নয়াদিল্লি: কাশ্মীর ফাইলস, কেরালা স্টোরি, দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের পর এবার আজমির-৯২। ফের বিতর্কের ঘূর্ণিঝড় সিনেমাকে কেন্দ্র করে। মুসলিম সংগঠনগুলি বলিউডের এই ছবি নিষিদ্ধ করার দাবি তোলায় আশঙ্কার কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে। রাজস্থানের আজমিরে ১৯৯২ সালে অসংখ্য গণধর্ষণ এবং কয়েকশো স্কুলছাত্রীকে ব্ল্যাকমেল করার ঘটনাকে অবলম্বন করে এই ছবি নির্মিত হয়েছে। আর তা নিয়েই আপত্তি মুসলিম সংগঠনের।
জমিয়ত উলেমায়ে হিন্দ চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করার দাবি তুলে বলেছে, এই ছবি সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করবে এবং হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে। জমিয়ত নেতা মৌলানা মেহমুদ মাদানি বলেন, খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তি আজমিরি হলেন হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রতীক। দেশের শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের দূত বলে তাঁকে মান্য করা হয়। ইদানীং দেখা যাচ্ছে, ধর্মের ভিত্তিতে সমাজে বিভাজন আনার একটা চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, অপরাধমূলক কাজকর্মকে বিশেষ একটি ধর্মের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার জন্য চলচ্চিত্র এবং সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহারের প্রবণতা হালে আমদানি করা হয়েছে। এতে আমাদের ভ্রাতৃত্বের ঐতিহ্যকে আঘাতপ্রাপ্ত হবে।
আরও পড়ুন: Summer Vacation in West Bengal | গরমের ছুটি নিয়ে মামলা খারিজ, রাজ্যের সিদ্ধান্তই বহাল
অল ইন্ডিয়া মুসলিম জামাতের প্রেসিডেন্ট মৌলানা মুফতি শাহবুদ্দিন রাজভি বারেলভি এই ছবিকে চক্রান্ত বলে ব্যাখ্যা করেছেন। দেশে ঘৃণা ছড়াবে এই চলচ্চিত্র, একথা জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেবে এবং বিভাজন সৃষ্টি করবে এই ছবির কাহিনি। যতটুকু শুনেছি তাতে আজমির-৯২-এ দরগাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ছবিতে দেখানো হয়েছে, ওখানে ভুল শিক্ষা দেওয়া হয়। আমরা এর জোরাল বিরোধিতা করছি।
উল্লেখ্য, আগামী ১৪ জুলাই মুক্তি পেতে চলেছে আজমির-৯২। ছবিতে অভিনয় করেছেন করণ বর্মা, সুমিত সিং, সায়াজি শিন্ডে, মনোজ জোশি, শালিনী কাপুর সাগর, ব্রিজেন্দ্র কলা, আকাশ দাহিয়া, রাজেশ শর্মা, ইশান মিশ্র। ছবিটি পরিচালনা করেছেন পুষ্পেন্দ্র সিং।
১৯৯২ সালে কী ঘটেছিল আজমিরে?
সে বছর স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রায়শই খবর প্রকাশ হতে থাকে যে একটি গ্যাং স্কুল ও কলেজ ছাত্রীদের যৌন হেনস্তা করে চলেছে। কয়েকটি গণধর্ষণের ঘটনাও ঘটে। অভিযুক্তদের নাম ছিল ফারুক এবং নাফিস চিস্তি। যারা খাদিম পরিবারের সদস্য। একটি খামারবাড়িতে নিয়ে গিয়ে মেয়েদের যৌন হেনস্তা করা হত বলে খবরে জানা যায়। পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে খবরের কাগজে লেখা হয়, মেয়েদের অশ্লীল ছবি তুলে তাদের অন্য বান্ধবীদের সেখানে নিয়ে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হত। এই ছবি দেখিয়েই দিনের পর দিন তাদের ব্যবহার করা হত বলেও অভিযোগ।
সেই সময় রাজস্থান পুলিশের ডেপুটি ডিজিপি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ডিজিপি ওমেন্দ্র ভরদ্বাজ। তিনি বলেন, অভিযুক্তরা সামাজিক এবং আর্থিকভাবে প্রভাবশালী শ্রেণির ছিল। সে কারণে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলাও মেয়েদের পক্ষে বিপজ্জনক ছিল। সংবাদপত্রে একের পর এক খবর বেরিয়ে আসার পর ব্যাপক গন্ডগোল শুরু আজমির শহর জুড়ে। এই তাণ্ডবের জেরে কয়েকদিনের জন্য আজমির স্তব্ধ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে এই ঘটনায় অভিযুক্ত সকলেই ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের এবং নির্যাতিতারা ছিল হিন্দু। সে কারণেই এই ছবি নিয়ে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক।