আজ, ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়ার্ল্ড ক্যানসার ডে। বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা। সেখানে এই মারণ রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে একজোট হওয়ার দিন আজ। প্রত্যেক বছরই নানা রকমের সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, ক্যানসার জয়ী ও ক্যানসার আক্রান্ত মানুষদের নিয়ে বিশ্বজুড়ে নানা রকমের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত হয় এই দিনটি। ( ছবি সৌ: Unsplash )
ক্যানসারে মৃত্যু: ওয়ার্ল্ড ক্যানসার ডে অর্গানাইজেশনের (World Cancer Day Organisation) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ১ কোটি ক্যানসার (Cancer) আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়। মানব দেহে ক্যানসার বাসা বাঁধলে ডিএনএ (DNA) বা কোষের যে জেনেটিক কোড (genetic code) রয়েছে তাতে পরিবর্তন ঘটে। শরীরের যে অংশ ক্যানসার থাবা বসায় সেখানকার কোষগুলি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। অনিয়ন্ত্রিতভাব মিউটেশন (uncontrollable mutation) শুরু হয় এই কোষগুলিতে। আর এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আসেপাসের টিস্যুগুলি (tissues)। সময় থাকতে শরীরের ভেতরে ঘটে চলা এই প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাণসংশয় হয়। এই নিয়ে বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে ১৯৩৩ সালে বিশেষ উদ্যোগ নেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organisation-WHO)। ১৯৩৩ সালে আজকের দিনে প্রথমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে (Geneva, Switzerland) উদযাপিত হয় ওয়ার্ল্ড ক্যানসার ডে (World Cancer Day)।
সময়ের সঙ্গে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন ও প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য উন্নতির ফলে ইদানীং ব্রেস্ট ক্যানসার সহ আরও বেশ কয়েক ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাণ সংশয়ের ঝুকি অনেকটাই কমেছে। তবে অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ ও আধুনিক জীবনযাপনের কারণে বেড়েছে ক্যানসার আক্রান্তদের সংখ্যা। এদিকে এই রোগকে ঘিরে তৈরি হয়েছে একাধিক ভ্রান্ত ধারণাও।
ওয়ার্ল্ড ক্যানসার ডে থিম: ২০২২-র মতো এ বছরও ওয়ার্ল্ড ক্যানসার ডে-র থিম (World Cancer Day Theme) হল ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ(Close the Care Gap)। ২০২৪-ও এই একই থিম থাকবে। প্রসঙ্গত, কোভিডের আগে বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল ক্যানসার। এর ওপর কোভিড অতিমারির কারণে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের চিকিত্সা বিভ্রাটও হয়েছে। এই কারণে এরকম বহু ক্যানসার আক্রান্ত রোগী সেরে ওঠার পরও কোভিড পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে এই ক্যানসার রিল্যাপস (relapse) বা পুনরায় সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়েছে আরও কয়েকগুণ। এবার ওয়ার্ল্ড ক্যানসার ডে-র অফিসিয়াল কালার হল কমলা ও নীল।
ভারতেও ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা বেশ চিন্তাজনক। দেশে প্রত্যেক ৯ জনের মধ্যে একজন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হন। অন্যান্য ক্যানসারের তুলনায় ভারতে ফুসফুসে, স্তন,পেট, জরায়ুমুখে ও মুখের ভিতরের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি। (ছবি সৌ: WHO)
ক্যানসারের উপসর্গ: ক্যানসারের এত রকমের প্রকার রয়েছে যে কোনও বিশেষ লক্ষ্ণণ দেখেই যে সেটা ক্যানসার বলা মুশকিল। শরীরের এই মারণ রোগ যে বাসা বেঁধেছে তা নানা পরীক্ষা নিরিক্ষার পরই নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে প্রাথমিক ভাবে এই ধরনের উপসর্গ যেমন ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া (difficulty in swallowing), বার বার মুখে আলসার হওয়া (mouth ulcers), পেচ্ছাবের সমস্যা বা অভ্যেসে পরিবর্তন (changes in urination), অনিয়মিত রক্তক্ষরণ (irregular bleeding), অত্যাধিক ক্লান্তিবোধ(extreme tiredness), দীর্ঘদিন ধরে সর্দি-কাশি (cold, cough) কিংবা কাশতে গিয়ে রক্ত বেরনো (coughing & bleeding), হজমের সমস্যা (indigestion), পেট ফাপা(flatulence) বাচ্চাদের মধ্যে বার বার জ্বর (chronic fever) হওয়া, ওজন কমে (weight loss) যাওয়া বা খিদে মরে(loss of appetite) যাওয়া কিংবা লাম্প (lumps in the body) হওয়ার মতো এই সব উপসর্গ দেখলে সতর্ক হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। (ছবি সৌ: Unsplash)
শেয়ার করুন