গত কয়েক মাস ধরেই দেশের কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সংক্রমণ তলানিতে ঠেকেছে। মৃত্যুর হারও কমেছে। তবে সম্প্রতি চীনে করোনার নয়া উপরূপের কারণে যে ভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তা চিন্তা বাড়িয়েছে। গত জুলাই, সেপ্টেম্বর, নভেম্বর মাসে গুজরাত ও ওড়িশায় ২ জন করে মোট ৪ জনের শরীরে থাবা বসিয়েছিল এই উপরূপ। তবে ৪ জনেই সুস্থ রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কোভিড নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
কিন্তু ওমিক্রনের নয়া রূপ বিএফ.৭-এ আক্রান্ত হয়েছেন কী করে বুঝবেন?
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, ওমিক্রনের অন্যান্য প্রকারের মতোই এটাও একটা ভ্যারিয়েন্ট। গুরুগ্রামের মণিপাল হাসপাতালের ডাক্তার অমিতাভ ঘোষ হিন্দুস্তান টাইমসে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এটা তেমন প্রাণঘাতী না হলেও দুর্বল ব্যক্তিদের মৃত্যু সম্ভাবনা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। চীনে অন্তত ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর আঁচ করছেন তিনি। তাঁর পরামর্শ চতুর্থ টিকাকরণ সম্ভাব্য মৃত্যু ঠেকাতে পারে।
কতটা সংক্রামক?
ওমিক্রনের এই নয়া কলেবর অতিসংক্রমণশীল বা দ্রুত ছড়ায়। খুব সময়ের মধ্যে শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। গুরুগ্রামের সিকে বিড়লা হাসপাতালের ডাক্তার রবীন্দ্র গুপ্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, যেহেতু এখনও দেশ-বিদেশে যাতায়াত বিনা বাধায় চলছে, তাই আগামী তিন মাসের মধ্যে এটা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেন, এই ভ্যারিয়েন্ট একজনের থেকে অন্যজনে খুব সময়ের মধ্য সংক্রমিত হয় এবং শরীরে প্রবেশের পর তা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করে। বিদেশে বিমানযাত্রার মাধ্যমেই এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে চলেছে বলে তাঁর মত।
বিএফ.৭-এর উপসর্গ কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগের মতোই উপসর্গগুলি এক। শ্বাসনালীর উপরিভাগে সংক্রমণ যেমন জ্বর, কাশি, গলা শুকিয়ে আসা, খুসখুস করা এবং নাক দিয়ে অনবরত জল ঝরবে। এছাড়াও গায়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, পেটে যন্ত্রণা এবং পেট খারাপ হতে পারে। চতুর্থবার টিকা নিলে মারণ ক্ষমতা কমবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কোনও উপসর্গ ছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তি তাঁর সংসর্গে আসা ১৮ জনকে আক্রান্ত করতে পারেন। তবে এখনই একে উপেক্ষা না করে কঠিন নজরদারি রাখা উচিত বলে মত তাঁদের।
কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?
স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য, মাস্ক পরা, বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে হবে। যাঁদের শরীরে পুষ্টি কম, তাঁদের বেশি করে সতর্ক থাকতে হবে। যাঁদের কোভিড হয়ে গিয়েছে, তাঁদের ভিতরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে আছে। ফলে তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ফরিদাবাদের ডাক্তার চারু দত্ত অরোরা হলেন একজন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, এটা শুধু কয়েকটি দেশের সমস্যা নয়। এ রোগ ছড়ালে ফের কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যু হবে। তিনি বলেন, ওমিক্রনের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে বিএফ.৭ হল সবথেকে বেশি সংক্রামক। সহজ হিসেবে তিনি জানান, সংক্রমিত কোনও ব্যক্তি তাঁর সংসর্গে আসা ১০-১৮.৬ জনকে আক্রান্ত করতে পারে। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় ধরা পড়া খুবই কঠিন হয়ে যায়। শিশু, বৃদ্ধ, প্রসূতি, অন্যান্য রোগে ভোগা ব্যক্তিদের দ্রুত সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি বলে তিনি জানান। তবে এর মধ্যে আশ্বাসের কথা শুনিয়েছেন ডাক্তার অমিতাভ ঘোষ। তিনি জানান নতুন ভ্যারিয়েন্টের দ্রুত সংক্রমণের ক্ষমতা বেশি হলেও প্রাণঘাতী ক্ষমতা কম।
শেয়ার করুন