কলকাতা: তৃণমূলের শনিবারের বৈঠকে শুধু জাতীয় কর্মসমিতির (TMC Working Committee) ২০ জন সদস্যের নাম চূড়ান্ত হল। কোনও পদাধিকারীর নাম এদিন ঘোষণা করা হয়নি। বৈঠক শেষে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chaterjee) জানান, এই নামের তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পার্থ মমতা-সহ মোট ১৬ জনের নাম (TMC National Executive list) ঘোষণা করেন। তার কিছু পরই ফের সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বাকি ৪ জনের নাম জানান। কেন এই দুই দফায় সাংবাদিক বৈঠক, তৃণমূলের তরফে তার কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি।
এদিনের বৈঠকে দলের সাংগঠনিক স্তরে সমস্ত পদই অবলুপ্ত হল বলে ঘোষণা করেন দলনেত্রী। এর অর্থ, যেমন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) আর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রইলেন না, তেমনি পার্থও তৃণমূলের মহাসচিব থাকলেন না। একইভাবে সুব্রত বক্সীও আর দলের চেয়ারম্যান নয়। শুধু মমতাই (Mamata Banerjee) দলের সর্বভারতীয় সভানেত্রী। পার্থ জানান, পরে সমস্ত কমিটি ও পদাধিকারীর নাম ঘোষণা করে হবে।
গত কদিন ধরে তৃণমূলের অন্দরে ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি নিয়ে যে তুমুল বিতর্ক চলছে, তা নিয়ে শনিবারের বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়নি বলে লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান। ওই ইস্যুতে এদিনের বৈঠকে ঝড় উঠতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে চর্চা চলছিল। কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রের আচরণ নিয়েও দলের অন্দরে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তাঁকে শোকজ করা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। মদন প্রসঙ্গেও শনিবার কোনও কথা ওঠেনি। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নিয়ে বিতর্ক ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই শনিবার ওই প্রসঙ্গে আলোচনা হল না? ফিরহাদ হাকিম এবং পার্থ সাংবাদিকদের এসব প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন। ফিরহাদ বলেন, আমাকে দলের পক্ষ থেকে যেটুকু বলতে বলা হয়েছে, তার বাইরে কোনও কথা বলব না। আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নিয়ে যে টানাপড়েন চলছে, তা নিয়েও কোনও আলেচনা হয়নি। এ ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেবেন নেত্রী নিজেই। যেমন ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারীও মমতাই।
আরও পড়ুন: Hijab controversy: হিজাবে হাত দিলে দু’হাত কেটে দেব, হুঁশিয়ারি সমাজবাদী পার্টি নেত্রী রুবিনার
নতুন কর্মসমিতিতে মমতা ছাড়াও রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, অমিত মিত্র, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সুখেন্দুশেখর রায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অসীমা পাত্র, মলয় ঘটক, গৌতম দেব, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, অনুব্রত মণ্ডল, বুলুচিক বরাইক এবং রাজেশ ত্রিপাঠী, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, যশবন্ত সিং, অরূপ বিশ্বাস এবং ফিরহাদ হাকিমের। নয়া জাতীয় কর্মসমিতিতে বীরভূমের অনুব্রত, হুগলির অসীমা পাত্র, উত্তরবঙ্গের বুলুচিক, অমিত মিত্রের অন্তর্ভুক্তি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। পার্থর সাংবাদিক বৈঠকের অল্প সময় পর সাংবাদিকদের সামনে আবার আসেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি কর্মসমিতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা ঘোষণা করেন। ১৬ জনের সঙ্গে বাকি চারজনের নাম জানান ফিরহাদ।
সম্প্রতি গোয়ায় সংগঠন গড়েছে তৃণমূল। গোয়ার ক্ষমতা দখলেও মরিয়া তৃণমূল। তবে জাতীয় কর্মসমিতিতে গোয়ার কোনও প্রতিনিধির নাম নেই। অথচ উত্তরপ্রদেশে রাজেশ ত্রিপাঠীকে কর্মসমিতিতে রাখা হয়েছে। অসুস্থতার কারণে গত বিধানসভা ভোটে অমিত মিত্রকে প্রার্থী করা হয়নি। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা করেছেন। অশক্ত শরীরে অমিত মিত্র কীভাবে কর্মসমিতির কাজ সামলাবেন, তা নিয়ে এদিন সন্ধ্যা থেকেই তৃণমূলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে।