দেখতে দেখতে আরও একটা বছর কেটে গেল। ২০২২ সালকে বিদায় জানিয়ে ২০২৩-কে বরণ করে নেওয়ার পালা। প্রত্যেক বছরের মতো বিদায়ী বছরেও পৃথিবীজুড়ে চলেছে নানা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। কেউ বিজয়ীর সম্মান পেয়েছে, কেউ থেকে গিয়েছে পরাজিতদের দলে। খেলার সাজসরঞ্জাম গুটিয়ে বিদায় নিয়েছেন কোনও কিংবদন্তি আবার উত্থান হয়েছে নতুন তারকার। এই প্রতিবেদনে রইল ২০২২ সালের ক্রীড়াজগতের সেরা ১০টি ঘটনা।
আর্জেন্টিনা এবং মেসির বিশ্বকাপ জয়: বছরের সর্বশেষ এবং সর্বসেরা ক্রীড়া ইভেন্ট ছিল কাতার বিশ্বকাপ। প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের মতো দুর্বল প্রতিপক্ষের কাছে হেরে চাপে পড়ে গিয়েছিলেন লিওনেল মেসিরা। কিন্তু তারপর প্রত্যেকটি ম্যাচ জিতে ৩৬ বছর পর কাপ জিতল আলবিসেলেস্তেরাই। মেসি সর্বকালের সেরা কি না এই বিতর্ক আর বিতর্ক নেই, দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। ৩৫ বছর বয়সে তিনি যে জাদু দেখিয়েছেন তা আমৃত্যু ভোলা সম্ভব নয়।
নাদালের ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়: ২০২১ চোটে কবলে থাকার পর ২০২২ সালের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ‘কামব্যাক’ করেন রাফায়েল নাদাল। ফাইনালে দানিল মেদভেদেভের মতো তরুণ তারকার বিরুদ্ধে প্রথম দুই সেটে হেরেও খেতাব জেতেন স্প্যানিশ তারকা। রজার ফেডেরার এবং নোভাক জকোভিচকে টপকে প্রথম পুরুষ হিসেবে ২১টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের অধিকারী হন। এরপরে ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে আরও এক কদম (২২) এগিয়ে যান। অবশ্য উইম্বলডন জিতে ২১-এ পা দেন জকোভিচও।
ফেডেরারের অবসর: নাদাল এবং জকোভিচ যখন রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছেন সেই বছরেই টেনিসকে বিদায় জানান রজার ফেডেরার। ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যামে থেমে থাকলেও বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ টেনিসপ্রেমীরা একটা বিষয়ে একমত, ফেডেরারই সর্বকালের সেরা। পাওয়ার টেনিসের যুগে তিনিই ছিলেন শিল্পের শেষ প্রতিনিধি। ওরকম সোনায় বাঁধানো ফোরহ্যান্ড আর দেখা যাবে কি না সন্দেহ।
কমনওয়েলথ গেমসে ভারতীয় হকি দলের রুপো জয়: এককালে যে খেলায় ভারত প্রভুত্ব করত আজ তার দৈন্যদশা। কিন্তু ২০২২ সালটা অন্তত ভারতীয় পুরুষ হকি দলের জন্য যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। কারণ কমনওয়েলথ গেমসে তারা রুপো জেতে। অবশ্য উত্থান দেখা গিয়েছিল ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত টোকিও অলিম্পিক্সেই। সেখানে ব্রোঞ্জ জিতেছিল ভারতের ছেলেরা।
রিয়াল মাদ্রিদের ১৪তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়: ইউরোপীয় ফুটবলে কথিত আছে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ রয়েছে রিয়ালের ডিএনএ-তে। নয়তো, যাদের কেউ ফেভারিট হিসেবে ভাবেনি, তারা কীভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেতে পারে! পিএসজি, চেলসি, ম্যান সিটি এবং লিভারপুল— পরপর চার ম্যাচে মহাশক্তিধর এই ক্লাবগুলোকে হারিয়ে ট্রফি জেতে রিয়াল। আর এই জয়ের কাণ্ডারি তাদের অধিনায়ক তথা স্ট্রাইকার করিম বেঞ্জেমা। গোল করেছেন সর্বোচ্চ ১৫টি। দুরন্ত পারফর্ম্যান্সের কারণেই পেয়েছেন ব্যালন ডোর পুরস্কার।
হার্দিকের ২০২২ আইপিএল জয়: ২০২২ আইপিএল তাক লাগিয়ে দেয় গুজরাত টাইটানস। নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়ে প্রথমবারেই আইপিএল জেতে হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন গুজরাত টাইটানস। লখনউ সুপার জায়ান্টস, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, রাজস্থান রয়্যালস এবং গুজরাত টাইটানস- এই চারটি দল এবারের প্লে অফে যোগ্যতা অর্জন করেছিল। ফাইনাল হয় গুজরাত টাইটানস এবং রাজস্থান রয়্যালসের মধ্যে। অবশেষে রাজস্থানকে ৭ উইকেটে হারায় গুজরাত । বহুদিন ধরে ফর্মে ছিলেন না, বহুবার সমালোচিত হয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। কিন্তু আইপিএলে তাঁর নেতৃত্ব প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছে সবমহলের।
এশিয়া কাপ জিতল শ্রীলঙ্কা: এশিয়া কাপে চমক দেয় শ্রীলঙ্কা। ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া সেরার ট্রফি নেন লঙ্কা অধিনায়ক দাসুন শানাকা। আশা জাগিয়েও হতাশ করে ভারতীয় দল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে শুরু করলেও সুপার ফোরের লড়াইয়ে পাকিস্তানের কাছে পরাজিত হয় রোহিত অ্যান্ড কোম্পানি। সুপার ফোরের ম্যাচে পাকিস্তানের সামনে ১৮২ রানের লক্ষ্যমাত্রা রাখে ভারত। মহম্মদ রিজওয়ান এবং মহম্মদ নওয়াজের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে জয় পায় পাকিস্তান। এরপর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও হেরে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নেয় ভারত।
টি২০ বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডের: এবছরের বিশ্বকাপ নিয়ে আশাবাদী ছিলেন প্রত্যেক ভারতীয়। আশা এটাই ছিল যে ২০০৭-এর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আবার বিশ্বকাপ জিতবে ভারত। শুরুটাও করেছিল দারুণভাবে। কিন্তু শেষরক্ষা হল কোথায়? ইংল্যান্ডের কাছে সেমিফাইনালে ১০ উইকেটে লজ্জাজনকভাবে হারতে হয় টিম ইন্ডিয়াকে। অথচ বিশ্বকাপের শুরুতেই বিরাট কোহলির দুরন্ত ব্যাটিংয়ের সুবাদে পাকিস্তানকে হারায় ভারত। ম্যাচ শেষে কোহলি বলেন, জীবনের সেরা ইনিংসটা খেলে ফেললাম। আবেগ বিহ্বল হয়ে পড়ে আসমুদ্রহিমাচল।
থমাস কাপে ভারতের সাফল্য: ব্যাডমিন্টনের দিক থেকেও বছরটা দারুণ গিয়েছে ভারতের। ইন্দোনেশিয়াকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের জন্য থমাস কাপ জেতে ভারত। যেসব শাটলাররা থমাস কাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন তাঁরা হলেন লক্ষ্য সেন, কিদম্বি শ্রীকান্ত, চিরাগ শেঠি এবং সাত্ত্বিক সাইরাজ। প্রথম গেমে অ্যান্টনি গিনটিংকে পরাজিত করেন লক্ষ্য সেন। এরপর ডাবলসে এহসান-সুকামালজোকে পরাজিত করে সাত্ত্বিক-চিরাগ জুটি। তৃতীয় গেমে জোনাথন ক্রিস্টিকে পরাজিত করেন কিদম্বি শ্রীকান্ত। ভারতের এই জয়ে নতুন করে আশা দেখতে শুরু করেছে ব্যাডমিন্টন অনুরাগীরা।
নীরজ চোপড়ার সাফল্য: নীরজ চোপড়ার জন্য দারুণ গিয়েছে এই বছর। স্টকহোম ডায়মন্ড লিগে নিজের জাতীয় রেকর্ড ভেঙে রুপোর পদক জেতেন তিনি। এরপর বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপেও ৮৮.১৩ মিটার থ্রোয়ে রূপো জেতেন। অঞ্জু ববি জর্জের পর তিনি দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে পদক জেতেন। তবে চোটের কারণে কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নিতে পারেননি তিনি। তা না হলে আরও একটি পদক নিশ্চিত ছিল ভারতের।
শেয়ার করুন