চার বল বাকি থাকতে তিন উইকেটে জয় পেয়ে গেছে তাঁর দল। আরসিবি নেতা ফাফ ডু প্লেসিস ম্যাচের শেষে বললেন,'বরফের মতো ঠান্ডা মানসিকতার বিচারে, এম এস ধোনির পরই থাকবে দীনেশ কার্তিক।' কেকেআরকে শেষ ওভারে প্রথম দুই বলে হারিয়ে দিলেন - ডিকে। প্রথম বলে ছক্কা। পরের বলে স্ট্রেট ড্রাইভে চার। মনে হল যেন, একরাশ অপমানের সমুচিত জবাব দিল কার্তিকের ব্যাট। গত বছর অনেক কিছু হজম করতে হয়েছিল তাঁকে। এই ম্যাচটিতে সব কিছু তিনি মাঠে হিসাব বুঝিয়ে দিলেন।
এবারের আই পি এলে ব্যাঙ্গালোর দ্বিতীয় ম্যাচ খেলে ফেললো। আর পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখছি, ডিকের স্ট্রাইক রেট : ২১৯.০৪। ৪ টি ছক্কা। ৪ টি চার। দুটি ম্যাচেই ফিনিশার ট্যাগ তাঁর নামের পাশে।
আর সি বি'র ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে দরকার ছিল ৭ রান। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগ দিয়ে ওভারের প্রথম বলে ছক্কা উড়িয়ে গ্যালারিতে ফেলে দিলেন। ম্যাচের স্কোর সমান সমান হয়ে যায়। পরের বলে বাউন্ডারি মেরে মধুর জয় ছিনিয়ে আনলেন।
ইনিংস শুরুতে তৃতীয় বলে উইকেট যেতেই ক্রিজে গিয়েছিলেন ভিকে ( Virat Kohli)। তিনি প্রথম যে বলটা পেলেন, সেটাই বাউন্ডারিতে পাঠালেন। পরেরটাও তাই। এই না হলে, বড় ক্রিকেটার! বোলারকে যেন বোঝালেন, আগের বলে উইকেটটা বরাত ভালো - পেয়ে গেছ। এমন এক জয়ে খুশি আগের নেতা বিরাট কোহলি। ম্যাচের শেষে টুইট করে সকলকে জানিয়েও দিলেন।
এর বাইরেও এমন লো স্কোরিং ম্যাচে আরও অনেকে নজরে এলেন। যেমন, হার্শাল প্যাটেল। তিনি ৩ উইকেট নিলেন। এতদিনের টুর্নামেন্টে তিনি দ্বিতীয় বোলার যিনি পরপর দুটি ওভার মেডেন নেন।
কার্তিক ৭ বলে অপরাজিত ১৪ রান করলেন ( ১টি ছক্কা, ১টি চার)। তাঁকে সাহায্য করলেন হার্শাল প্যাটেলও। ৬ বলে ১০ রান করে অপরাজিত ( ২টি বাউন্ডারি) থেকে জয় নিয়ে ফিরলেন। কার্তিক আর প্যাটেল সপ্তম উইকেটে ২১ রান যোগ করে নিয়েছিলেন।
নজর কাড়লেন বাংলা রঞ্জি দলের আকাশদীপ। এই ডানহাতি পেসারটি (৩/৪৫) আর শ্রীলঙ্কার লেগ স্পিনার ওয়ানিনদু হাসারঙ্গা (৪/২০) নাইটসদের ১২৮ রানে আটকে দিয়েছিলেন টস জিতে আগে বোলিং করে। বোলিং করতে নেমে প্রথম ৩ ওভারেই আরসিবি'র ওপেনার অনুজ রাওয়াত (০) , ফাফ ডু প্লেসিস (৪ বলে ৫ রান) আর বিরাট কোহলিকে (৭ বলে ১২ রান) তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে কেকেআরকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন উমেশ যাদব এবং টিম সাউদি।
১৭ রানে ৩ উইকেট - এমন অবস্থায়, শেরফান রাদারফোর্ড ( ৪০ বলে ২৮ রান) চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৪৫ রান যোগ করেন ডেভিড উইলিকে ( ২৮ বলে ১৮ রান) নিয়ে। এই জুটি ভেঙে দেন কেকেআরের মিস্ট্রি স্পিনার সুনীল নারিন। উইলি ফেরার পর বাংলার আরেক ক্রিকেটার শাহবাজ আহমেদকে ( ২০ বলে ২৭ রান) নিয়ে ম্যাচে ফিরে আসেন রাদারফোর্ড। কিন্তু এই দুই ব্যাটার পরপর আউট হয়ে যান। কিন্তু কার্তিক আর প্যাটেল এদিন অন্য মেজাজে ছিলেন।
বাংলার আকাশদীপ ছিলেন ম্যাচ শুরুর হিরো। ২৫ বছর বয়সী নিজের প্রথম স্পেলের প্রথম বলে ফেরান ভেঙ্কটেশ আয়ারকে (১৪ বলে ১০ রান)। আগের ম্যাচে ছন্দে ফেরা রাহানে (১০ বলে ৯ রান) ফেরেন সিরাজের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। কেকেআর ২ উইকেটে ৩২ রান থেকে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে, আকাশদীপ মারকুটে নীতিশ রানাকে ( ৫ বলে ১০ রান ) ফেরাতেই।
এরপরের পর্বে নায়ক হয়ে ওঠেন হাসারঙ্গা (৪/২০)। শ্রেয়স (১০ বলে ১৩ রান) , রাসেল ( ১৮ বলে ২৫ রান) , সাম বিলিংস ( ১৫ বলে ১৪ রান) কে ফেরান শ্রীলঙ্কার লেগ স্পিনার। শেষে উইকেটে উমেশ - বরুন ২৭ রান যোগ না করলে, শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই করতেই পারতো কিনা কেকেআর - তা নিয়ে সংশয় ছিল।
ম্যাচের সেরা হলেন ৪ উইকেট পাওয়া শ্রীলঙ্কার লেগ স্পিনার হাসারঙ্গা। এখন পার্পেল ক্যাপ তাঁর মাথায়। আর অরেঞ্জ ক্যাপ এখনও আরসিবি নেতা ডু প্লেসিসের মাথায়। আর টিম আরসিবি ৬ নম্বরে।Loving the Jersey, Living the Good win tonight boys 🤞💪 #Waniya #Waniya49 #IPL2022 #RoyalChallengersBangalore #WeAreChallengers pic.twitter.com/tevkiiHZvy
— Wanindu Hasaranga (@Wanindu49) March 30, 2022
ম্যাচের শেষে নাইট ক্যাপ্টেন শ্রেয়স প্রশংসা করলেন, স্পিনার হাসারঙ্গার। কিন্তু এই দলের আগের ক্যাপ্টেন কার্তিক যে ম্যাচটা শেষবেলায় ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন, তা নিয়ে কোনও শব্দ খরচ করেনি কেকেআর শিবির।
বরঞ্চ আরসিবি' র নেতা ডু প্লেসিসের এখনও চেন্নাই প্রীতিতে অনেকেই অবাক। ম্যাচের শেষে তিনি বলে বসেছেন, ' আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম চেন্নাইকে এই কেকেআরের কাছে হারতে দেখে। আমি আমার দলের ছেলেদের জন্য বলেছিলাম, চেন্নাইয়ের জন্য এই ম্যাচ আমাদের জিততে হবে। কোহলিও আমার সঙ্গে একইভাবে জয়ের কথা বলেছিল।' এ আবার কী মানসিকতা! নিজের দলের জন্য নয়, অন্য দলের জন্য এই জয়! তাহলে সিএসকে বনাম আরসিবি ম্যাচে ডু প্লেসিস কি বলবেন?
ছবি: সৌ টুইটার।