মাসির যদি সামান্য একটু গোঁফ গজাতো মাসি তাহলে মেসো হত। ব্যাঙ্কে ১০০০ টাকা আছে আর মাত্র গোটা পাঁচেক শূন্য বেশি থাকলে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স এক কোটি হতো। প্রায় সেই রকম বিজেপি নেতৃত্ব, বা বলা ভাল আমাদের কাঁথির খোকাবাবু আলোচনায় বলেছেন আর মাত্র ৫% ভোট বেশি পেলেই ব্যস, তৃণমূল হেরে যাবে, মুখ্যমন্ত্রী হবেন উনি। গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল পেয়েছিল ৪৫.৬৭% ভোট আর বিজেপি ৩৯% ভোট। অংকের হিসেবে তৃণমূলের থেকে ৫ ও নয় ৪% ভোট বেশি পেলেই অংকের হিসেবেই কায়াপলট হতেই পারে। আর সংসদীয় গণতন্ত্রে তো এমন হয়, শাসক দলকে হারিয়ে বিরোধীরা ক্ষমতায় আসে। এ তো নতুন কিছু নয়। কিন্তু ওই যে ৩%, ৪% এই হিসেবগুলো মারাত্মক। ধরুন নয় নয় করেও এই বাংলার ভোটার সংখ্যা ৮ কোটির কিছু বেশি। এখন ৫% মানে হল ৪০ লক্ষ। এই ৪০ লক্ষ বেশি ভোট টা কোথা থেকে আসবে? কী ভাবে আসবে? কেন আসবে তার কি কোনও হিসেব আছে আমাদের খোকাবাবুর কাছে? জানা আছে ২% ভোট সুইং করাতে, মানে বিপক্ষ দলের কাছ থেকে নিজেদের দিকে আনতে কত কাঠ খড় পোড়াতে হয়? আসলে মমতার ছত্র ছায়াতে রাজনীতি করে মন্ত্রী সান্ত্রী বনে যাওয়া নেতাদের সমস্যা হল এরা জীবনেও মাটির রাজনীতিটা বুঝে উঠতে পারেনি, কারণ সেই দায়িত্ব একাই বয়েছেন নেত্রী নিজে, মা মাটি আর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee), এনারা হলেন স্যাটেলাইট। তো সেই শুভেন্দু অধিকারির কথা নিয়েই বিষয় আজকে, আর ৫ শতাংশ, তাহলেই বিজেপি ক্ষমতায়?
আসলে বিজেপি আমাদের রাজ্যে দৌড়টা শুরু করে ৩০ পয়েন্ট পেছনে রেখে। শুভেন্দু প্রকাশ্যেই বলে দিয়েছেন, একবার নয় বহুবার, ওই ৩০% এর ভোট আমাদের দরকার নেই, ওই মোল্লাদের ভোট আমাদের দরকার নেই, ওই টুপি ওলা দের ভোট আমাদের দরকার নেই, আমরা বাকি ৭০% এর ভোট নিয়েই ক্ষমতায় আসবো। আজ নয় সেই ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই তিনি এই কথা বহুবার বলেছেন। অন্য কোনও দেশ হলে, এমনকি এই বিজেপি সরকার ক্ষমতায় না থাকলে কেবল এটা বলার জন্যই এই শান্তি কুঞ্জের অশান্তিটিকে জেলে থাকতে হত, আমাদের সংবিধান এরকম বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধেই রচিত হয়েছে। তো যাই হোক, বাংলার ৩০% সংখ্যালঘুদের ভোট বাদ দিলে পড়ে থাকে সত্তর শতাংশ ভোট। বিজেপি সারা দেশেই কমবেশি ৫০% হিন্দু ভোট পায়, বাকি ৫০% হিন্দু বিজেপি আর এস এস এর ঐ সাম্প্রদায়িক প্রচারে সমর্থন দেয়নি কোনও দিন। না গত লোকসভার ভোটেও সেটা পরিস্কার। কিন্তু ওনার ৫% বেশি ভোট চাই। কোথা থেকে আসবে, ভোট তো লাড্ডু নয় যে হাত ঘোরালেই আসবে। জিনিষ্পত্রের দাম বাড়ছে, পেট্রল ডিজেলের দাম বাড়ছে, বেকারদের হাতে চাকরি নেই, শিক্ষা ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর অরাজগতা দেশ জুড়েই, স্বাস্থক্ষেত্রে প্রাইভেট পুঁজির বিনিয়োগ সাধারণ মানুষের স্বাস্থের অধিকার কেড়ে নিয়েছে কবেই, মানুষ অসুস্থ হবার চেয়ে মরে যাওয়া টা সোজা আর নিরাপদ বলে মনে করে। কিসের জন্য ভোট বাড়বে?
আরও পড়ুন: Aajke | আরজি কর আন্দোলন আর বিজেপির নৌটঙ্কি
জনসংখ্যার কোন অংশ বিজেপি কে ভোট দেবে? ধরুন এত্তবড় এক সামাজিক রাজনৈতিক আন্দোলন হল, ইন ফ্যাক্ট এখনও চলছে, বিজেপি কোথায়? নিজেদের ঝান্ডা ধরে যে দল একটা নবান্ন অভিযান করে উঠতে পারে না, সেই দল ওই এক্সট্রা টু এ বি টা পাবে কোথ্বেকে? হ্যাঁ ৫% ভোট এক্সট্রা পেলে পালটে যাবে সরকার। কিন্তু হিসেবটা কী? ঠিক এই মূহুর্তে ভোট হলে বিজেপির ভোট কিছুটা কমলেও অবাক হবো না, বামেদের ভোট কিছুটা বাড়লে তার সিংহ ভাগ আসবে ওই বিজেপির ভোট বাক্স থেকেই। এমন কোনও কাজ মোদি শাহ করেন নি যার ফলে এই বাংলাতে বিজেপির ভোট এক শতাংশও বাড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কিন্তু ওই যে আশায় মরে চাষা। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম শুভেন্দু অধিকারি বলেছে আর মাত্র ৫% ভোট বাড়লেই বিজেপি ক্ষমতায় আসবে। বিজেপির ভোট বাড়ার কি কোনও বাস্তব সম্ভাবনা আছে বলে আপনারা মনে করেন? শুনুন কী বলেছেন মানুষজন।
শুভেন্দু অধিকারি সাফ জানিয়েছেন যে মুর্শিদাবাদের মাফুজা খাতুনের মত কয়েকজন মুস্লমান বাদ দিয়ে বাকি মুসলমানেরা বিজেপি কে ভোট দেয় না, এবং সেই মুসলমানদের ভোট ওনার দরকারও নেই। ওদিকে ওনার পয়সাতে লালিত পালিত মুরগি ইউটিউবার নতুন দল খুলছেন, অ্যাট লিস্ট খোলার পরিকল্পনা তো করেইছেন, প্ল্যান কিন্তু খুব সোজা। উনি মুসলমানদের তাতিয়ে তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্ক ভাঙতে চান আর ওনার মনিব হিন্দু হৃদয় সম্রাট এর বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে হিন্দু তাস খেলে গদি দখল করতে চান। এ হলো সেই দুই চোর যাদের একজনের হাতে থাকে গরু, সে গরু নিয়ে রওনা দেয় উত্তর দিকে, অন্যজনের হাতে থাকে গরুর গলার ঘন্টা যে দক্ষিণ দিকে হাঁটা দেয় ঘন্টা বাজাতে বাজাতে, লোকজন দক্ষিণ দিকে ধাওয়া করলে সেই দ্বিতীয় চোর ঘন্টা ফেলে কেটে পড়ে। সাবধান, দুই গরু চোর গরু চুরি করতে নেমেছে, ঘর সামলান, গরু সামলান।
দেখুন ভিডিও