সৌদি আরব: প্রায় ৬ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম মানুষের আবির্ভাব ঘটে। ঐতিহাসিকদের মতে, প্রথম আফ্রিকা মহাদেশে মানুষের জন্ম হয়। তারপর সময়ের সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে মানব সভ্যতা। আজ আমরা যতটা আধুনিক, প্রাচীনকালে আমরা তততাই অনুন্নত গুহা মানব ছিলাম। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে আদি-মানবকূলের সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আর এবার এক প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার সন্ধান পাওয়া গেল। সম্প্রতি, উত্তর-পশ্চিম সৌদি আরবে অবস্থিত মরূদ্যানে একটি ৪,০০০ বছরের পুরানো শহরের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। কীভাবে প্রাচীন মানুষ যাযাবর থেকে শহুরে জীবনধারায় নিজেদের রূপান্তরিত করেছিল, সেই সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট ধারণা দেয় আবিষ্কৃত এই শহরের ধ্বংসাবশেষ। এই শহরের নাম দেওয়া হয়েছে আল-নাতাহ। প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন যে, এই শহরটি দীর্ঘদিন ধরে খায়বারের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা মরূদ্যানের ভিতরে লুকিয়ে ছিল।
আরও পড়ুন: সাড়ে ৭ কোটি বছর আগে কেমন ছিল স্তন্যপায়ীরা? বিরল জীবাশ্ম আবিষ্কার করে দেখালেন বিজ্ঞানীরা
জানা গিয়েছে, ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক গুইলাম শার্লক্স এবং তাঁর টিম এই অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা ১৪.৫ কিলোমিটার লম্বা একটি প্রাচীরের আশেপাশে অনুসন্ধান চালিয়ে এই শহরকে খুঁজে বের করেন। সেই খবর প্রকাশিত হয় ‘প্লাস ওয়ান’ নামক একটি বিজ্ঞান পত্রিকায়। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রোঞ্জ যুগের প্রথম দিকে, অর্থাৎ ২,৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, এই আল-নাতাহ শহরটিতে ৫০০ জন মানুষ বসবাস করতেন। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, ২.৬ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই শহর ২,৪০০ থেকে ২,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মাঝের সময়ে নির্মিত হয়েছিল। এছাড়াও জানা গিয়েছে, এই প্রাচীন নগরী প্রায় ১,৫০০ থেকে ১,৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। শহরের বাড়িগুলি একটি আদর্শ পরিকল্পনা অনুসরণ করে নির্মিত হয়েছিল এবং সেগুলির প্রত্যেকটি ছোট রাস্তা দ্বারা সংযুক্ত ছিল। গবেষকদের অনুমান, ব্রোঞ্জ যুগে উত্তর-পশ্চিম আরবে বসবাসকারী যাযাবর গোষ্ঠীর মানুষজন এই শহরটি নির্মাণ করেছিলেন। যদিও এই আল-নাতাহ শহর মেসোপটেমিয়া বা মিশরীয় সভ্যতার শহরগুলির তুলনায় আকারে অনেকটাই ছোট। তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন যে, উত্তর-পশ্চিম আরবে এই অনন্য নগরী সেই সময়ের মানুষকে নগরায়নের পথে অনেকটা উন্নীত করেছিল। হয়ত, এই সময় থেকেই মানুষ আধুনিক হওয়ার পথে অনেকটা অগ্রসর হয়েছিল।
দেখুন আরও খবর: