Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeCurrent Newsকাস্ট সেন্সাসের দাবি একটা প্যান ইন্ডিয়া আন্দোলনের জন্ম দিতে পারে, যে ভয়টা...

কাস্ট সেন্সাসের দাবি একটা প্যান ইন্ডিয়া আন্দোলনের জন্ম দিতে পারে, যে ভয়টা বিজেপি পাচ্ছে

Follow Us :

বিজেপি ঘোর বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও ভারতে কি এবার কিছু রাজ্যে জন গণনার সঙ্গে ফের জাতি গণনাও হবে? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি এক সভায় বলেছেন দেশকে জাতি ও বর্ণের ভিত্তিতে বিভাজনের চেষ্টা হচ্ছে। এ থেকে স্পষ্ট মোদী চান না জাতি গণনা হোক। কিন্তু তার পরেও দেখা গেল বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিহারের বিজেপি এবং আরজেডি নেতাদের পাশে নিয়ে ঘোষণা করলেন, বিহারে জাতি গণনা হবে। খুব শিগগিরি মন্ত্রিসভায় এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছে নীতীশ। এটা ঠিক বিহারে নীতীশের চাপে জোট সরকার রক্ষার তাগিদে এই বিষয়ে মত দিতে কিছুটা বাধ্য হয়েছে বিহারের বিজেপি। শেষ পর্যন্ত এই জল কোন দিকে গড়ায় তা অবশ্য সময়ই বলবে।

প্রায় তিন দশক আগের কথা। ১৯৯০-এর ৭ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী ভি পি সিং যেদিন মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট গ্রহণ করলেন, যেখানে ওবিসিদের জন্য ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে, সে সময় আরএসএসের মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’-এ লেখা হয়েছিল শূদ্র-বিপ্লব ঠেকাতে কী ভাবে এর বিরোধিতা করা উচিত। লেখা হয়েছিল, ‘AN URGENT NEED TO BUILD UP MORAL AND SPIRITUAL FORCES TO COUNTER ANY FALLOUT FROM AN EXPECTED SHUDRA REVOLUTION’।

যদিও এটাও ঠিক, পরবর্তীকালে অতীব দক্ষতা এবং সোস্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে দলিত এবং ওবিসি ভোটের আনেকটাই বিজেপি দখল করতে সক্ষম হয়েছে।‘লোকনীতি-সিএসডিএস (সেন্টার ফর স্টাডি অফ ডেভলাপমেন্ট সোসাইটিজ)’-এর তথ্য বলছে আদবাণী-বাজপেয়ীর সময়ে বিজেপি দলিত-ওবিসি ভোট যতটা পেত, আজ তা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে ২২ শতাংশ ওবিসি ভোটার বিজেপির পক্ষে ভোট দেয়। ২০১৯-এ সেটা বেড়ে হয়েছে ৪৪ শতাংশ। এর সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে আঞ্চলিক দলিত নেতাদের একটা বড়ো অংশ হয় বিজেপির সমর্থক হয়েছেন না হলে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। পাশাপাশি  পিছিয়ে পড়ছে জাত-ভিত্তিক আঞ্চলিক দলগুলি। বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রে অবশ্য এখনও একটা বিপরীত ছবি আছে। এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় ৭৭ জন সদস্যের মধ্যে ৪৭ জন হয় ওবিসি, নয়তো দলিত বা আদিবাসী। সংসদে১২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করিয়েছে বিজেপি। যে বিলে বলা হয়েছে, রাজ্যগুলি নিজের মতো করে ওবিসি তালিকা তৈরি করতে পারবে। মেডিক্যালে ওবিসিদের জন্য বিশেষ সংরক্ষণ ঘোষণা করেছে মোদী সরকার।  খড়গপুর আইআইটির প্রাক্তন অধ্যাপক, ইউএপিএ-তে বর্তমানে কারাবন্দি দলিত বুদ্ধিজীবী আনন্দ টেলটুমড়ে তাঁর সম্পাদিত বই ‘হিন্দুত্ব অ্যান্ড দলিত, পার্সপেক্টিভ ফর আন্ডারস্ট্যান্ডিং কমিউনাল প্র্যাক্সিস’-এর ভূমিকায় লিখেছেন, ১৯৮১, ১৯৮৫ সালে গুজরাটে হিন্দুত্ববাদীদের সমর্থনে উচ্চবর্ণের সংরক্ষণ বিরোধী হিংসা অনেক সময়ই দলিত-মুসলিম বিরোধী হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছিল। ওই দু’টি হিংসার ঘটনায় ২৭৫ জনের মৃত্যুর পরেও দেখা গেল, ২০০২ সালে গুজরাটের ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় দলিতরাই ছিল হিন্দুত্বাদীদের ‘ফুট সোলজার’। দলিত লেখক বোজা থারকম তাঁর ‘কাস্ট অ্যান্ড ক্লাস’ বইয়ে লিখেছেন, মার্কস ১৯৫৩ সালের ১৮ অগস্ট নিউইয়র্ক ডেইলি ট্রিবিউনে লিখেছিলেন, ব্রিটিশ রেল ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে ভারতে যে আধুনিক শিল্প গড়ে উঠবে তা ভারতের অগ্রগতির প্রতিবন্ধক বর্ণ ব্যবস্থাকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। তারপর ১৬৮ বছর কেটে গিয়েছে। রেল ব্যবস্থার জাল সারা দেশে ছেয়ে গিয়েছে। কিন্তু মার্কসের ধারণা মতো বর্ণ বা কাস্ট ব্যবস্থা নিশ্চহ্ন তো দূরের কথা, আগের থেকেও আরও বহু গুণ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। কাস্ট সেনসাস বা জাতি গণনার যে দাবি উঠেছে তা সেই কথাই প্রমাণ করে।

ভারতে ‘কাস্ট’ এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি। ভারত ভবিষ্যতে কোন পথে এগোবে, সম্ভবত তার অনেকটাই নির্ধারণ করে দেবে এই শক্তি। আরএসএসের নেতারা মনুস্মৃতিকেই হিন্দুদের সংবিধান মনে করে এসেছেন এতদিন। এম এস গোলওয়ালকর তাঁর ‘বাঞ্চ অফ থটস’, ‘উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিফাইনড’, এই দু”টি বইয়ে বর্ণ ব্যবস্থার জয়গান গেয়েছেন। তিনি লিখেছেন, গীতা শিখিয়েছে যাকে যে কাজ দেওয়া হয়েছে, তার সেটা মন প্রাণ দিয়ে করে যাওয়াটাই হল ঈশ্বরের পূজা। এই কথার মধ্যে দিয়েই তিনি পরিষ্কার সমর্থন করেছেন বর্ণ ব্যবস্থাকে। যে বর্ণ ব্যবস্থায় অপমানের জ্বালায় বাবা সাহেব আম্বেদকার পাঁচ লক্ষ শূদ্রকে নিয়ে  বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন ১৯৫৬ সালে।

আজ কিন্তু ক্ষমতার রাজনীতির স্বার্থে, কৌশলগত কারণে, আরএসএস তাদের এই মনুবাদী অবস্থান থেকে সরে এসেছে অনেকটাই। তারা এটা স্পষ্টই বুঝেছে যে ভারতের মতো দেশে ক্ষমতায় থাকতে গেলে দলিত এবং ওবিসি  ভোট বাদ দিয়ে হবে না। তাই সংসদে যখন ১২৭তম সংবিধান সংশোধন বিল আনা হল, ঠিক তার আগের দিন আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে এক বিবৃতিতে বললেন, ‘সংরক্ষণ ব্যবস্থা ঐতিহাসিক ভাবেই জরুরি ভারতের মতো দেশের জন্য। এই ব্যবস্থা ততদিনই চলবে যতদিন সমাজের একাংশ নিজেদের অসাম্যের শিকার ভাববেন।

রাজনীতিতে দলিত-ওবিসি জনতার গুরুত্ব বাড়ছে। যে ভাবেই হোক, এই প্রক্রিয়া যে শেষ বিচারে শূদ্র জাগরণের পক্ষে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু রাজনীতিতে প্রভাব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কি অর্থনীতিতেও তার ছাপ পড়ছে? অর্থনীতিতেও কি তারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন? তা কিন্তু হচ্ছে না। এই মুহূর্তের কোনও তথ্য হাতে না থাকলেও, আশুতোষ ভার্সনে, লক্ষ্মী আইয়ার’ তরুণ খান্না ২০১৩ সালে তাঁদের একটি গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন, রাজনীতিতে এগিয়ে গেলেও মালিকানা, চাকরি পাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দলিতরা অনেকটাই পিছিয়ে আছে উচ্চ বর্ণের তুলনায়।

আরও পড়ুন: India-Pakistan: ভারত ও পাকিস্তান দু’ভাই দু’পথে হাঁটছে

কেন ‘কাস্ট সেনসাস’-এর দাবি? এই দাবির প্রধান কারণ, রাজনীতিতে অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে শত শত বছরের অবহেলিত, অপমানিত এক বিরাট জনসংখ্যা জেনে নিতে আগ্রহী দেশে তাদের অবস্থানটা ঠিক কোথায়!  ‘কাস্ট সেসাস’ হলে অনেকের মতে ওবিসি, যেটা ২৭ শতাংশ বলা হচ্ছে এখন, সেই সংখ্যাটা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তখন তারা রাষ্ট্রের কাছে আনুপাতিক হারে তাদের প্রাপ্য দাবি করতে পারে। তখন সংরক্ষণের চেহারাটাই বদলে যাবে। আর যে দল সেই দাবি মেটানোর সিদ্ধান্ত নেবে, সেই দলকে উচ্চ বর্ণের কোপের মুখে পড়তে হবে। মাত্র ১২-১৩ শতাংশ ব্রাহ্মণ ভোটের স্বার্থে লখিমপুর খেড়ির ঘটনায় ব্রাহ্মণ নেতার ছেলেকে গ্রেফতার করতে যোগী সরকারের যেভাবে হাঁটু কাপছিল, তাতে বোঝাই যায়, স্থিতাবস্থা, মানে যেটা এখন চলছে, সেটাকে বিজেপি একেবারেই বদলাতে চায় না। এ ব্যাপারে কংগ্রেস, বামপন্থী সহ বেশ কিছু বড়ো দলই আসলে বিজেপির পাশে। অন্যদিকে নীতীশ কুমার, তেজস্বী যাদব, অখিলেশ, মায়াবতী, এম কে স্ট্যালিনের মতো নেতারা বলছেন, ‘কাস্ট সেনসাস’ জরুরি। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভাবছেন, কেন্দ্রীয় সরকার না করলে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের রাজ্যে এই কাজটা করবেন। নীতীশ সেই কাজেই উদ্যোগী হয়েছেন। আজ বোঝা না গেলেও ভবিষ্যতে কাস্ট সেন্সাসের দাবি একটা প্যান ইন্ডিয়া আন্দোলনের জন্ম দিতে পারে। যে ভয়টা বিজেপি পাচ্ছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular