কলকাতা: বাংলাদেশে (Bangladesh) সংখ্যালঘু অত্যাচারের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানে শান্তিরক্ষা বাহিনীর (Peace Keeping Force) পাঠানোর জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের (UN) কাছে কেন্দ্র সরকার দরবার করুক। সোমবার এই সংক্রান্ত প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রকের (পররাষ্ট্র) উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন (Md Touhid Hossain) এদিন বিকেলে ঢাকায় জানালেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন এমন বক্তব্য তুলে ধরেছেন আমরা জানি না। পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে চাই। এটি তাঁর ধরনের বক্তব্য হিসেবে দেখতে চাই। একইসঙ্গে সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার নিয়ে ওই উপদেষ্টার দাবি, তাঁকে গ্রেফতার এবং আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। আমরা বার্তা দিতে চাই, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক কোনও অপতৎপরতা বরদাস্ত করবে না। আমরা কোনও ভেদ করতে চাই না।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) আগেই জানিয়েছিলেন, প্রতিবেশী দেশের বিষয়। যা বলবে কেন্দ্র সরকার। তবে একইসঙ্গে এদিন মাস্টারস্ট্রোক দেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশে (Bangladesh) শান্তিসেনা পাঠানোর (Peace Keeping Force) জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব দিলেন তিনি। উল্লেখ্য, আটের দশকের শেষে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধের সময় শান্তিসেনা পাঠিয়েছিল ভারত। তবে তার প্রেক্ষিত আলাদা ছিল। বিদেশনীতিও অন্যরকম ছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ভৌগলিক, সামরিক সহ সব দিক দিয়েই বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভারতের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সঙ্গে সীমানা, ভাষা, সংস্কৃতির সংযোগ থাকা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সোমবার শান্তিসেনা পাঠানোর দাবি তুললেন বিধানসভায়। অবশ্য জানা গিয়েছে, এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে কেন্দ্রীয় সরকারকে দরবার করতে বলা হয়েছে যাতে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: দাম কমিয়ে আদানি’র থেকেই বিদ্যুৎ কিনতে চায় বাংলাদেশ?
সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একটা বিষয় নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। বাংলাদেশে যে ঘটনা ঘটছে। এটা কেন্দ্রের বিষয়। কিছু দিন আগে ৭৯ জন ম়ৎস্যজীবিকে বাংলাদেশের জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভারত সরকারকে জানিয়েছি। আমরা আইনজীবী দিয়েছি। আজও তারা ছাড়া পায়নি। আজ অনেকের পরিবার আছে ওপারে। অফিসিয়াল পাসপোর্ট হোল্ডার। তৃণমূলের নীতি আন্তজার্তিক স্তরের বিষয় কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী চলে। ধর্ম, বর্ণ যদি অত্যচারিত হয় তা নিন্দনীয়। আমাদের পরিবার যাতে অত্যাচারিত না হয় তা কেন্দ্রীয় সরকার দেখুক। এরকম যদি চলতে থাকে আমরা চাই লোকসভায় অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সরকার (প্রধানমন্ত্রী না হলে বিদেশমন্ত্রী) বিবৃতি দিক। আমরা আমাদের লোককে ফিরিয়ে আনতে চাই। আমাদের থাকা খাওয়ার অসুবিধা হবে না। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি এক। বাংলায় কথা বলাটা অপরাধ নয়। দিল্লিতে বা়ংলায় কথা বললে অনেক সময় হেনস্তা হতে হয়।
উল্লেখ্য, গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের ছেড়ে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হতে হয় সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তারপর থেকে সেখানে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ছবি সামনে এসেছে। সংখ্যালঘুদের বাড়ি ভাঙচুর, মারধর, মিথ্যা মামলা দেওয়া সহ একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। বাংলাদেশে শান্তির নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে একের পর সংখ্যালঘু অত্যাচারের ছবিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মহল। প্রতিবেশী ভারত বারবার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারপর গত সোমবার ইসকনের প্রাক্তন সদস্য সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির পর তা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কলকাতা সহ রাজ্য ও দেশ-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পথে নেমেছেন। এদিকে, বাংলাদেশ থেকে অনেকেই ভারতে চলে আসতে চাইছেন। সীমান্ত থেকে তাঁদের ফেরত যেতে হচ্ছে। তবে এদিন ‘আমরা আমাদের লোককে ফিরিয়ে আনতে চাই। আমাদের থাকা খাওয়ার অসুবিধা হবে না। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি এক’-এই বক্তব্যে ঠিক কী বলা হয়েছে তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার কথাই বলা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
দেখুন অন্য খবর: