নয়াদিল্লি: বিলকিস বানো গণধর্ষণ কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ আসামিকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ নির্যাতিতা নিজেই। বুধবার বিলকিস বানোর আইনজীবী প্রধান বিচারপতির আদালতে আবেদন করেন। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় আবেদনটি যাতে শুনানির জন্য ওঠে, তা দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
বিলকিস বানোর ধর্ষণকারীদের দ্রুত মুক্তি হল কীভাবে? বিলকিসের ধর্ষণকারীদের মুক্তির বিষয়টিতে ছাড়পত্র দিতে কেন্দ্র মাত্র ২ সপ্তাহ সময় নিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টে গুজরাত সরকার বলেছে, ওই ব্যক্তিরা ১৪ বছর জেল খেটেছে। তাদের ব্যবহার ভালো ছিল। আর তাতেই কেন্দ্র তাদের মুক্তির বিষয়ে ছাড়পত্র দেয়।
আরও পড়ুন: Covid 19: কোভিড টিকা নিয়ে মৃত্যুর দায় কেন্দ্রের নয়, জানাল সরকার
নেপথ্যে কী ঘটেছিল?
১। বিলকিস বানো মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই মুক্তি দেয় কেন্দ্র। ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার সময় বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ ও তাঁর পরিবারকে খুন করা হয়। সিবিআইয়ের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও সজ্জন বন্দি হিসেবে তাদের মুক্তি মঞ্জুর করা হয়।
২। গুজরাত সরকার সুপ্রিম কোর্টে বলেছে, ওই লোকগুলো ১৪ বছর জেল খেটেছে। জেলে তাদের ব্যবহার ও আচার-আচরণ বেশ ভালো। তাই কেন্দ্রীয় সরকার তাদের মুক্তির বিষয়টিতে অনুমোদন দিয়েছে।
৩। গত ১৫ অগাস্ট তারা জেল থেকে মুক্তি পায়। তাদের মুক্তিকে দেশজুড়ে প্রবল সমালোচনা সত্ত্বেও প্রায় বীরের মর্যাদায় তারা জেলের প্রাচীর থেকে বেরয়। গুজরাতের জেলের বাইরে তাদের গলায় মালা পরিয়ে, মিষ্টি খাইয়ে বরণ করা হয়।
৪। সিবিআই এবং বিশেষ বিচারকের আপত্তি অগ্রাহ্য করে কেন্দ্র ও গুজরাত তাদের মুক্তি দেয়।
৫। বিশেষ বিচারক এও বলেছিলেন যে, এটা একটা জঘণ্য অপরাধ। নির্যাতিতা বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের বলেই এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এমনকী শিশুদেরও রেয়াত করা হয়নি।
৬। তথ্যে দেখা যাচ্ছে, অপরাধীরা মুক্তির আগেও ১০০০ দিন প্যারোলে ছাড়া পেয়েছিল। প্যারোলে ছাড়া পেয়েও তারা বিলকিস বানোকে উত্ত্যক্ত করে বলে তিনি অভিযোগ জানিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, এবার মুক্তির পরও বিলকিসের নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাও জানায়নি গুজরাত পুলিশ।
৭। এরপরেই সুপ্রিম কোর্টে বন্দিমুক্তির নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা হয়। গুজরাত সরকারকে শীর্ষ আদালত বিলকিস মামলার পূর্ণাঙ্গ তথ্য জমা দিতে বলেছে।
কী ঘটেছিল?
সাবরমতী এক্সপ্রেসে হামলায় ৫৯ জন করসেবকের মৃত্যুর পরই গোটা গুজরাত জুড়ে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় বিলকিস বানোর বাড়িতে চড়াও হয় কয়েকজন। গর্ভবতী বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয় এবং তাঁর পরিবারের মোট ১৪ জনকে খুন করা হয়। বিলকিসের ৩ বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে খুন করে তারা। প্রাণে বাঁচতে পরিবারের অন্যরা জমিতে গিয়ে লুকিয়ে ছিলেন।
এই মামলায় ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টে বিলকিস দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ পান। ৫০ লক্ষ টাকা ছাড়াও চাকরি এবং বাড়ি দেওয়া হয় তাঁকে। মুম্বইয়ের বিশেষ আদালতে অপরাধীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়, পরে হাইকোর্টেও সেই সাজা বহাল থাকে।