কলকাতা: পৃথিবী কবে ধ্বংস হবে? এই বিষয়টি নিয়ে অনেকের মনে কৌতূহল রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে অনেক সম্ভাবনার তত্ত্ব, যা নিয়ে একাধিক কল্পবিজ্ঞানের সিনেমাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু তারপরেও এই প্রশ্নের কোনও সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে এবার পৃথিবী থেকে মানবজাতির বিলুপ্তি নিয়ে এক ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এল। সম্প্রতি, ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টলের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ডক্টর আলেকজান্ডার ফার্নসওয়ার্থের নেতৃত্বে এই বিষয়ক একটি গবেষণা চালানো হয়েছে, যার ফলাফল ‘নেচার জিওসায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণা পত্রে বলা হয়েছে, পৃথিবীর মহাদেশগুলি দিন দিন একে অপরের দিকে সরে আসছে বা ড্রিফট করছে। এভাবে একদিন সব মহাদেশ মিলিত হয়ে একটি নতুন সুপারকন্টিনেন্ট তৈরি করবে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্যাঞ্জিয়া আলটিমা’। আর সেটা হলেই ধ্বংস হবে মানবকূল। কিন্তু কীভাবে এই ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এল? চলুন এই গবেষণার বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টলের বিজ্ঞানীরা একটি সুপার কম্পিউটার ক্লাইমেট মডেল ব্যবহার করে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে এই নতুন মহাদেশীয় গঠন পৃথিবীর জলবায়ুতে বিশাল পরিবর্তন আনবে। এর প্রভাবে অধিকাংশ প্রাণীর পক্ষে পৃথিবীতে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। জলবায়ুর এই পরিবর্তনের নেপথ্যে তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে। সেগুলি হল – উপমহাদেশীয় প্রভাব, বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি। তবে, এই সুপারকন্টিনেন্ট তৈরি হলে, অধিকাংশ স্থলভাগ সমুদ্রের প্রভাব থেকে অনেক দূরে থাকবে। এর ফলে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাবে। এই প্রক্রিয়াটিকেই উপমহাদেশীয় প্রভাব বলা হয়। এটা হলে মহাদেশের কেন্দ্রস্থলে কোনও জলাধার না থাকায় পরিবেশ অত্যন্ত গরম হয়ে উঠবে। পাশাপাশি, কয়েক মিলিয়ন বছরে সূর্য আরও উষ্ণ এবং উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, পৃথিবীতে আরও বেশি আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাবে এবং আরও বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হবে। ডক্টর ফার্নসওয়ার্থের মতে, এই প্রক্রিয়ার ফলে বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। এই উষ্ণায়নের ফলে অন্যান্য অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির সম্মুখীন হবে।
আরও পড়ুন: মহাকাশে কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট পাঠাল জাপান! কারণ জানলে অবাক হবেন
যদিও এর আগে পাঁচবার পৃথিবীতে এমন গণবিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে। প্রথমটি ছিল অর্ডোভিসিয়ান-সিলুরিয়ান বিলুপ্তি যা ৪৪৩ মিলিয়ন বছর আগে ঘটে, এতে ৮৫ শতাংশ সামুদ্রিক জীবন বিলুপ্ত হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় ঘটনা, লেট ডেভোনিয়ান বিলুপ্তি, যা ৩৬০ মিলিয়ন বছর আগে ঘটে এবং এতে পৃথিবীর ৭৫ শতাংশ জীব ধ্বংস হয়েছিল। তৃতীয় ঘটনা পার্মিয়ান-ট্রায়াসিক বিলুপ্তি, যা ‘দ্য গ্রেট ডাইং’ নামে পরিচিত। এটি ২৫২ মিলিয়ন বছর আগে ঘটে। এরপর ট্রায়াসিক-জুরাসিক বিলুপ্তি ঘটে ২০০ মিলিয়ন বছর আগে। তখন পৃথিবীর ৫০ শতাংশ জীব ধ্বংস হয়েছিল। শেষ গণবিলুপ্তি হল ক্রেটাসিয়াস-প্যালিওজিন বিলুপ্তি, যা ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ঘটে যখন একটি বিশাল গ্রহাণুর আঘাতে বর্তমান মেক্সিকোর চিচকুলুব গহ্বর তৈরি হয় এবং এতে সমস্ত ডাইনোসরসহ ৭৫ শতাংশ জীব বিলুপ্ত হয়ে যায়।
দেখুন আরও খবর: