পূর্ব বর্ধমান: রাস্তা তৈরি (Road Dispute) নিয়ে পারিবারিক বিবাদ। ঘটনার জল গড়াল সামাজিক বয়কটের দিকে! হ্যাঁ শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি। এমনই ঘটনাায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল বর্ধমানের (Burdwan) মেমারি (Memari ) পুরসভার ১৫ নং ওয়ার্ড এলাকা। দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল। অভিযোগ, রাস্তা তৈরি নিয়ে বিবাদের মাঝে তৃণমূল কাউন্সিলর (Councilor) হস্তক্ষেপ করেন। স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ তাতে হস্তক্ষেপ করে একটি পরিবারকে রাস্তা তৈরি করতে দেওয়ার নিদানও দেয়। ওই পরিবারের লোকজন তা মানতে না চেয়ে আইনের দ্বারস্থ হন। আর তাতেই শাসকদলের স্থানীয় নেতারা তা মেনে নিতে পারেনি বলে অভিযোগ। এরপরই ওই পরিবারকে সামাজিক বয়কটের ডাক দিয়েছে। এমনকি এলাকায় মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে কেউ ওই পরিবারকে কোন রকম সহযোগিতা না করে। এমনটাই অভিযোগ বয়কট (Boycott) হয়ে থাকা পরিবারের।
ক্যালেন্ডারের পাতা জানান দিচ্ছে ধান কাটার মরশুম চলছে এখন। কোনও শ্রমিক ওই পরিবারের জমিতে কাজ করতে পারবেন না বলে ফতোয়াও দেওয়া হয়েছে শাসকদলের পক্ষ থেকে। ফলে জমির ধান জমিতেই পরে আছে। শ্রমিকরা ভয়ে কাজ করতে আসছে বলে জানান পরিবারের লোকজন । এমনকি এলাকার বাসিন্দাদের তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেও নিষেধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ।
সামাজিক বয়কট হয়ে থাকা ওই পরিবারের সদস্য সেলিমা বেগম বলেন, আমাদের জায়গার উপরে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছিল। আমরা তা মানতে চাইনি। সেই কারণে আমাদের উপর আগেও আক্রমণ করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী আমাদের বাড়িতে এস চড়াও হয়ে হুমকি দেয়,অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। প্রতিবাদ করলে এমনকি আমাদের মারধর করা হয়। আমাদের পরিবারও তৃণমূল সমর্থক। তারপরও আমাদের সঙ্গে এমন করা হচ্ছে। স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর কাশ্মীরা খাতুন সেখ ও তার স্বামী সুরমান আলির নেতৃত্বে করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর থেকে চরম আতঙ্কে আছে তাদের পরিবার। সেলিমা বেগমের স্বামী সেখ আজিজুল হক বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঝামেলায় নেতারা অকারণে মাথা ঘামাচ্ছে। যাদের জন্য রাস্তা তৈরি হচ্ছে তারা কাউন্সিলরের অনুগামী তাই কাউন্সিলর তার দলবল নিয়ে এসে ফতোয়া জারি করেছে। কাউন্সিলরের অনুগামীরা খুন করার হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন আজিজুল।
আরও পড়ুন: ছটপুজো নিয়ে প্রশাসনিক তৎপরতা আলিপুরদুয়ারে
যে পরিবারের সঙ্গে আজিজুলের জমি সংক্রান্ত বিবাদ চলছে সেই পরিবারের সদস্য সবুর আলি সেখ বলেন, ওই পরিবারটির সঙ্গে গ্রামের কারও সম্পর্ক ভালো নয়। তাঁদের বাড়ির পাশ দিয়ে একটি রাস্তা গিয়েছে। আমাদের সঙ্গে সমস্যা হওয়ার জন্য তিনি রাস্তাটি কেটে দেন। তা নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য বলেছিলাম। ওঁরা আমাদের কথার গুরুত্ব দেননি। উল্টে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই পরিবারের বিরুদ্ধে গোটা পাড়ার লোকজন বীতশ্রদ্ধ। তবে কেউ সামাজিক বয়কট করেনি।
ঘটনার প্রসঙ্গে মেমারির তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানোয়ার হোসেন মণ্ডল বলেন, শাসকদলের কাউন্সিলরের দ্বারা এই ধরনের ঘটনা খুবই লজ্জাজনক এবং অন্যায় কাজ। ওই পরিবার তৃণমূলের সমর্থক, মিটিং মিছিলে যায়। আমি বিষয়টি দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছি বলে জানান মানোয়ার হোসেন। যদিও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেমারি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাশ্মীরা খাতুন সেখ। তার বক্তব্য, ওই পরিবারকে একাধিক বার রাস্তার সমস্যা মেটানোর জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই পরিবার কোন ভাবেই আলোচনায় বসতে রাজি হয়নি। রাস্তার সমস্যার জন্য পিছনের বাড়ি গুলির অসুবিধা হচ্ছিল, আমরা রাস্তা করে দিয়েছি। তবে সামাজিক বয়কটের বিষয়টি অস্বীকার করেন কাউন্সিলর।
জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, স্থানীয় দুই পরিবারের মধ্যে গণ্ডগোল আছে শুনেছি। তারা আইনের আশ্রয় নিয়েছে এর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোন সম্পর্ক নেই। তৃণমূল কংগ্রেস কাউকে সামাজিক বয়কট করে না।
আরও অন্য খবর দেখুন