কলকাতা: মেডিক্যালে ভর্তি নিয়ে দুর্নীতির মামলা ঘিরে কলকাতা হাইকোর্টে দুই বিচারপতির মধ্যে নজিরবিহীন দ্বন্দ্ব। বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি নির্দেশ বৃহস্পতিবার খারিজ করে দেয় বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। তারপরই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ভরা এজলাসে অভিযোগ করেন, বিচারপতি সেন স্পষ্টতই একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন। কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তিনি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, সুপ্রিম কোর্টের উচির বিচারপতি সেনের সমস্ত নির্দেশ খারিজ করে দেওয়া। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন বিচারপতি সেনের বিরুদ্ধে ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হবে না, কেন সু্প্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও দুবছর ধরে তাঁর বদলি হচ্ছে না। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, কে তাঁকে বাঁচাচ্ছে, আমি দেশের প্রধান বিচারপতিকে এটা দেখার জন্য অনুরোধ করব। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য শুনে এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান বিচারপতি সেন। সূত্র্রের খবর. তিনি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর দেখা মেলেনি।
এজলাসে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তের সঙ্গেও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। তিনি এজিকে বলেন, আপনি কাকে ধরে আবার অ্যাডভোকেট জেনারেল হয়েছেন, সেটা আমি জানি। আপনার প্রভুদের কাছে গিয়ে যা বলার বলুন। পাল্টা এজি তাঁকে বলেন, আপনিই বা কী লুকোচ্ছেন? আপনার এজলাসের লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ কেন? সাহস থাকলে বলুন, আপনাকে বিজেপির তরফে ভোটে টিকিট দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। বিচারপতি বলেন, না, হয়নি। আমি নির্দেশে লিখে দিলাম, এরকম কিছু হয়নি।
এখানেই শেষ নয়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এজলাসে বসেই আরও অভিযোগ করেন, বড়দিনের ছুটির আগে বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে নিজের চেম্বারে ডেকে বিচারপতি সেন রাজনৈতিক নেতার মতো কিছু নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: মাধ্যমিক মামলায় রাজ্যের সিদ্ধান্তের উপর হস্তক্ষেপ করল না হাইকোর্ট
বিচারপতি সিনহাকে নাকি বিচারপতি সেন বলেছিলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা রাজনৈতিক ভবিষ্যত আছে। তাঁকে বিরক্ত করা যাবে না। এছাড়া তিনি বিচারপতি সিনহার এজলাসে শুনানির লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ করতে বলেছিলেন। প্রাথমিকের দুটি মামলাও খারিজ করার কথা জানিয়েছিলেন বিচারপতি সেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বিচারপতি সিনহা বিষয়টি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে জানিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি তা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে জানান। আমি বিচারপতি সিনহার কাছ থেকেই এই সব জানতে পেরেছি।
এই নজিরবিহীন ঘটনার সূত্রপাত মেডিক্যালে ভর্তি সংক্রান্ত দু্র্নীতি মামলাকে কেন্দ্র করে। জাল জাতিগত শংসাপত্র দেখিয়ে অনেকের ভর্তির অভিযোগ ওঠে। মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। বুধবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তা নিয়ে সিবিআইকে এফআইআর করার নির্দেশ জারি করেন। তার এক ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্য সরকার ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যায়। বিচারপতি সেনের বেঞ্চ মৌখিক নির্দেশে এফআইআর খারিজের কথা জানান। পরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় লিখিত নির্দেশ চান। তা রাজ্য সরকার দেখাতে পারেনি। রাতে ডিভিশন বেঞ্চ লিখিত নির্দেশ দেয়।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ এফআইআর খারিজের নির্দেশ দেয়। সেই রায়কেই বেআইনি বলে জানান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে নিয়মমাফিক আবেদন করেনি। একক বেঞ্চের লিখিত নির্দেশ এবং মেমো অফ অ্যাপিল ছাড়া ডিভিশন বেঞ্চ কীভাবে এই পদক্ষেপ করল, জানতে চান তিনি। রাজ্যের জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্ত বহাল রাখার রায় ঘোষণা করেন। সেই রায়ের কপি তিনি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেন।