কলকাতা: কেউ ভোটে হেরে রাজ্য নেতৃত্বকে দুষছেন, কেউ জিতলেও জয়ের মার্জিন কমায় রাজ্য নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন, আবার কেউ হেরে গিয়ে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, অন্তর্ঘাতকে দায়ী করছেন। লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর চুম্বকে এটাই রাজ্য বিজেপির বর্তমান। এই প্রার্থীরা খোলাখুলিই সংবাদমাধ্যমের কাছে উজাড় করে দিচ্ছেন নিজেদের ক্ষোভের কথা। সরকারি ভাবে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব এসবের কোনও যুতসই জবাব খুঁজে পাচ্ছেন না, কেউ জবাব দেওয়ার দায়ও নিচ্ছেন না। প্রচার পর্বে যে সব চেয়ে বেশি আগ্রাসী ছিলেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে, সেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কার্যত খোঁজ মিলছে না প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্য। তিনি এবং রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder,) এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ডাকে দিল্লিতে।
ভোটে হেরে রাগে ফুঁসছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghose)। মেদিনীপুর থেকে তিনি গত লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন। সেই জেতা আসন থেকে তাঁকে দল বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে নিয়ে যায়। অচেনা মাঠে তাঁকে এবার খেলতে হয়েছে। দিলীপের দাবি, গত পাঁচ বছর ধরে তিনি মেদিনীপুরে পড়ে থেকেছেন। সংসদীয় কেন্দ্র নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন। তাঁকে চক্রান্ত করে হারানো হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, দল চালাচ্ছে এক শ্রেণির দালাল। ক্ষুব্ধ দিলীপ জানান, চার বছর ধরে দলের কোনও কর্মসূচিতে তাঁকে ডাকা হয় না। তিনি নিজের মতো করে দলের কাজ করেন।
আরও পড়ুন: এনডিএ সরকার বেশিদিন থাকবে না, ভবিষ্যদ্বাণী মমতার
হুগলি কেন্দ্রে তৃণমূলের রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হেরেছেন গত লোকসভা ভোটে জয়ী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তিনিও হার নিয়ে তাঁর ক্ষোভ গোপন করেননি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তাঁর ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন।
গতবারের তুলনায় খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে দ্বিতীয়বার জয়ী হয়েছেন সৌমিত্র খান। তাঁরও অভিযোগ, রাজ্যে দলের মাথায় অযোগ্য নেতারা বসে রয়েছেন। তাঁদের দল চালানোর কোনও যোগ্যতাই নেই। সৌমিত্র হারিয়েছেন তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা খান মণ্ডলকে। সদ্য জয়ী বিজেপি প্রার্থী তাঁর প্রাক্তন নেতা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishik Banerjee) প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। তিনি বলেন, অভিষেক যেভাবে গুছিয়ে ডায়মন্ড হারবারে ভোট করেছেন, তাঁর থেকে বিজেপি নেতাদের অনেক কিছু শেখার আছে। সৌমিত্রের এমনও দাবি, তিনি তৃণমূলে থাকলে অন্তত দেড় লাখ ভোটে জয়ী হতেন। থেমে নেই সদ্য রাজনীতিতে আসা কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী সেখানকার রাজ পরিবারের সদস্য রানিমা অমৃতা রায়ও। রানিমার অভিযোগ, তাঁকে ভুল বুঝিয়ে রাজনীতিতে নামানো হয়েছে। তিনি জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনেছেন।
সব মিলিয়ে জয়ী, পরাজয়ী প্রার্থীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভে রীতিমতো দিশাহারা রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। তার মধ্যেই খোদ অভিষেক দাবি করেছেন, বিজেপির তিন সাংসদ ইতিমধ্যে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বিজেপির অন্দরেও চর্চা চলছে, সৌমিত্র, লকেট, দিলীপ তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন। সৌমিত্রের মুখে অভিষেকের প্রশংসা সেই জল্পনায় আরও ইন্ধন যুগিয়েছে। কট্টর সঙ্ঘের লোক দিলীপ তৃণমূলে যাবেন কি না, সেটা লাখ টাকার প্রশ্ন। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে কী করব, তা ঠিক সময়ে সকলকে জানিয়ে দেব। সৌমিত্র, লকেট তৃণমূলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে কোনও ইঙ্গিত না দিলেও তাঁদের ঘিরে চর্চা কিন্তু থামছে না।
অন্য খবর দেখুন