুলে ধরে এশিয়ান লাইট ইন্টারন্যাশনাল লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন, বিরাট মাত্রায় কর্মহীনতা এলাকার বেকার যুবকদের জঙ্গি-পথে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে ইসলামাবাদের শাসকদের রাজনৈতিক ফায়দা হচ্ছে। সংবাদপত্রে আরও বলা হয়েছে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের শিক্ষার মান দুঃখজনকভাবে অত্যন্ত নিম্ন। কারণ এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পড়ানোর সেই যোগ্যতাই নেই। খোদ প্রধানমন্ত্রীরও সে ভরসা নেই। খানের ভাষায়, শিক্ষাব্যবস্থাকে আমরা এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছি, যেখান থেকে আমরা কিছু গ্রহণ করতে পারব। ছাত্রছাত্রীদের কিছু দিতে পারব না।
আরও পড়ুন: Himanta Biswa Sarma | ৬০০ মাদ্রাসা বন্ধ করেছি, করব সবক’টাই, কেন বললেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী?
সিয়াসতের সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এখন দোষ দিয়ে কোনও লাভ নেই। তাদের ঘাড়ে সমস্ত দায় চাপিয়ে পাশ কাটিয়ে থাকা যায় না। কারণ এতদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলত তারা তাদের স্বাধীনতা অনুযায়ী কাজ করতে পারে না, যা তাদের করা উচিত ছিল।
সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, আমাদের সমাজে শিক্ষার লক্ষ্যই হল কোনওমতে লেখাপড়া শিখে একটা সরকারি চাকরি জোগাড় করা এবং বাঁধা মাইনের চাকরি করা। তারা জাতি কিংবা সম্প্রদায়ের কথা মনে রাখে না। আর সে কারণেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালগুলোতে গবেষণার অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা বা ব্যবস্থা তাদের উপযোগী হিসেবে গড়ে ওঠেনি।
অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়েছে, এসব কারণেই পিএইচডি, এম ফিল এবং এমএ পাশ করা যুবকরা ম্যাট্রিক পাশ মন্ত্রীদের কাছে গিয়ে চাকরি ভিক্ষা করছে। চাকুরে মানুষ ও চাকরি দেওয়া মানুষের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। এখানে সবাই চাকরিপ্রার্থী। কিন্তু চাকরি দেনেওয়ালা কেউ নেই।
প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের অনেক উন্নতিসাধনের পরেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ডিগ্রি দেওয়ার কারখানায় রূপান্তরিত করা হয়েছে বলে মনে করে সেখানকার সংবাদপত্র সিয়াসত। এশিয়ান লাইট ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, পাকিস্তানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ই একই রকম তা ঠিক নয়। নিবন্ধ লেখক জানিয়েছেন, আসলে আমাদের সরকার কলেজগুলিকে সেই পরিমাণ অর্থ দেয় না, যাতে সুষ্ঠুভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া যায়।
গবেষণা কিংবা উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্রয়োজন ঢালাও অর্থ সংস্থান। কিন্তু এখানে কানাকড়ি জুটলেই মনে করা হয়, অনেক পেয়েছি। লেখকের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে জ্ঞান ও শিক্ষার পীঠস্থান হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। রাজনীতির হাড়িকাঠে শিক্ষাকে চাপানো ঠিক নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে রাজনীতি মুক্ত করার দাবি জানান তিনি। নিবন্ধের শেষে এমন কথাও বলা হয়েছে, আগামী দিনে হয়তো দেখা যাবে, মাস্টাররা ভিক্ষাপাত্র হাতে নিয়ে ভিক্ষা করার মতো তাঁদের ডিগ্রির কাগজ হাতে নিয়ে চাকরি ভিক্ষার জন্য পথে নেমেছেন। সুতরাং, এখনই সতর্ক থাকা উচিত সরকারের, এমন দিন যেন দেখতে না হয়।
শেয়ার করুন