২০ মার্চ ২০২৩, সোমবার,
1
2
3
4
5
6
7
8
9
10
11
12
K T V Clock
বেঙ্গালুরুকে টাই ব্রেকারে হারিয়ে আই এস এল চ্যাম্পিয়ন হল এটিকে মোহনবাগান
মানস চক্রবর্তী
মানস চক্রবর্তী Published By: 
  • আপডেট সময় : ১৮-০৩-২০২৩, ১১:০৪ অপরাহ্ন
আই এস এল চ্যাম্পিয়ন এটিকে মোহনবাগান।

এটিকে মোহনবাগান--২, ৪,     বেঙ্গালুরু এফ সি--২, ৩

মাণ্ডবী নদীর তীরে আবার জয়পতাকা উঠল এটিকে মোহনবাগানের। ২০০২ সালে গোয়ার মাঠ থেকেই জাতীয় লিগ জিতে ফিরেছিল মোহনবাগান। সেই দলের কোচ ছিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য। শনিবার সেই জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামেই আবার উড়ল সবুজ মেরুন পতাকা। এবার অবশ্য আই এস এল চ্যাম্পিয়ন হল ১৩৪ বছরের ক্লাব। আর তারা হারাল সেই বেঙ্গালুরু এফ সি-কে যাদের হারিয়ে তারা ২০১৫ সালের আই লিগ জিতেছিল। সেদিনের মতো এদিনও পরাজিত টিমের সৈনিক সুনীল ছেত্রী। এখন তিনি আর প্রথম একাদশের প্লেয়ার নন। কিন্তু ম্যাচের শুরুতেই শিবশক্তি নারায়ণ চোট পেয়ে বসে যাওয়ায় মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে নামতে হয় সুনীলকে। ১২০ মিনিটের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ছিলেন তিনি। সারাক্ষণ চেষ্টা করে গেছেন গোল করার, গোল করানোর। ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোল করেছেন। টাই ব্রেকারেও। কিন্তু রাতটা টাঁর বা তাঁর ক্লাবের ছিল না। ছিল মোহনবাগানের। তাই ৭৮ মিনিটে ১-২ গোলে পিছিয়ে পড়েও বাগান গোল শোধ করল। তারপর টাই ব্রেকারে মাথা ঠান্ডা রেখে গোল করলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস, লিস্টন কোলাসো, কিয়ান নাসিরি এবং মনবীর সিং। বেঙ্গালুরুর অ্যালান কোস্তা, রয় কৃষ্ণ এবং সুনীল ছেত্রী গোল করলেও ব্রুনো র‍্যামিরেসের শট আটকে দিলেন বিশাল কাইথ। আর দিয়াজ তাঁর শটটা উড়িয়ে দিলেন বারের উপর দিয়ে। এটিকে মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল। এই প্রথম। আর এটিকে এই নিয়ে চারবার।

মোহনবাগানকে চ্যাম্পিয়ন দেখবার জন্য নেহরু স্টেডিয়ামে হাজির ছিলেন এটিকে কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সবুজ মেরুন জার্সি গায়ে, মোহনবাগানের বড়, মেজো ছোট কর্তারা। ফাইনালে দলকে উৎসাহিত করার জন্য ফিনল্যান্ড থেকে উড়ে এসেছিলেন জনি কাউকো, ছিলেন আরেক মোহনবাগানী তিরি। আর অসংখ্য সবুজ মেরুন সমর্থকরা তো ছিলেনই। শনিবার রাতটা এদের সবার কাছে একটা স্বপ্ন পূরণের রাত। আই এস এল খেলবে বলে এটিকের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিল মোহনবাগান। তিন বছরের মধ্যে তাদের স্বপ্ন সফল। জাতীয় লিগ, আই লিগের পর এবার আই এস এল চ্যাম্পিয়ন। ভারতের কোনও ক্লাবের এই অত্যাশ্চার্য রেকর্ড নেই।

টিম চ্যাম্পিয়ন হলে সবারই কৃতিত্ব থাকে। তবে বাগানের স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দোর কৃতিত্ব যেন একটু বেশিই। তাঁকে দল গড়ার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিল এটিকে। এবং ফেরান্দো দেশ বিদেশ থেকে ভাল ফুটবলার বেছে এনেছিলেন। গোলে বিশাল কাইথকে তিনি এনেছেন চেন্নাই এফ সি থেকে। বিশাল ইতিমধ্যেই এবারের টূর্নামেন্টের সেরা গোলকিপার হয়ে গোল্ডেন গ্লাভস পেয়ে গেছেন। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে টাই ব্রেকারে শট বাঁচিয়ে তিনিই চ্যাম্পিয়ন করার কারিগর। রয় কৃষ্ণকে বিদায় করে দিমিত্রি পেত্রাতোসকে এনেছেন ফেরান্দো। অস্ট্রেলীয় এই মিডফিল্ডার কাম স্টাইকার কিন্তু তাঁকে ডোবাননি। সব মিলিয়ে গোটা টুর্নামেন্টে বারো গোল। ফাইনালে তিনটি পেনাল্টি থেকে তিনটি গোল। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার জনি কাউকো চোট পেয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার পর তিনি আনলেন সার্বিয়ার স্লাভকোকে। দুর্দান্ত ডিফেন্ডার। শৈষ দিকে বাগান ডিফেন্স যে দুর্দান্ত খেলতে শুরু করল তার পিছনে ওউ স্লাভকো। সন্দেশ ঝিঙ্গনের অভাব তাই চোখেই পড়েনি। সব মিলিয়ে এই আই এস এল জয় তাই জুয়ান ফেরান্দোর জয় বললে অত্যুক্তি হবে না।

ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত টাই ব্রেকারে ফয়সালা হল বলে ম্যাচের মধ্যে উত্তেজক মুহূর্ত কম ছিল বললে ভুল হবে। তবে দুর্ভাগ্য তাড়া করে বেরিয়েছে বেঙ্গালুরুকে। তিন মিনিটের মাথায় শিবশক্তি চোট পেয়ে বসে গেলেন। ম্যাচের দুটো গোলই তাদের পেনাল্টি থেকে খেতে হল। আসলে রাতটা তাদের ছিল না। ১৪ মিনিটের মধ্যে তারা গোল খেয়ে গেল। বক্সের মধ্যে একটা শূণ্যের বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে রয় কৃষ্ণ হাতে লাগালেন। পেনাল্টি থেকে গোল করলেন দিমিত্রি। সেই গোল বেঙ্গালুরু শোধ করল প্রথমার্দ্ধের সংযুক্ত সময়ের পাঁচ মিনিটে। রয় কৃষ্ণকে একটা বল ট্যাকল করতে গিয়ে শুভাশিস বসু বলে না মেরে মারলেন কৃষ্ণকে। পেনাল্টি থেকে গোল করলেন সুনীল ছেত্রী। বিরতিতে ম্যাচ ১-১। বিরতির পর দুই পক্ষই অ্যাটাকিং ফুটবল খেলল। কিন্তু গোল হল ৭৮ মিনিটে। সুরেশের কর্নার থেকে হেড করে গোল করলেন কৃষ্ণ। ম্যাচটা ওখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু ফেরান্দোর টিম তো অন্য ধাতুতে গড়া। তাই ৮৫ মিনিটে আবার পেনাল্টি পেল মোহনবাগান। এবার সদ্য মাঠে নামা কিয়ান নাসিরিকে বক্সের মধ্যে ফাউল করলেন দিয়াজ। পেনাল্টি থেকে সেই দিমিত্রির গোল। এর পর টাই ব্রেকারে ব্রুনো র‍্যামিরেসের শট বাঁচালেন বিশাল। দিয়াজ মারলেন বাইরে। গোয়ার মান্ডবী নদীর পার থেকে গঙ্গার পারে চলে এল আই এস এল। ভারতীয় ফুটবলে আবার উড়ল বাংলার পতাকা। খেলার মাঠে সব দিকেই যখন বাংলা হারছে, তখন এটিকে মোহনবাগানের এই জয় বাংলার ফুটবলকে শুধু নয়, বাংলার খেলাকেই আকাশে নিয়ে গেল। এর পর থেকে সবুজ মেরুনের সমর্থকরা যেন রিমুভ এটিকে স্লোগানটা ভুলে যান। ভুললে চলবে না এটিকে-ই তো আসল। এটিকে না থাকলে কি এটিকে মোহনবাগান হত ?

Tags :

0     0
Please login to post your views on this article.LoginRegister as a New User

শেয়ার করুন


© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.