বিশ্বের অন্যতম নয়, সেরার সেরা রেস্তরাঁর (Restaurant) মধ্যে হাতে গোনা নামের মধ্যে অন্যতম নাম – ‘নোমা (Noma)’। নামের পাশে রয়েছে তিনটি মিচেলিন স্টার (Three Michelin Stars)। ইউরোপে ভ্রমণে (Europe Tour) গেলে, পকেটে টাকা থাকলে, খাদ্য রসিকরা (Food Lovers) এই রেস্তরাঁতে অবশ্যই ঢুঁ মেরে আসেন। খ্যাতি রয়েছে দুনিয়া জোড়া। কিন্তু এবার এই নামজাদা এই রেস্তরাঁর দরজা বন্ধ হতে চলেছে সর্বসাধারণের জন্য।
ফুড ট্যুরিজম (Food Tourism)-এর কল্যাণে বিখ্যাত হয়ে ওঠা এই রেস্তোরাঁ দুই দশক পরিষেবা (Service) দেওয়ার পর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এবছর নয়, ২০২৪ সালে স্থায়ীভাবে দরজা বন্ধ হচ্ছে নোমার দরজা। খাদ্য পরিবেশনা (Food Serve) নয়, এবার লক্ষ্য ফুড ল্যাবরেটরি (Food Laboratory) হয়ে ওঠা।
কিন্তু হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেন? জগৎজোড়া খ্যাতনামা এই রেস্তরাঁ ২০২১ সালে ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। ২০২২ সালটা তুলনায় ভালো কেটেছে। আয় হলেও, তেমন নয়। তাই রেস্তরাঁকে নতুন রূপে ফিরিয়ে আনতে চায় কর্তৃপক্ষ। কোভিডের কারণে ২,৪০,০০০ মার্কিন ডলার ক্ষতির কথা নিজেই জানিয়েছিল নোমা।
ফটো শেয়ারিং ওয়েবসাইট ইনস্টাগ্রামে (Photo Sharing Website Instagram) একটি পোস্টে এই কথা জানানো হয়েছে। সেখানে নোমার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “নোমা হিসেবে নিজেদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের পরিবর্তিত হতে হবে। তাই প্রিয় অতিথি এবং বন্ধুরা, আপনাদের জন্য একটা দুর্দান্ত খবর রয়েছে। ২০২৪ সালের শীতে নোমা বন্ধ হচ্ছে। আমরা নতুন অধ্যায় শুরু করছি, নোমা ৩.০ (Noma 3.0)।”
নোমার ওয়েবসাইটে (Noma Website) আরও বলা হয়েছে, “২০২৫ সালে এই রেস্তরাঁ বিশাল এক ল্যাবে পরিণত হচ্ছে – খাদ্য উদ্ভাবন এবং নতুন স্বাদ আনার উদ্দেশ্যে এই রান্নাঘর নিবেদিত হবে। আমরা আমাদের প্রচেষ্টার ফল আরও ব্যাপকভাবে ভাগ করে নেব।”
২০০৩ সালে শেফ রেনে রেডজেপি (chef René Redzepi) ডেনমার্কে রাজধানী কোপেনহেগেনে (Copenhagen, Denmark) এই রেস্তরাঁ প্রথম খোলেন। রেস্তরাঁ ম্যাগাজিনের (Restaurant Magazine) বিচারে ২০১০, ২০১১, ২০১২ এবং ২০১৪ সালে নোমা পৃথিবীর সেরা রেস্তরাঁর শিরোপা অর্জন করে। ২০২১ সালে রেস্তরাঁটি বিশ্বের সেরা ৫০টি রেস্তরাঁ অ্যাওয়ার্ডে শীর্ষ স্থান দখল করে। উল্লেখ্যজনক বিষয় হল, ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড’স ৫০ বেস্ট রেস্তরাঁ (World’s 50 Best Restaurants)-র তালিকায় লাগাতার সেরা দশের মধ্যে থেকেছে নোমা।
ড্যানিশ ফুড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Danish Food Administration)-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ১২ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৪৩৫-র জনের মধ্যে ৬৩ জন আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন নোমাতে খাবার খেয়ে। অসুস্থ ব্যক্তিদের উপসর্গ (Symptoms) দেখে মনে হয়েছিল, নোরোভাইরাসে (Norovirus) আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা। রিপোর্টে এটাও বলা হয়েছিল, ইচ্ছাকৃতভাবে নয়, অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনও রেস্তরাঁর কোনও অসুস্থ কর্মীর থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে থাকতে পারে।
তবে বন্ধ হওয়া এই প্রথম নয়। ২০০৩ সালে পথ চলা শুরু করার পর ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই রেস্তরাঁ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে একটি ফার্মে (Urban Firm) নোমা দ্বিতীয়বার ফিরে আসে। তবে বড় রূপে দ্বিতীয়বার আত্মপ্রকাশ ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। প্রসঙ্গত, গত বছর বিশ্বখ্যাত এই রেস্তরাঁ জানিয়েছিল, জাপানের কিয়োটেতে (Kyoto, Japan) ২০২৩ সালে ১৫ মার্চ থেকে ২০ মে পর্যন্ত দু’মাসের জন্য রেস্তরাঁ খুলবে সাময়িকভাবে। ২০২৪ সালে বন্ধ হওয়ার পর নোমার তৃতীয় আত্মপ্রকাশ ঘটবে ফুড ল্যাব হিসেবে।
নোমা কথাটি দু’টি ড্যানিশ শব্দের (Danish words) সংক্ষিপ্ত রূপের সংমিশ্রণ (Mixture of Abbreviation)। নর্ডিস্ক (Nordisk), ইংরেজিতে এর অর্থ নর্ডিক (Nordic) এবং মাড (Mad) অর্থাৎ ফুড (Food)। এই নিয়েই হয়েছে নোমা (Noma)।