মল্লিকবাজার: কালীপুজো ও তার প্রাচীন ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের নাম। মন্দির বাজার ব্লকের অন্তর্গত দক্ষিণ বিষ্ণুপুর মহাশ্মশানের প্রাচীন মন্দির খুবই জাগ্রত মন্দির। এখনও এখানে ১০৮ টি অপঘাতে মৃত নরমুন্ডু দিয়ে তন্ত্রমতে পূজিত হয় মা করুণাময়ী কালী।দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মন্দিরবাজার ব্লকের অন্তর্গত বিষ্ণুপুর মহা শ্মশানে আদিগঙ্গার পাড়ে অবস্থিত এই অতি প্রাচীন মন্দির। এই শ্মশানে আগে ভিড় জমাতেন তান্ত্রিক ও সাধকরা। শবসাধনায় বসতেন অনেকেই। স্থানীয়দের বিশ্বাস শব সাধনায় আজও রাতের অন্ধকারে জেগে ওঠে শ্মশান। ঘোরাফেরা করে মৃতদের আত্মা।
আগে বছরে একবারই কালীপুজোর দিন পুজো হতো। কিন্তু তারপর এই মন্দিরের প্রথম সেবায়েত সাধক মনিলাল চক্রবর্তীকে মা স্বপ্নাদেস দেন শুধুমাত্র বছরে একটি দিনের পুজোতে মা সন্তুষ্ট নন। মাকে রোজই পুজো দিতে হবে। আর তাই আজ থেকে প্রায় ১০৯ বছর আগে বিষ্ণুপুর শ্মশানে আদি গঙ্গার পাড়ে এই মন্দিরে নিত্য পুজো হয়ে আসছে। এই পুজোর সূচনা করেছিলেন সাধক মনিলাল চক্রবর্তী। বর্তমানে তাঁরই উত্তরসুরী সাধক শ্যামল চক্রবর্তী এই মন্দিরের দায়িত্ব সামলান।
কালীপুজোর রাতে ১০৮ টি নর মুন্ডু দিয়ে তন্ত্রমতে পুজো হয় এখানে। সন্ধ্যার পর শ্মশানে আগত প্রথম শবকে নিয়ে চলে শবসাধনা।
প্রতিবছর মত আজও রাতে মদ, কাঁচা মাংস ও ছোলা দিয়ে পুজো করা হয় ডাকিনী, যোগিনীকে। দেওয়া হয় শিয়ালভোগ। গভীর রাতে সেবাইত মেতে ওঠেন শ্মশান জাগানোর খেলায়। জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত এই শ্মশানে আজও প্রবেশ করলে গা ছমছম করে ওঠে সকলের।
আরও পড়ন: ফের বঙ্গে নিম্নচাপ ফের বঙ্গে নিম্নচাপ কাঁটা
এই মন্দিরে দেবীমুর্তির পিছনে সাজানো আছে ১০৮ টি নরমুন্ড। মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত শ্যামল চক্রবর্তী জানান তান্ত্রিক মতে পুজো হয় এখানে। আগে ছিল টালির ঘর, ছিল গভীর জঙ্গল। বর্তমানে জঙ্গল কিছুটা কমেছে, ফলে এখন লোকসমাগম বেশি হচ্ছে। এই মন্দির খুবই জাগ্রত মন্দির। মন্দিরে বিরাজমান মা করুণাময়ী কালী। প্রতিবছর কালী পূজার রাতে এই শ্মশান মন্দিরে সারা রাত ধরে তন্ত্র মতে চলা কালীপুজো চাক্ষুষ করতে ভিড় জমায় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হাজার হাজার দর্শণার্থীরা। সকাল থেকেই এই মন্দিরে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটতে শুরু করেছে। তাই কালীপুজোর দিন শেষ মুহূর্তে সেবাইত ও চক্রবর্তী পরিবারের ব্যস্ততা তুঙ্গে। ইতিমধ্যে মন্দিরের দালানে পড়েছে নতুন রং। ঝাড় পোছ করে সাজিয়ে ফেলা হয়েছে নরমুন্ডু গুলি। নতুন সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে মন্দিরে থাকা করুণাময়ী কালিকে।