Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeদেশSwatantrya Veer Savarkar Teaser | ক্ষুদিরাম, সুভাষচন্দ্র, ভগৎ সিং সাভারকরের আদর্শে অনুপ্রাণিত...

Swatantrya Veer Savarkar Teaser | ক্ষুদিরাম, সুভাষচন্দ্র, ভগৎ সিং সাভারকরের আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন, ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ

Follow Us :

মুম্বই ও নয়াদিল্লি: কাশ্মীর ফাইলস, কেরালা স্টোরি, দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে গেরুয়া-গোয়েবলস বাহিনীর নবতম সংযোজন ‘স্বতন্ত্র বীর সাভারকর’। বিনায়ক দামোদর সাভারকর বা বীর সাভারকর নামে জনপ্রিয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠকের জীবনের উপর নির্ভর করে তৈরি ছবির প্রথম টিজারেই বিতর্কের ঝড় উঠেছে। অভিযোগ, আদ্যন্ত মিথ্যাচারের বেসাতিতে ভরা এর কাহিনি। ইতিহাসকে বিকৃত করে, তথ্য গোপন করে এবং সত্যকে গোর দিয়ে তৈরি এই ছবি। ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের এই টিজারে অভিনেতা-পরিচালক রণদীপ হুডা যা তুলে ধরেছেন, তার সত্যতা ও প্রামাণ্য নথি নিয়ে দাবানলের মতো ছড়াচ্ছে বিতর্কের আগুন।

ছবিতে দাবিতে করা হয়েছে, গান্ধীজি খুব একটা খারাপ ছিলেন না। কিন্তু, তিনি যদি তাঁর অহিংসার ভাবনায় একগুঁয়েমি না করতেন, তাহলে আরও ৩৫ বছর আগে ভারত স্বাধীন হয়ে যেত। ছবিতে বীর সাভারকরকে ইংরেজদের চোখে দেশের সবথেকে আতঙ্কবাদী বিপ্লবী বলে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সাভারকর ভগৎ সিং, সুভাষচন্দ্র বসু এবং ক্ষুদিরাম বসুকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন বলেও দাবি পরিচালকের। হুডা এও দাবি করেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম চলেছে ৯০ বছর ধরে। আর এই যুদ্ধে গুটিকয় মানুষ লড়াই করেছেন। আর বাকিরা ছিলেন ক্ষমতার ভিখারি।

আরও পড়ুন: Mamata Banerjee | ১লক্ষ ২৫ হাজার নতুন সরকারি কর্মী নিয়োগের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

সাভারকরের জন্মদিন গত রবিবারে টিজার মুক্তি পাওয়ার পরপরই সামাজিক মাধ্যমের দেওয়ালে হুডাকে বাপবাপান্ত করা শুরু হয়ে গিয়েছে। বাঙালি অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও নিন্দায় মুখর হয়েছেন। স্পষ্ট ভাষায় তিনি লিখেছেন, সস্তা প্রচার ও টাকা রোজগারের জন্য এভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মর্যাদা হানি করা উচিত হয়নি। ক্ষুদিরাম বসুকে অনুপ্রেরণার দেওয়ার ব্যাপারে একজন লিখেছেন, ১৮ বছরের ক্ষুদিরাম শহীদ হয়েছেন ১৯০৮ সালে। আর সাভারকর লন্ডনে ছিলেন ১৯০৬ সাল থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বারংবার সাভারকর এবং হিন্দু মহাসভার নিন্দা করেছেন। ভগৎ সিংয়ের ফাঁসি নিয়ে সাভারকর একটি বাক্যও খরচ করেননি। যেখানে নেহরু এবং সুভাষচন্দ্র তাঁদের সর্বশক্তি দিয়ে তা আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন।

ইতিহাস জানে, ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির পরের বছর অর্থাৎ ১৯০৯ সালে সাভারকরের লেখা বই প্রকাশ হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ক্ষুদিরাম ছিলেন অনুশীলন সমিতির সদস্য। যা ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই সময় সাভারকরের বয়স মাত্র ১৮। এবং তাঁকে কেউ চিনতও না। অনুশীলন সমিতির সঙ্গে সাভারকরের কোনও সম্পর্ক ছিল, এমন কোনও ঐতিহাসিক তথ্যপ্রমাণও নেই। অন্যদিকে, ভগৎ সিংকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন কর্তার সিং সারাভা এবং সর্দার অজিত সিং। এক টুইট-গ্রহের এক নাগরিক লিখেছেন, দয়া করে এভাবে ভুয়ো খবর ছড়াবেন না। ভগৎ সিং বোমা ছুড়ে অ্যাসেম্বলির ভিতর বসেছিলেন। পালিয়ে যাননি। আর সাভারকর ব্রিটিশদের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করেছিলেন।

একজন লিখেছেন, রণদীপভাই আপনি কয়েকজনের নাম লিখতে ভুলে গিয়েছেন। লাল-বাল-পাল, চন্দ্রশেখর আজাদ, মঙ্গল পাণ্ডে, ঝাঁসির রানি, মার্টিন লুথার কিং, নেলসন ম্যান্ডেলা…সকলেই বীর সাভারকরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। বিশেষত গডসে। টাকা রোজগারের জন্য আপনি ইতিহাসকে বিকৃত করছেন কেন? প্রশ্ন তুলেছেন আরও একজন। আপনি কি পাগল হয়ে গিয়েছেন, দয়াভিক্ষা চাওয়া, পেনশন গ্রহণ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ধরিয়ে দেওয়া কাজ ছিল সাভারকরের। একটু পড়াশোনা করুন প্লিজ!

শুধু তাই নয়, ইতিহাস বলে নেতাজি যখন কংগ্রেস সভাপতি হয়েছিলেন তখন কংগ্রেস সদস্যদের একসঙ্গে হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লিগের সদস্য হওয়াও নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। ১৯৪৬ সাল। রয়্যাল নাভাল মিউটিনি বা রাজ নৌসেনা আন্দোলন। দলে দলে ভারতীয় নাবিকরা কর্মবিরতি করে বম্বে এবং করাচি বন্দরের দিকে জড়ো হচ্ছেন। তাঁদের হাতে তখন ছিল নেতাজি এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের পতাকা। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সেই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু আরএসএস কিংবা সাভারকর সে সময় ছিলেন নীরব দর্শক।

অধ্যাপক চমনলালের বই থেকে জানা যায়, আন্দামানের সেলুলার জেলে ভগৎ সিংয়ের অনুগামীদের ডাকে অনশনে অংশ নিতেও অস্বীকার করেন সাভারকর। এমনকী ১৯৩৭ সালে ঐতিহাসিক ৩৬ দিনের অনশনেও অংশ নিতে অস্বীকার করেন সাভারকর। এই অনশনকে সমর্থন জানান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সুভাষ বসুও। আরও একজন বাঙালি ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী। যিনি সেলুলার জেলের ৪০ বছরের বাসিন্দা ছিলেন। ভগৎ সিংয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন মহাবীর সিং। যিনি জীবনের সোনালি দিনগুলি দেশমাতৃকার পায়ে সঁপে দিয়েছেন আন্দামানের অন্ধকূপে। কিন্তু, হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির যূপকাষ্ঠে আন্দামান বিমানবন্দরের নাম তাঁদের কারও নামে হয়নি। হয়েছে সাভারকরের নামে। 

এই ছবিতে সাভারকরের নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন স্বয়ং রণদীপ হুডা। সুভাষ বসু প্রসঙ্গে হুডার দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন তাঁর বংশধর চন্দ্রকুমার বসু। তিনি বলেন, স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন সুভাষ বসু। তিনিই ছিলেন নেতাজির আধ্যাত্মিক গুরু। এছাড়া দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক গুরু। সাভারকরের আদর্শের বিরোধী ছিলেন নেতাজি একথা জানিয়ে চন্দ্র বসুর দাবি, উনি সাভারকরের পথের বিরোধী ছিলেন। নেতাজি ধর্মনিরপেক্ষ এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। চন্দ্র বসু আরও বলেন, আন্দামানের সেলুলার জেলে যাওয়ার আগে সাভারকর একরকম মানুষ ছিলেন আর সেখানে যাওয়ার পর তিনি পুরোপুরি বদলে যান।

চন্দ্র বসুর কথায়, প্রচারের আলোয় আসার জন্য মিথ্যে ইতিহাস উপস্থাপন করা উচিত নয়। এটা অপরাধ। নেতাজি ও সাভারকরের দেখা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর প্রতি অনুরক্ত হননি নেতাজি। কারণ সাভারকর ছিলেন হিন্দু নেতা। আর নেতাজি ছিলেন ভারতের নেতা, হিন্দু কিংবা মুসলিম নেতা নন। 

RELATED ARTICLES

Most Popular