Tuesday, July 8, 2025
HomeআজকেAajke | দশ আঙুলে দশ আংটি, যখন যেটা কাজে লাগে

Aajke | দশ আঙুলে দশ আংটি, যখন যেটা কাজে লাগে

Follow Us :

গ্রহ রত্ন আংটি তো হেলাফেলা করার বিষয় নয়, আগমার্কা বাম বুদ্ধিজীবী অভিনেতা পরিচালকেরাও এই রত্নপাথরের বিজ্ঞাপনের মুখ হয়ে থাকেন। সে বিজ্ঞাপনে বলা হয় যে ঠিকঠাক পাথর পরলে, সঠিক গ্রহ বিচার করে পরলে হাজারো বিপত্তি, শারীরিক অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তো বহু হবু অভিনেতা পরিচালক সে বিজ্ঞাপন দেখার পর থেকে সঠিক গ্রহ বিচার করিয়েই চলেছেন, নীলা, পলা, গোমেদ, পোখরাজ, পাথরের পর পাথর পরেই চলেছেন। কিন্তু এখনও ভাগ্যদেবতা দরজায় এসে টোকা দেননি। তাঁদের দু’ একজন হতাশ হয়ে দূর ছাই বলে পাথর ছুড়ে ফেলে দিতেই পারেন, সেই মুহূর্তেই আরও ১৫ জন ওই গ্রহদশা কাটাতে দুই রতির পোখরাজের দরদাম করছেন। এমনটাই হয়, আশায় কেবল চাষা বাঁচে না, আশায় বাঁচে মানুষ। টুক করে দিন পাল্টে যাবে, ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসার মতোই ভাগ্যদেবতা এসে হাজির হবেন দোরগোড়ায় এমনটাই মানুষের আশা। তেমন আশা নিয়েই পার্থদা, হ্যাঁ আমাদের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও দশ আঙুলে দশ আংটি পরেছিলেন। সেসব আংটি খসতে খসতে এখনও কিছু অবশিষ্ট আছে, তা গোটা তিন চার তো বটেই, আজ সেই আংটিই বিষয় আজকে।

হ্যাঁ, উনি দশ আঙুলে দশ আংটি পরেছিলেন এককালে, কিন্তু সে আংটি যে খুব একটা কাজ করেনি, বা বলা ভালো সেসব পাথর যে কার্যকরী নয় তা তো সবাই জানেন, অন্তত উনি তো জানেন। এবং এই আংটির জন্যই আজ খানিক হেনস্তাও হতে হল ওনাকে। এই নেতামন্ত্রীদের হাতের দিকে খেয়াল করুন, দেখবে গন্ডায় গন্ডায় আংটি, কোনওটা শান্তি আর স্বস্তির জন্য, কোনওটা শ্রীবৃদ্ধির জন্য, মানে দেশের রাজ্যের শ্রী বৃদ্ধি হোক না হোক, ওনার শ্রীবৃদ্ধির জন্য আংটি পরা দরকার, উনি পরেছেন। কোনওটায় নীলা, কোনওটায় হিরে, কোথাও দামি পোখরাজ। আর সেই মন্ত্রীদের এক বিরাট অংশ আপাতত আরও কার্যকরী পাথর কেনার চেষ্টা করছেন আর জানতে চাইছেন, সিবিআই কখন আসতে পারে? কোন পাথর পরলে ফাঁড়া টলে যাবে। মানে সিবিআই জানলেও ধরবে না, ধরতে পারবে না। খালি কি আংটি পাথর? জাগ্রত দেবতাদের থান থেকে ডাইরেক্ট পাঠানো জবাফুল থেকে লাল ধাগা পৌঁছে যাচ্ছে এ রাজ্যের তৃণমূল দলের বড় মেজ সেজ নেতাদের বাড়িতে। মা মাগো কেবল সিবিআই ইডিকে সামলাও,  ৬-৮-২০-১০০ ভরি সোনার চোখ গড়ে দেব। আর বাড়ির পাশের পুকুরে ফেলা মোবাইল যেন না উদ্ধার হয় বাবা, তোমার মন্দির গড়ে দেব। দেবদ্বিজে ভক্তি বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুন: Aajke | ও তোতা পাখি রে…  

বাজারে খবর, দু’ জন জ্যোতিষীর নাম এখন মন্ত্রীসান্ত্রীদের ঘরে ঘরে, এঁদের কাছ থেকেই শান্তি স্বস্ত্যয়ন করিয়েই নাকি জেলে যেতে হয়নি প্রাক্তন মেয়রকে। তাঁদের ভিজিট এখন আকাশ ছুঁয়েছে। জেলে গিয়েও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে আংটি, কবজিতে ধাগা, জেলের বাইরে নেতামন্ত্রীদের দুঃখ, দুহাতে কেন মাত্র ১০টা আঙুল, নিদেনপক্ষে ২০টা হলে সামাল দেওয়া যেত। সিবিআই ইডি এ রাজ্যে পাথরের ব্যবসায় জোয়ার এনেছে বললেও কম বলা হয়। খবর আছে, জ্যোতিষীরা নটা দশটায় চেম্বার বন্ধ করে যাচ্ছেন কচি থেকে পাকা নেতাদের বাড়িতে, গোপনে মদ ছাড়াতে নয়, গোপনে অ্যাডভাইস দিতে। ইডি আসলে কবে আসবে? আদৌ সিবিআই আসবে কি না? মূলত এই দুই প্রশ্নের উত্তর নিয়েই উত্তাল এ সময়। ওদিকে সিবিআই বা ইডি বা ইনকাম ট্যাক্স, সেসব এজেন্সি থেকে যাঁরা আসছেন, তাদের হাতেও পাথর। কেন? কারণ আজ যে রাজা কাল সে ফকির। আজ মোদি–শাহের নির্দেশে বিরোধী নেতাদের জেরা তো করছেন, কাল যদি চাকা ঘোরে? কাজেই সেই দুষ্ট গ্রহকে সামাল দিতে তাদের হাতেও তাবিজ কবজ ধাগা। আসলে দুর্নীতি সে যত বড়ই হোক না কেন, যাঁরা দুর্নীতি তে যুক্ত, তাঁদের ধরা পড়ার ভয় সব সময়েই থাকে। থাকে বলেই দশ হাতে আগাম দশটা আংটি, গলায় রুদ্রাক্ষ, হাতে রক্ষাকবচ। কিন্তু যে হারে লাইন দিয়ে নেতারা জেলে ঢুকছেন, তাতে এটা অন্তত পরিষ্কার যে ওই পাথর আংটি ধাগা কবচে জেলযাত্রা আটকানো যাচ্ছে না। আচ্ছা এ নিয়ে কী বলছেন মানুষজন?

কবীর বলেছিলেন, পাথর পুজো করেই যদি ভাগ্য ফেরানো যেত, তাহলে আমি তো পাহাড় পুজো করতাম। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতের আংটি ওনার জেলযাত্রা আটকাতে পারেনি, কামাক্ষ্যা থেকে আনা পুজোর প্রসাদ খাওয়ার পরেও শান্তনু জেলে, হাতে লাল ধাগা পরে রক্ষেকালীর পুজো করার পরেও অয়ন শীলকে সিবিআই জেলেই পুরেছে। আসল সত্য হল যেমন কর্ম করবে তেমন ফল পেতেই হবে, আকণ্ঠ দুর্নীতির মধ্যে ডুবে থাকা মানুষ আঙুলে আংটি পরে পার পেয়ে যাবে? তা হবে না, তাকে ভয়ে ভয়ে দিন কাটাতে হবে, এই ধরা পড়ে গেলাম এই ধরা পড়ে গেলাম ভেবে রাতে ঘুম আসবে না, কাজেই বদহজম হবে আর যদি কোনও দিন সত্যিই দুয়ারে সিবিআই হাজির হয়, তাহলে কাঁদতে হবে, হাউ হাউ করে কাঁদতে হবে, বুকে হাত রেখে বলতে হবে, আমার শরীর ভালো নেই।

RELATED ARTICLES

Most Popular


Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39