মেদিনীপুর: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পেলেই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পূর্ণ সময়ের উপাচার্য নিয়োগের কথা জানালেন রাজ্যপাল তথা আচার্য সি ভি আনন্দ বোস। মঙ্গলবার মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন উৎসবের শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপাল জানান, পরিকাঠামো তৈরিই রয়েছে। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন। শীর্ষ আদালত সিদ্ধান্ত জানালেই স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের কাজ হবে।
এদিন সমাবর্তন উৎসবে যোগ দিতে এসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যপাল। তাঁর কনভয়ের সামনে সংগঠনের পতাকা এবং তৃণমূলের পতাকা নিয়ে তুমুল বিক্ষোভ দেখান ছাত্র পরিষদ কর্মীরা। তাতে অবশ্য সমাবর্তনে কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি। পরে রাজ্যপালের যাতায়াতের পথে দুপাশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ছাত্র পরিষদ কর্মীরা ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও দেন। সমাবর্তন উৎসবে রাজ্যপাল বলেন পড়ুয়ারাই হল জাতির ভবিষ্যৎ। তাঁদের পড়াশোনায় যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে তার দিকে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নজর দেওয়া উচিত। শিক্ষকদের ওই ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: ১০০ দিনের বকেয়া টাকার দাবিতে প্রতিবাদ সভা তৃণমূলের
রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপালয়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপাল একতরফা অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন বলে রাজ্য সরকারের অভিযোগ। শিক্ষার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই এমন প্রাক্তন আইএএস এবং আইপিএস অফিসারদেরও কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল। এখানেই শেষ নয়, কর্নাটক হাইকোর্ট অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকেও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়েছে। আবার রাজ্যপাল এই উপাচার্যদের ওঠে অনেককে সরিয়ে দিয়ে অন্য উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্য। এই মুহূর্তে রাজ্য ৩১ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও স্থায়ী উপাচার্য নেই।
রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। হাইকোর্টের একক এবং ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যপালের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়। হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার। সেখানে অবশ্য রাজ্যপাল ধাক্কা খান। শীর্ষ আদালত জানায়, রাজ্যপাল আর কোনও অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে পারবেন না। যে সমস্ত অস্থায়ী উপাচার্য কাজ চালাচ্ছেন, তাঁরা কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিধান্ত নিতে পারেন না। এমনকী ওই উপাচার্যদের আর্থিক দায়ভারও রাজ্যসরকার বহন করবে না। বিষয়টি এখনও সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন।
এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই অস্থায়ী উপাচার্যদের বেতন রাজ্য সরকার দেবে না। এ মাসের শেষের দিকে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন হচ্ছে নিউটাউনের কনভেনশন সেন্টারে। তার আগে গত শুক্রবার একটি বণিকসভার সহায়তায় রাজ্য সরকার শিক্ষা সম্মেলনের আয়োজন করে। সেই সম্মেলনে কোনও অস্থায়ী উপাচার্যকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রী তাঁদের অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দেন। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের আমন্ত্রণ জানানোর কোনও প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি না।