নয়াদিল্লি: কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দুই বিচারপতির নজিরবিহীন সংঘাত নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হল। আগামিকাল শনিবার ছুটির দিন হলেও ওই বেঞ্চ তা নিয়ে শুনানি করবে। সকাল সাড়ে দশটা থেকে শুনানি শুরু হবে। সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, ওই বেঞ্চে থাকবেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বি আর গাভাই, বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোস। সেখানে আরও বলা হয়েছে, গত ২৪ এবং ২৫ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টে যে সব ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়েই বেঞ্চ পদক্ষেপ করবে। শনিবার সারা দেশের নজর থাকবে সুপ্রিম কোর্টের দিকে। প্রবীণ আইনজীবীরা বলছেন, স্মরণকালের মধ্যে কোনও আদালতে এই ধরনের নজিরবিহীন সংঘাত হয়নি। শুধু তাই নয়, দুই প্রবীণ বিচারপতির সংঘাতে শীর্ষ আদালতের পদক্ষেপও কার্যত নজিরবিহীন বলেই দাবি করছে আইনি মহল।
মেডিক্যালে ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র দিয়ে অনেকে ভর্তি হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগে বলা হয়েছে, অনেক মুখোপাধ্যায়, বন্দ্যোপাধ্যায় পদবিধারী সংরক্ষিত আসনে ভর্তি হয়ে গিয়েছেন ভুয়ো শংসাপত্র দাখিল করে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় গত বুধবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন এবং তাদের এফআইআর করার নির্দেশ দেন। তার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই রাজ্য সরকার বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়। বেঞ্চ এফআইআর খারিজ করার নির্দেশ দেয়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের প্রতিলিপি প্রকাশিত হওয়ার আগেই রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তের মৌখিক আবেদন শুনে বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ তড়িঘড়ি সিবিআই তদন্তে স্থগিতাদেশ দেয়।
বুধবার দ্বিতীয়ার্ধে মূল মামলাকারীর আইনজীবী স্থগিতাদেশের কথা জানান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে। কিন্তু আইনজীবী ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের প্রতিলিপি দেখাতে পারেননি বিচারপতিকে। তিনি তাঁর পুরনো নির্দেশেই অনড় থাকেন। যদিও বৃহস্পতিবার ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইয়ের এফআইআর খারিজ করে দেয়। এর পরেই ওইদিন কলকাতা হাইকোর্টে শুরু হয় দুই বিচারপতির মধ্যে নাটকীয় সংঘাত। সেই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন এজি কিশোর দত্ত-ও।
আরও পড়ুন: নীতিশ কুমার সময়ই দিচ্ছেন না, অভিযোগ আরজেডির
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, নির্দেশের প্রতিলিপি কিংবা মামলার আর্জিপত্র ছাড়াই ডিভিশন বেঞ্চ কেমন করে স্থগিতাদেশ দিল। তিনি ওই স্থগিতাদেশ অবৈধ বলে জানিয়ে দেন। তিনি সিবিআই তদন্ত চালিয়ে যেতে বলেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এজলাসে বসেই বলেন, বিচারপতি সেন রাজনৈতিক ব্যক্তির মতো আচরণ করছেন। তাঁর আরও মন্তব্য, সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হলেই কয়েক জনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে কেন। এখানেই থামেননি তিনি। বিচারপতি বলেন, হাইকোর্টের অপর বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে নিজের চেম্বারে ডেকে বিচারপতি সেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিরক্ত করা যাবে না বলে জানিয়েছিলেন। তিনি তাঁর এজলাস থেকে প্রাথমিকের দুটি মামলা খারিজ করার কথাও বলেন। বিচারপতি সিনহার এজলাসে সওয়াল জবাবের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করতে হবে বলেও বিচারপতি সেন মন্তব্য করেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, তিনি এসব কথা বিচারপতি সিনহার কাছ থেকেই শুনেছেন। তিনি বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকেও জানিয়েছেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আরও বলেন, দুবছর আগে বিচারপতি সেনের বদলির নির্দেশ এলেও আজ পর্যন্ত তা কার্যকর করা হয়নি। তিনি বিচারপতি সেনের ইম্পিচমেন্টেরও দাবি জানান। তাঁর রায়ে সমস্ত বিষয় উল্লেখ করে হাইকোর্ট এবং শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন।
আইনি মহল বলছে, বিষয়টির গুরুত্ব বুঝেই শীর্ষ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করল শুক্রবার। এর আগে বেশ কিছু শিক্ষা মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিভিন্ন নির্দেশের উপর ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। তখনও তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন। হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানতে চেয়েছিলেন, কেন এমনটা হচ্ছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি সিনহার এজলাস থেকে শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত মামলা সরাতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন সম্প্রতি। শীর্য আদালত সেই মামলা ফিরিয়ে দিয়েছে।
আরও খবর দেখুন