বহরমপুর: শতাব্দীপ্রাচীন কাশিমবাজারের রাজবাড়ির (Kasimbazar Rajbari) দুর্গাপুজো (Durga Pujo 2023) এবারেও জাঁকজমকের সঙ্গে শুরু হল। মহালয়ার (Mahalaya 2023) পরের দিন প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে গেল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। ৬ জন পুরোহিত মিলে রবিবার সকাল থেকে মায়ের পুজো শুরু করেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে ওই পুজোয় উপস্থিত হয়েছেন রায় পরিবারের সদস্যরা।
মারাঠা দস্যুদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভগবানগোলার ফিরোজপুর থেকে বহরমপুরের কাশিমবাজারে চলে আসেন অযোধ্যারাম রায়। মুর্শিদাবাদে আলিবর্দি খাঁয়ের রাজত্বকালে ব্রিটিশের সঙ্গে সখ্যতা বাড়িয়ে রেশম ব্যাবসা করেন অয্যোধ্যারামের পুত্র দীনবন্ধু। ব্রিটিশ সরকারের কাছে ‘রায়’ উপাধি পেয়ে ১৭৪০ সালে কাশিমবাজারে রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন দীনবন্ধু বাবু। মূলত তিনিই জাকজমক ভাবে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। সেদিন থেকেই কাশিমবাজারের রাজবাড়িতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে বলে জানান রাজবাড়ির দশম বংশধর পল্লব রায়।
আরও পড়ুন: ২২৯ বছর ধরে দেবীর একই কাঠামোয় পুজো হয় হুগলির পাঠক পরিবারে
অন্যদিকে রায় পরিবারের এক সদস্য প্রশান্ত রায় বলেন, একসময় পুজোর জৌলুস থাকলেও কালক্রমে সেই জৌলুস কমে যায়। রাজবাড়ির ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে কাজের সন্ধানে কলকাতা চলে যান পরিবারের সদস্যরা। বছর কয়েক পরে সেই রাজবাড়ি পুরোনো চেহারায় ফিরে আসে বর্তমান সদস্যদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। তবে এখন পরিবেশ অনেক পাল্টে গিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগে যেভাবে হাতি, ঘোড়া, বন্দুক, বরকন্দাজ নিয়ে শোভাযাত্রা হত সেটা এখন আর নেই। সেসময় বিদ্যুৎ ছিল না। কালক্রমে বিদ্দ্যুৎ এসেছে। এখনও বিদেশের মেম সাহেবরা পূুজো দেখতে, রাজবাড়ি দেখতে কাশিমবাজার আসেন। রাজবাড়ির পুরোনো ঐতিহ্য দেখতে পর্যটকেরা এসে ভিড় করেন। তৃপ্ত হন রাজবাড়ি দেখে। রাজবাড়ির ঐতিহ্য দেখে। অনেকে আবার রাজবাড়ির হোটেল ভাড়া করেও পুজোর কদিন থেকে আনন্দ উপভোগ করেন।
রায় পরিবারের আরেক সদস্য সুপ্রিয়া রায় বলেন, দূর-দুরান্তের মানুষও ছুটে আসেন রাজবাড়ির পুজো দেখতে। তিনটি পুরান সংযুক্ত করে রাজবাড়ির নিজস্ব পুঁথি দেখে শুরু হয় দুর্গাপুজোর আরাধনা। মহালয়ার পর থেকেই শুরু হয় মাতৃ বন্দনা। প্রথা মেনে অপরাজিতা পুজো হলেও নীলকন্ঠ পাখি আর ছাড়া হয় না। বলির পরিবর্তে মাছের ভোগ নিবেদন করা হয়। পুজোর সময় সারাদিন খোলা থাকে রাজবাড়ির মন্দির। যে বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে জমিদারীর বিভিন্ন নিদর্শন ফুটে উঠেছে। সেই রাজবাড়িতে প্রতিবছর কলকাতা ছেড়ে রায় পরিবারের সকলে চলে আসেন কাশিমবাজারের রাজবাড়িতে।
দেখুন আরও অন্য খবর: