কেকেআর-আরসিবি ম্যাচ সবে শেষ হয়েছে। ঘড়ির কাটায় রাত ১১টা পেরিয়েছে। ইডেন থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরোচ্ছে নাইট সমর্থকেরা। মুখে কেকেআর-এর নাম নিয়ে নানান নক্সা এবং পরনে সোনালি-বেগুনি জার্সি। মুখে সেই চেনা ‘কেকেআর’, ‘কেকেআর’ স্লোগান। ১৪৩৮ দিন আগের ছবি যেন আরও একবার ফিরে এসেছে স্বর্গোদ্যানে। সাদা টি-শার্টে ইডেনের মূল ফটক থেকে বেরিয়ে এলেন জুহি চাওলা। সবসময় মুখে লেগে আছে মিস্টি হাসি। কেকেআর-এর এই দারুন জয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পাল্টা বলেন, ‘আমায় প্রশ্ন করছেন কেন? আপনারা বলুন আপনাদের কেমন লাগছে…এই জয় আপনাদের সবার। ম্যাচের শুরুতে ব্যাকফুটে থেকেও দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে ম্যাচ জেতা সত্যিই অবিশ্বাস্য।‘
বৃহস্পতিবারের ইডেনের নায়ক শার্দূল ঠাকুরের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জুহি চাওলা বলেন, ‘শুধু একজনের কথা বললে ভুল হবে। টিম গেমের মন্ত্রে জিতেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। সুনীল নারিন, বরুণ চক্রবর্তী, সুযশ শর্মা- প্রত্যেকে ভালো পারফর্ম করেছে। এবারে যেটা দেখাতে হবে, সেটা হচ্ছে ধারাবাহিকতা। করব, লড়ব, জিতব রে…’
জুহি চাওলা যখন একথাগুলি বলছিলেন, তখন ইডেনে অন্য মেজাজে ধরা দিলেন ‘ডর’, ‘ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি’-তে জুহির কো-স্টার। বাদশাহি মেজাজে তখন আচ্ছন্ন ইডেনের সবুজ ঘাস থেকে ফ্লাডলাইট থেকে বিচ্ছুরিত আলোর প্রতিটি আলোকবিন্দু। বিজিত ক্যাপ্টেনকে আলিঙ্গন, সুপারহিট ‘পাঠান’ মুভির ডান্স স্টেপ শেখাতে ব্যস্ত তখন তিনি। মনে হচ্ছে যেন ‘বিরাট মঞ্চে পাঠান শো’-চলছে। জয়ের আনন্দের সেলিব্রেশনের তীব্রতা যে কতটা প্রকট হতে পারে সেটা বুঝতে গেলে মধ্যরাতের টিম হোটেলের পার্টিতে আসতে হবে। শুধু ‘পাঠান’ মুভির গান নয়, সমান তালে চলছে‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’, ‘আজ কি রাত হোনা হ্যায় কিয়া’, ‘যারা দিল কো থাম লো’। শাহরুখের পায়ের সঙ্গে তাল মেলালেন শার্দূল-রিঙ্কু-নীতীশরা। নাইট ক্রিকেটারদের বাজিগর বললেন, ‘নিজের উপর বিশ্বাস রাখো, এভাবেই জিততে থাকো, আমি প্রতিবার এসে তোমাদের জন্য গলা ফাটাবো।’
জিতলে সব ঠিক আছে। হসপিটালিটি বক্স থেকে শাহরুখের টোল পড়া হাসি আছে, দূর থেকে গ্যালারির উদ্দেশে ছোঁড়া ফ্লাইং কিস আছে, ম্যাচের সেরা ক্রিকেটারদের দামী মোবাইল সেট গিফট দেওয়া আছে, নাইট পার্টির আলো-আঁধারিতে শাহরুখের সঙ্গে ডান্স স্টেপ মেলানোর সুযোগও থাকছে। মনে হবে এই পৃথিবীতে সবকিছুই মধুর। কিন্তু মুদ্রার এপিঠ দেখলে শুধু হয় না, ওপিঠটাও দেখতে হয়-
১। প্রতি ম্যাচে শার্দূল ‘লর্ড’ অবতারে আসবেন না
২। প্রতিদিন আরসিবি-র মতো বাকি দলগুলিরও ব্যাটিং অর্ডার ৯৬-সেমিফাইনালের স্মৃতি ফিরিয়ে আনবে না
৩। ৮৯/৫-এই অবস্থা থেকে প্রতি ম্যাচে ‘বাজিগর’ হয়ে ওঠা সম্ভব নয় টিম কেকেআর-এর
৪। ‘রাসেল-মাসেল’ শো এর আশা প্রতিদিন করলে নিজেকেই বোকা হতে হবে
হারলে সমীকরণ বদলাতেও সময় লাগবে না একমুহূর্ত। ২০০৮ সালে কেকেআর-আরসিবি আইপিএল উদ্বোধনী ম্যাচের পরও বেঙ্গালোরে এরকম পার্টি হয়। অথচ সেই বছরই আইপিএল মরসুম শেষে কিং খান-কে বলতে শোনা যায়, ‘আমি হারতে ঘৃণা করি। আমরা সবদিক থেকে একনম্বরে ছিলাম, টিম জার্সি হোক কিংবা থিম সং। শুধু মাঠে ক্রিকেটটাই ঠিকঠাক খেলতে পারলাম না।’ সেইসময়ে দাঁড়িয়ে যাকে উদ্দেশ্য করে শাহরুখের এই মন্তব্য সেটা বোঝার জন্য কোনও পুরস্কারমূল্য থাকছে না। ২০১০ আইপিএলে সেই ক্রিকেটার সবথেকে সফল নাইট ব্যাটার ছিলেন। রাজস্থানের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচের পর শাহরুখের উদ্দেশে তাঁর বাড়ি থেকে ‘স্পেশাল ডিশ’-ও যায়। কিন্তু ২০১১-আইপিএল নিলামে সেই ক্রিকেটারকে ধরে রাখার বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখায়নি কেকেআর কর্তৃপক্ষ। এটাই কঠোর কর্পোরেট জগতের রূপ। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট কাউকে রেয়াত করে না। ভারতীয় ক্রিকেটের যত বড় নামই হোক না কেন?
কেকেআর-আরসিবি ম্যাচ চলাকালীন ইডেন গার্ডেনসের প্রেস বক্সে রিপোর্টারদের মধ্যে একটা জোক্স ঘোরাফেরা করছিল- মনদীপ সিং কি শাহরুখের আত্মীয়? কী কারণে তিনি কেকেআর দলে বারবার সুযোগ পান? এই ‘সিং’ যে ‘কিং’ নন সেটা ভেঙ্কি মাইসোর এন্ড কোম্পানির তো অজানা থাকার কথা নয়।
বৃহস্পতিবার রাতে শাহরুখ কন্যা সুহানার সঙ্গে আসা তাঁর বান্ধবীর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমত ভাইরাল। মুহূর্তে প্রশ্ন ওঠে কে এই বান্ধবী? কি তাঁর পরিচয়? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিনি সঞ্জয় কাপুড়ের কন্যা শানায়া কাপুড়। স্পেশাল হসপিট্যালিটি বক্স থেকে সুহানার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কেকেআর-এর জন্য চিয়ার করতে দেখা যায় সঞ্জয় কন্যাকে।
ম্যাচ শেষে একজনকে খোঁজার চেষ্টা করলাম।কিন্তু চোখে পড়ল না তাঁকে। সিএবি-এর উপর রাগ দেখিয়ে তিনি কি ইডেনমুখী হননি নাকি এসে একটু মুখ দেখিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গিয়েছেন…