হুগলি: প্রায় ৫০০ বছর আগে সিঙ্গুরের ডাকাতকালি মন্দির (Dakat Kali Puja) ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস। বৈদ্যবাটী-তারকেশ্বর রোডের পাশে পুরুসোত্তমপুর এলাকায় এই ডাকাতকালী মন্দির। হাওড়া-তারকেশ্বর শাখার সিঙ্গুর রেলস্টেশনে নেমে হেঁটে অথবা টোটোয় চেপে মন্দিরে আসা যায়। প্রতিদিন হয় নিত্য পুজো। কথিত আছে অসুস্থ রামকৃষ্ণকে দেখতে মা সারদা কামারপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বর যাচ্ছিলেন যাওয়ার পথে রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত মায়ের পথ আটকে দাঁড়ায় ডাকাতির উদ্দেশ্যে। সেই সময় রক্ত চক্ষু মা কালির মুখ দেখতে পায় ডাকাতরা। ভুল বুঝতে পেরে মা সারদার কাছে ক্ষমা চায় ডাকাতদল।
সন্ধ্যা নামায় সেই রাতে ডাকাতদের আস্তানায় মা সারদাকে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় ডাকাতরা। মা সারদাকে রাতে খেতে দেওয়া হয় চালকড়াই ভাজা। সেই রেওয়াজ মেনেই আজও কালিপুজোর দিনে মায়ের প্রসাদ হিসাবে চালকড়াই ভাজা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও কালীপুজোর দিন লুচি ভোগ, ফল দেওয়া হয় পুজোর নৈবিদ্যে। সরস্বতী নদীর পাশে জনমানব শূন্য জঙ্গলে ডাকাতরা মাটির কুড়ে ঘর বানিয়ে ঘট পুজো করতো ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে। আগে নরবলি হত। পরে বর্ধমানের রাজার দান করা জমিতে সিঙ্গুর চালকে পার্টির গ্রামের মোড়লরা এই মন্দিরটি তৈরি করে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা সত্ত্বেও কাজলকে না ডেকে অনুষ্ঠান অনুব্রতর?
মন্দিরের পুরোহিত সুভাষচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় বলেন, কালি পুজোর দিন চার প্রহরে চার বার পুজো ও ছাগ বলি হয়। মল্লিকপুর গ্রামে এই ডাকাতকালী মন্দির থাকার কারণে আশেপাশের জামিনবেরিয়া, পুরসোত্তমপুর ও মল্লিকপুর গ্রামে কোনো বাড়িতে কালীপুজো (Kali Puja 2024) হয়না। এমনকি কারও বাড়ির দেওয়ালে টাঙানো থাকেনা ক্যালেন্ডারে আঁকা কালীমূর্তির ছবি। বছরে একবার কালীপুজোর দিন গ্রামের ‘শুদ্রদের’ আনা গঙ্গাজলে ঘটের জল পাল্টানো হয়। ঘটের জল পাল্টানোর সময় মন্দিরের দরজা বন্ধ করে রাখা হয়। সেইসময় মহিলাদের মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ নিষেধ থাকে।
মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক মদন মোহন কোলে বলেন, আগে ডাকাতরা মাটির কুঁড়ে ঘর বানিয়ে মা কালীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করে। পরে বর্ধমানের রাজা মন্দির তৈরির জন্য জমি দান করেছিলেন। পরবর্তীতে সপ্নাদেশ পেয়ে সিঙ্গুর থানার চালকেবাটি গ্রামের মোড়লরা এই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। কালি পুজোর দিন মোড়ল দের পূজোর পর অন্য ভক্তদের পুজো শুরু হয়।
অন্য খবর দেখুন