কলকাতা: রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে (Government Hospital) অব্যবস্থা। কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি। কলকাতার ছয় সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের (Narayan Swarup Nigam)। সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থা নিয়ে স্বাস্থ্য সচিবের তোপের মুখে দিশেহারা হাসপাতাল কর্তারা। তিনি যে বিষয়গুলিতে তোপ দেগেছেন তা হল, জরুরি (Emergency) বিভাগের রোগীদের দীর্ঘক্ষণ চিকিৎসা পেতে অপেক্ষা করতে হয়। যেখানে যার ডিউটি সেখানে তাঁকে পাওয়া যায় না। একজনের ডিউটি আরেকজন করেন। চারজনের ডিউটি একজন করেন। রোজ টিভি খুললে, সংবাদপত্র খুললে হাসপাতালের সম্পর্কে খারাপ খবর।
ঘটনায় তোপের মুখে পড়লেন এসএসকেএম (SSKM) অধিকর্তা। তাঁকে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, আপনি তো আপনার ঘরে কাউকে ঢুকতেই দেন না। আপনি যে ভবনে বসেন, সেটাতো উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। আপনি কী কথা দিতে পারবেন যে আপনার ওখানে দালাল রাজ নেই? প্রশ্নের মুখে পড়েন এন আর এস (NRS) এর অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, আপনার হাসপাতাল এত অপরিষ্কার কেন? হাসপাতাল অধ্যক্ষের জবাব, বিরাট জায়গা তাই পরিষ্কার রাখতে সমস্যা। স্বাস্থ্য সচিবের পাল্টা প্রশ্ন, আপনি এন আর এসের অধ্যক্ষ হয়েছেন এটা লাইফ টাইম এচিভমেন্ট! এন আর এস এর প্রিন্সিপাল কজন হতে পারেন? আপনি যা চেয়েছেন তাই পেয়েছেন। এখন আমরা চাইছি হাসপাতালটা একটু পরিষ্কার থাকুক।
আরও পড়ুন: Kurmi Leader Arrest | অবশেষে গ্রেফতার রাজেশ মাহাতো, তোলা হলো ঝাড়গ্রাম আদালতে
তোপের মুখে পড়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজও (National Medical College)। সেখানে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, আপনাদের হাসপাতালে চারটের পরে গেলে কাউকে পাওয়া যায় না। নো আধিকারিক। নো ডাক্তার। পুরো মুক্তাঞ্চল। তোপের মুখে কলকাতা মেডিকেল কলেজ (Kolkata Medical College)। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য একটা Linac যন্ত্র চেয়েছিলেন মেডিকেলের অধ্যক্ষ। মেডিকেলের অধ্যক্ষ কে পাল্টা স্বাস্থ্য সচিবের। তিনি বলেন, আপনাকে যন্ত্র দিয়ে কী হবে? একটা Linac যন্ত্রের দাম ১৬ কোটি টাকা। আপনার কাছে একই যন্ত্র আরেকটা আছে। সেই যন্ত্র টায় আপনার ডাক্তার বাবুরা বারোটার পরে এসে কাজ শুরু করে। তিনটে সময় তাঁরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বারোটা থেকে তিনটে পর্যন্ত তারা ২৫ থেকে তিরিশটা কেস করে বাড়ি চলে যায়। একই যন্ত্র অ্যাপোলোতে আছে। ২৪ ঘন্টা ধরে মানুষ পরিষেবা পাচ্ছে। আর মেডিকেল কলেজে লাইন বেড়ে যাচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে। তাহলে আপনাকে দিয়ে আমার লাভ কী? তোপের মুখে আরজি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আরজি করের অধ্যক্ষ যাননি মিটিংয়ে। সুপার গিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য সচিবের প্রশ্নের মুখে আর জি কর। স্বাস্থ্য সচিব বলেন, আপনাদের কলেজ তো স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হয়ে গিয়েছে। আপনাদের কিছুই বলার নেই। রোজ খবরে আপনাদের কলেজের নাম শুনতে পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য সচিবের তোপে সাগর দত্ত। তিনি বলেন, আপনাদের হাসপাতাল সম্পর্কে যত কম বলা যায় তত ভালো। আপনারা মুখ খুলবেন না। না হলে আমাকে মুখ খুলতে হবে।
স্বাস্থ্য সচিব এর দাওয়াই । হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তাদের নাইট রাউন্ড চালু করতে হবে। প্রশাসনিক কর্তারা আচমকা রাতে হানা দেবেন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। বিকেলবেলা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলে চলবে না। সিনিয়র ডাক্তারদের সন্ধ্যেবেলা রাউন্ড দিতে হবে। জরুরী বিভাগে রোগীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করানো চলবে না। হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যাঁরা ডিউটি পালন করছেন না, তাদের নাম স্বাস্থ্য ভবনে পাঠাতে নির্দেশ হাসপাতাল কর্তাদের।