সন্দেশখালি: বৃহস্পতিবারও ক্ষোভের আগুন জ্বলছে সন্দেশখালিতে। তৃণমূলের তিন জেলা পরিষদ সদস্য শেখ শাহজাহান, উত্তম সর্দার এবং শিবু হাজরার গ্রেফতারির দাবিতে এদিনও মহিলারা পথে নামেন। তাঁদের অভিযোগ, গ্রামের গরিব মানুষের জমি জোর করে ছিনিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। অনেক মাছ ব্যবসায়ীর মাথায় হাত পড়েছে ওই তৃণমূল নেতাদের জন্য। এক মহিলা বলেন, অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। এবার আমাদের মুখ খোলার সময় এসেছে।
এদিন সকালে লাঠি, বাঁশ, হাতা, খুন্তি হাতে নিয়ে বিভিন্ন এলাকার মহিলারা রাস্তায় নামেন। তাঁরা সন্দেশখালি থানা ঘেরাও করতে চান। পুলিশ বাধা দিলে মহিলারা রাস্তায় বসে পড়েন। অনেক মহিলাকে পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে তর্ক করতে দেখা যায়। অপর এক মহিলা বলেন, শাহজাহানরা গরিব আদিবাসীদের জমি বছরের পর বছর ধরে দখল করে রেখেছেন। জমি ফেরত চাইতে গেলেই মারধর করা হয়েছে। মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে। এবার আমরা হেস্তনেস্ত চাই।বিক্ষোভকারী মহিলাদের অনেকেই দাবি করেন, তাঁরাও তৃণমূল করেন। একাধিক মহিলা বলেন, অনেকদিন চুপ করে থেকেছি। এবার বাধ্য হয়ে পথে নেমেছি।
আরও পড়ুন: ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু ২ স্কুল ছাত্রের
বুধবার সন্দেশখালিতে রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রতিবাদে তৃণমূল মিছিল করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেই মিছিলে প্রচুর বহিরাগত ছিল। অনেকের হাতে বোমা, দা, রড, বাঁশ ছিল। সেই মিছিল থেকে এলাকার বাসিন্দাদের গালিগালাজ করা হয়। তৃণমূলের পাল্টা মিছিল করে বিজেপি। দুই মিছিলে অংশ নেওয়া লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তারপরই বিভিন্ন গ্রাম থেকে নারী, পুরুষ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ হাতে ঝাঁটা, দা, কোদাল, বাঁশ, রড নিয়ে পিলপিল করে বেরিয়ে আসেন। তাঁরা তৃণমূল কর্মীদের তাড়া করেন। তাড়া খেয়ে কোনও মতে তৃণমূলের লোকজন পালাতে থাকে। ফেরিঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের লঞ্চে উঠে পড়ে অনেকে। ভয়ে কেউ কেউ রায়মঙ্গল নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাইক বাহিনী নিয়ে গ্রামে গ্রামে হামলার পরিকল্পনা ছকেছিল তৃণমূল। সেই খবর কানে যেতেই গ্রামের লোকজন বেরিয়ে পড়েন। সন্ধ্যায় শিবু হাজরার একাধিক আলাঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। জেলা পরিষদ সদস্য উত্তম সর্দারকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। তাঁকে মারধর করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। হেনস্থা করা হয় উত্তমের স্ত্রীকেও। তাঁদের বাড়িতে ভাংচুর চলে। পুলিশ কোনও মতে উত্তমকে উদ্ধার করে। তাঁকে প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও বাধা দেয় জনতা। পরে কয়েক জন তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে ভাংচুর চালানো হয়। রাতে জনতা সন্দেশখালি থানা ঘেরাও করে রাখে।
তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি এবং সিপিএম পূর্বপরিকল্পনামতো হামলা চালিয়েছে। একাধিক বাড়ি ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। এদিনও কোথাও কোথাও আগুন জ্বলতে দেখা গিয়েছে। স্থানীয় সিপিএম এবং বিজেপি নেতাদের পাল্টা দাবি, গতকাল জনরোষ আছড়ে পড়েছিল। গরিব মানুষ অনেক অত্যাচার সহ্য করেছে। শাহজাহানের ভয়ে তারা মুখ খুলতে পারেনি। এবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে মানুষের। এদিন এলাকায় সকাল থেকে পুলিশি টহল চলছে।
দেখুন আরও অন্যান্য খবর: