নয়াদিল্লি: নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের বিতর্কের জল এবার গড়াল সুপ্রিম কোর্টে। বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু যাতে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করেন, সে বিষয়ে লোকসভার সচিবালয়কে নির্দেশ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, আগামী ২৮ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করার কথা। যা নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই বিতর্কের জলঘোলা হচ্ছে রাজধানীর রাজনৈতিক মহলে। ২০টি বিরোধী দল ইতিমধ্যেই উদ্বোধন অনুষ্ঠান বয়কট করার জানিয়ে দিয়েছে।
আইনজীবী সিআর জয়া সুকিন আবেদনে বলেছেন, গত ১৮ মে লোকসভার সচিবালয়ের পক্ষ থেকে জারি করা বিবৃতি এবং নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে লোকসভার সাধারণ সচিবের আমন্ত্রিতদের তালিকা সংবিধান অমান্যকারী। রাষ্ট্রপতি হলেন দেশের প্রথম নাগরিক। সংসদের প্রধান। দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ভারতের রাষ্ট্রপতির নামে নেওয়া হয়। সংসদের দুই কক্ষ এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন আইনসভার শীর্ষ ক্ষমতার অধিকারী। রাষ্ট্রপতির হাতেই সংসদ ডাকা ও মুলতুবির ভার দিয়েছে সংবিধান। সংবিধানের ৭৯ নম্বর ধারা উল্লেখ করে আবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি সংসদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেহেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠান থেকে তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় না। আবেদনকারীর মতে, এঠা লোকসভার সচিবালয়ের অসদাচরণের লক্ষণ। সে কারণে সর্বোচ্চ আদালতের কাছে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে নতুন ভবনের উদ্বোধন করানোর নির্দেশ জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: PM Modi in Sydney | ও মন্ত্রীমশাই…সবই ফাঁক…চিচিং ফাঁক
একদিকে মোদি সরকারের ৯ বছর পূর্তি, অন্যদিকে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন-বিতর্ক নিয়ে লোকসভা ভোটের বছরখানেক আগেই রাজনৈতিক উত্তাপ চড়ল রাজধানী দিল্লিতে। ‘অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ,’ ‘গণতন্ত্রের উপর আঘাত’ এইসব চোখা চোখা শব্দচয়ন করে বুধবার দেশের ১৯টি বিরোধী দল এক যৌথ বিবৃতিতে সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করার কথা ঘোষণা করে।
এত তোড়জোড়-জাঁকজমক সত্ত্বেও উদ্বোধনে ঘরের লোক ছাড়া বাইরের শিবিরের কেউ থাকবেন না বলে এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস সহ ১৯টি বিরোধী দল। কংগ্রেসের নেতৃত্বে এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সংবিধানের মূল সুর ও ধ্যানধারণা ভঙ্গ হয়েছে। সরকার গণতন্ত্রকে ভয় দেখাচ্ছে। কংগ্রেস ছাড়া যারা এই যৌথ বিবৃতিতে সই করেছে তারা হল, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে, জনতা দল ইউনাইটেড, আম আদমি পার্টি, এনসিপি, শিবসেনা উদ্ধব গোষ্ঠী, সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, মুসলিম লিগ, জেএমএম, ন্যাশনাল কনফারেন্স, কেরালা কংগ্রেস, এমডিএমকে, ভিসিকে এবং রাষ্ট্রীয় লোকদল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান তাই শুধু নয়, তিনিই সংসদের অধিবেশন ডাকেন, ভাষণ দেন। সংক্ষেপে বলা যায়, রাষ্ট্রপতি ছাড়া সংসদ অচল। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে না ডেকে রাষ্ট্রপতির অমর্যাদা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এহেন অগণতান্ত্রিক কাজ নতুন কিছু নয়। বিরোধী দলের সদস্যদের সংসদপদ খারিজ হয়েছে। দেশের মানুষের হয়ে কথা বলতে গেলেই তাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে।