skip to content
Thursday, February 20, 2025
HomeScrollযাক, সুকৃতির ফল জীবনে পাওয়া যায়
Actor Mithun Chakraborty

যাক, সুকৃতির ফল জীবনে পাওয়া যায়

Follow Us :

কলকাতা: বিদেশে থাকার জন্য সরাসরি পাথুরিয়াঘাটের রাজবাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা জানানো গেল না। শারজা থেকে দু’বার ফোন করলাম। দু’বারই মিঠুন ফোন ধরার অবস্থায় নেই। লম্বা লম্বা শটে। যে মানুষটাকে গত রোববার সন্ধ্যেবেলা রাজারহাটের হোটেলে বসে একই জায়গায় দু’বার ভাঙা হাত নিয়ে সমস্যায় চুরচুর দেখেছি। যে স্বগতোক্তির মতো যন্ত্রণা ভরা মুখে বলছিল আমার জীবনটা কি কখনো স্ট্রাগল ছাড়া চলবে না ? যে দ্বিতীয় অপারেশন পরবর্তী বাথরুম যেতে হলেও সহকারী কমোডে বসিয়ে দিয়ে আসছে। সে যন্ত্রণাকাতর মুখে উত্তর কলকাতায় দিনভর শুটিং করছে ভাবাই যায় না। তা-ও কিনা আজকের দিনে —যা মিঠুন চক্রবর্তীর পেশাদার জীবনের ‘ হল অফ ফেম ডে ‘ হিসাবে বিবেচিত হওয়া উচিত।

পেছনে যাওয়া যাক। ২০১৮ সম্ভবত। আজ যার জন্মদিন সেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও আমি মুম্বইতে ঘটনাক্রমে বান্দ্রা অঞ্চলে। কথা হচ্ছিল রাতে দেখা করা যায় কিনা ? ডিনারে যাওয়া যেতে পারে। আচমকা ঠিক হল আমাদের দেখা করার চেয়ে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত দাদাস্থানীয় একজনের প্রকৃত শারীরিক অবস্থার কথা জানা। আরো সহজ করে বললে জনজীবন থেকে নিরুদ্দেশ লোকটার কী হল একটা আন্দাজ খুঁজে বার করা।
হ্যাঁ ,মিঠুন চক্রবর্তী তখন ধরাছোঁয়ার সম্পূর্ণ বাইরে। ফোন ধরেন না। লোকচক্ষুর সামনে আসেন না। ঠিক কী হয়েছে কেউ জানে না । নানা গুজব রটছে। কয়েকটা ওয়েবসাইট মোটামুটি মেরে ফেলেছে। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য সূত্রও বলছে খুব অসুস্থ। কেউ বলছে ক্যান্সার। কেউ বলছে দুরারোগ্য এমন পিঠের চোট যা স্বাভাবিক ভাবে আর কখনো দাঁড়াতে দেবে না। জীবন থাকল কিন্তু ফিল্মি জীবন শেষ। সারাক্ষণ নাকি তাঁর জন্য নার্স রাখা। কেউ আবার বলল গভীর ডিপ্রেশন। যে ভারতের সবচেয়ে বড় আয়করদাতা হিসেবে একটা সময় গর্ব অনুভব করত সে নাকি ইডি-র তল্লাশি আর অর্থনৈতিক সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এমন মানসিক গুলিবিদ্ধ যে লোকারণ্যে পুরোনো জীবন কাটানোর কারণ দেখছে না। সে বাকি দিনগুলো মানুষ থেকে সরে আড়ালে থাকবে বলে ঠিক করেছে। তাই ফোন রাখা ছেড়ে দিয়েছে। বাড়িতে কারো ফোন এলে সেটা এন্টারটেন করে না। বাণপ্রস্থে চলে গিয়েছে বাকি জীবনের জন্য।

সেক্রেটারি অনিল উপাধ্যায়কে নিশ্চয়ই নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। কারণ তিনিও টানা তিনমাস ফোন ধরেননি।
বুম্বা এবং আমার দু’জনেরই মনে হল একটা আপ্রাণ চেষ্টা করা যাক দেখা করার। গেটে সিকিউরিটি যদি ঢুকতে না দেয় তাহলে অতদূর মাধ আইল্যান্ড গিয়েও ফেরত আসতে হবে। কিন্তু যদি সিকিউরিটি টপকে যাই এই মানসিকতার মিঠুনদাও নিশ্চয়ই সামনে পড়ে গেলে তাড়িয়ে দেবে না। হ্যালোটুকু তো বলবে। সেটাই যথেষ্ট। লোকটাকে অন্তত চোখের দেখা দেখা যাবে।

গাড়িতে উঠতে যাবো এই অবস্থায় বন্ধুর ফোন এল ,মিঠুন মুম্বইতে নেই। আমেরিকায় —-ট্রিটমেন্ট করাতে। বুম্বা গম্ভীর হয়ে গেল প্রিয়জনের খারাপ খবরে মানুষের যেমন মুখচোখ হয়। বোঝা গেল পরিস্থিতি আরো জটিল। তাই নতুন করে ট্রিটমেন্টের দরকার পড়ছে। আমাদের ডিনার ক্যানসেল।

এর মাসপাঁচেকের মধ্যে আমার সল্ট লেকের পুরোনো বাড়িতে সহকারী প্রদ্যুৎকে নিয়ে মিঠুন এসে হাজির। চেহারাছবি অনেক ম্লান। স্তিমিত হাঁটাচলা। অদৃশ্য সেই তেজ। পরিচিত যৌবনকে কেউ যেন মিউট করে দিয়েছে। শুধু বললেন ,”আমায় নাকি তুই অনেক করে খুঁজছিলি। তাই নিজেই চলে এলাম। ”

তখনও কোভিড আবির্ভূত হয়নি। বাংলা ছবিতে আবার ফেরার প্রশ্ন ওঠেনি। কারণ সেই লোকচক্ষুর আড়ালে তো মিঠুন। গাড়িতে ওঠার আগে দেখলাম মাস্ক পরে নিলেন। শুনলাম অ্যাজমার সমস্যা। পিঠের সমস্যা। উপার্জন কমে গিয়েছে। হোটেল ব্যবসায় নানান অনিশ্চয়তা। সবই শুনলাম। চলে যাওয়ার পর আমি আর আমার স্ত্রী বসে আলোচনা করছিলাম যে লোকটা মানুষের জন্য এত করল। একটা সময় হর্ষবর্ধনের মতো বিলিয়ে দিল নিজের রোজগার । তার এ কী পরিণতি ? খুব খারাপই লাগল মানুষটা জীবনে এমন চমকপ্রদ উত্থানের পর সেই যেখানে শুরু করেছিল সেই স্টার্টিং পয়েন্টেই ফেরত গেল ? ভাগ্য কি মিঠুন চক্রবর্তীর জন্য এটাই লিখে রেখেছিল যে চিরপরিচিত লড়াই না দিয়ে অসহায় হারে শেষ করবে ? ঈশ্বর তা হলে আর সুকৃতির ফল কোথায় ? হাজার হাজার মানুষের কৃতজ্ঞতার কি জীবনে কোনো দাম নেই ?

সাধারণত দেখা হলে কমন আলোচনার বিষয় থাকত ২৬ জানুয়ারির সকাল। মিঠুনের নিয়ম করে আসা বার্ষিক মনখারাপের সকাল। যেদিন পদ্ম পুরস্কারের জন্য নাম ঘোষণা হবে। আর মিঠুনকে না দিয়ে বিদ্যা বালান,সইফ আলি খানদের মতো জুনিয়রদের ওটা বিলিয়ে দেওয়া হবে। প্রতিবার ঘায়ের জায়গায় নতুন করে লেগে রক্ত বার হবে। সেদিন আর ওই প্রসঙ্গটা তুলিনি। জানতাম না পেতে পেতে ছাই হয়ে গিয়েছে চাহিদাটা।

কয়েকমাসের মধ্যে রাজনীতিতে যোগদানের খবরটা টিভিতে দেখি। তাজ্জব হয়ে যাই। আক্রমণাত্মক বক্তব্য আর ফের বাংলা ছবিতে নিজেকে লড়িয়ে দেওয়া দেখে। শো শেষ হয়ে গিয়েছে জানতাম। আর কী ভুল জানতাম।

গত রোববারও হোটেলের ঘরে যাকে বিদীর্ণ হতে দেখেছি হাতের শোচনীয় অবস্থা নিয়ে। যে বারবার মাথা নিচু করে বলছিল ,কী পাপ করেছি জানি না যে হাত ভাঙার জায়গাটা আবার সাত টুকরো হয়ে গেল। তাকেই তো জনসভায় দেখছি। এই অবস্থাতেও ফিল্মের শুটিং করছে বলে শুনছি। দুটো কি আলাদা লোক ? একজন আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষ ? অন্যজন ধড়াচুড়ো পড়লেই নিজেকে দ্রুত উত্তীর্ণ করতে পারা
যোদ্ধা ?

জানি না। তবে ফিল্মের চেয়েও মিঠুনের জীবন যে অনেক বেশি উথালপাথালি এবং রংবাহার তাতে সন্দেহ নেই। প্রতিনিয়ত ওঠাপড়া। পুরো সাপলুডুর বোর্ড। এ-ই সাপ এ-ই মই। আপাতত তিনটে জাতীয় পুরস্কার ,পদ্মভূষণ আর দাদাসাহেব ফালকের পর নতুন সাপ আবির্ভূত হলেও কিছু আসে যায় না। দাদাসাহেব ফালকে হল ফিল্মের ভারতরত্ন। ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,অমিতাভ বচ্চনরা পেয়েছেন অনেক বেশি বয়েসে। মিঠুন সম্ভবত এই অভিজাত ক্লাবের কনিষ্ঠতম প্রতিনিধি। সেটাও তো বিশাল সম্মান।

কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা। ভারতীয় চলচিত্রের হল অফ ফেমে অধিষ্ঠান হয়ে গিয়েছে। শেষ দিনের শুটিংয়ের প্যাক আপের পর আর নতুন শট কী করে নেওয়া যাবে ?এতোগুলো বছরের না পাওয়া রাজনীতির আবর্ত ফিরিয়ে দিলো এমন কথা ভেসে আসছে। মনে রাখবেন এতগুলো বছর পুরস্কারের মঞ্চ থেকে দূরেও রেখেছিল ঘোলা রাজনীতি। নইলে পদ্মশ্রী না দেওয়ার জন্য পঁচিশ বছর ধরে এতরকম বাহানার দরকার হয় ?

একটা মানুষ নকশাল আমলের অন্ধকার সময় জোড়াবাগান থানার রক্তাক্ত পিছনের গলি থেকে উঠে এসে। পুলিশের তাড়ায় রাজ্য ছেড়ে। অনাহারে থেকে চরম রোমহর্ষক ভাবে মুম্বইয়ের বাজি জিতল। চারটে তারা হোটেল বানাল। তিনটে জাতীয় পুরস্কার পেল। আচমকা আবার ঢালের দিকে যেতে শুরু করল। ছেড়ে দিতে হল মুম্বই। দাক্ষিণাত্যে নতুন ঘাঁটি গড়ার পরেও একটা সময়ের পর অপমানে ক্লিন্ন মননে অদৃশ্য হয়ে গেল জনজীবন থেকে। রাজনীতিতে ফিরে সাফল্য পেল না বরং বাঙ্গালির একটা অংশের বিদ্রুপের শিকার হল। যা এর আগে জীবনে কখনো হয়নি।

আবার সেই কি না জিতে নিল পদ্মভূষণ ও দাদাসাহেব ফালকে। একটা সময় যে ঘোষিত রাষ্ট্রবিরোধী ছিল তাকেই কিনা বরণ করে নিল রাষ্ট্র। পুরস্কার পাওয়ার খবর টুইট করলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। মথুর সেন গার্ডেন লেন ঘুপচি বাড়ির আকাশটাকে বিশাল বাড়িয়ে যে তার আগেই লস অ্যাঞ্জেলেসে চার কামরার বাড়ি কিনেছে । বেঙ্গালুরুতে নতুন হোটেল গড়ছে।

এত এক জীবনে পাঁচটা মস্ত জীবন কাটানো। সিনেমাতে হয়? উপন্যাসে হয়? নাকি ভাবা হয় না দৃশ্যত অসম্ভব বলে। এখনকার মতো অবশ্য ভাবছি যাক সুকৃতির ফল এজীবনেই পাওয়া যায়। ভালো কাজের এটাও তো মোটিভেশন যে কোথাও বসে কেউ না কেউ বিচারের বাণী শুনছে। দেরি হল। অনেক দেরি হল। কিন্তু ব্যাটাচ্ছেলে গুলো আটকাতে তো পারলি না। চূড়ান্ত চাপের মুখে ,হারের মুখে এই অদম্যতাই আসলে মিঠুন। এক লাইনে এটাই তাঁর সিনেমা। এজন্যই না ফালকে !

পুনশ্চ ; গতকাল বেশি রাতে মুম্বই এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে বসে তাড়াহুড়ো করে লিখছিলাম বলে একটু কারেকশন করতে বাধ্য হলাম। মার্জনীয়।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Kolkata Police | ট্যাংরা কাণ্ডে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাফল্য কলকাতা পুলিশের, দেখুন ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Sheikh Hasina | এই প্রথম সরাসরি বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা, দেখুন Live
00:00
Video thumbnail
Sheikh Hasina | ফের সরাসরি বক্তব্য রাখছেন হাসিনা, কী বলছেন শুনুন
00:00
Video thumbnail
Budget 2025 | ২২ মিনিটে বাজেট সেশন, দেখে নিন পার্লামেন্টের আকর্ষণীয় কিছু মুহূর্ত
00:00
Video thumbnail
Kolkata Police | ট্যাংরা কাণ্ডে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাফল্য কলকাতা পুলিশের, দেখুন ভিডিও
05:10:08
Video thumbnail
Stadium Bulletin | মহাযুদ্ধ রো-কো
22:19
Video thumbnail
Budget 2025 | ২২ মিনিটে বাজেট সেশন, দেখে নিন পার্লামেন্টের আকর্ষণীয় কিছু মুহূর্ত
22:52
Video thumbnail
Delhi Chief Minister | দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান কে হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী? দেখুন ভিডিও
02:13:41
Video thumbnail
Colour Bar | রক্তবীজ ২’-এর কাস্টিংয়ে চমক!
02:23:35
Video thumbnail
Islamia Hospital | ইসলামিয়া হাসপাতালে বিরল অস্ত্রোপচার
02:16