জেরুজালেম ও বেইরুট: প্যালেস্তিনীয় (Palestinian) হামাস (Hamas) বাহিনীর উপর প্রত্যাঘাতের সঙ্গে সঙ্গেই লেবাননেও হামলা শুরু ইজরায়েলের (Israel)। ইরানের মদতপুষ্ট লেবাননের (Lebanon) হিজবুল্লা (Hezbollah) বলেছে, তারা ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হেনেছে। জবাবে লেবাননেও হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল। ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী একথা জানিয়েছে।
ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, ইজরায়েলের ভূখণ্ডে লেবানন থেকে কিছুক্ষণ আগে গুলি চালানোর পর থেকে তারা লেবাননে ক্ষেপণাস্ত্র হানা চালাচ্ছে। এর আগে লেবানন থেকে ইজরায়েলে হামলা চালানো হয়েছে।
লেবানন থেকে ছোড়া মর্টার শেল আঘাত হেনেছে ইজরায়েলের সামরিক ঘাঁটিতে।
আরও পড়ুন: ইজরায়েলে যুদ্ধে আটকে বলিউড অভিনেত্রী
আজ, রবিবার লেবানন থেকে ইজরায়েলের উত্তরাঞ্চলের দিকে মর্টার ছোড়ার খবর দিয়েছে ইজরায়েলি বাহিনীর রেডিও। লেবানন থেকে ছোড়া সেই গোলা শেবা ফার্মসে অবস্থিত ইজরায়েলি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
ইজরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, লেবাননের যেখান থেকে এসব গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে সেই এলাকায় পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল।
ইজরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে লেবাননের সেই এলাকায় আক্রমণ করছে, যেখান থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়েছিল। আইডিএফ এই ধরনের আক্রমণের জন্য প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং ইজরায়েলি সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত অঞ্চলে এবং প্রয়োজনে যে কোনও সময়ে কাজ চালিয়ে যাবে। ইজরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ লেবাননের কাফার শুবার আশপাশের এলাকা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তবে ইজরায়েলি কামানের গোলাবর্ষণের পর লেবাননের পক্ষে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, ইজরায়েলি বাহিনী এবং প্যালেস্তাইনের যুদ্ধ (Israel-Palestine War) রবিবার আরও তীব্র হয়েছে। এ পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, দুপক্ষের অন্তত ৫০০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহুর (PM Benjamin Netanyahu) প্যালেস্তানীয় ঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি এবং দীর্ঘ লড়াইয়ের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও সঙ্কটজনক হয়েছে।
ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন যুদ্ধের তাজা খবর
১। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের (Israel-Palestine War) মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে। গত শনিবার হামাস বাহিনী ভূমি, জল এবং আকাশপথে আচমকা আঘাত হানে। যার ফলে ইজরায়েলের দাবিমতো তাদের ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন হাজারখানেক। গাজা (Gaza) ভূখণ্ডের প্রশাসন জানিয়েছে, ইজরায়েলের প্রত্যাঘাতে তাদের ২৩২ জনের মৃত্যু এবং ১৭০০ জন আহত হয়েছেন।
২। ইজরায়েলের পক্ষে কালাদিবস বলে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানইয়াহু। হামাসকে ধ্বংস করতে ইজরায়েলি সেনা সর্বশক্তি ব্যবহার করবে। আমরা তাদের ভয়ঙ্কর শিক্ষা দেব, যাতে হামাস আর মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারে।
৩। গাজার কাছাকাছি যে সমস্ত হামাসের পিছনে প্যালেস্তিনীয়রা রয়েছেন, তাঁদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নেতানইয়াহু। কারণ, হুমকি দিয়ে বলেছেন, ওদের সমস্ত ঘাঁটি এবার ধুলো করে দেবে ইজরায়েলি বাহিনী। তাঁর কথায়, গাজায় বসবাসকারী সকলকে সরে যেতে বলছি। কারণ এখন থেকে আমাদের সব বাহিনী পূর্ণ শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
৪। গাজায় একের পর এক বিমান হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল। ইজরায়েলি সেনাবাহিনী অবরুদ্ধ গাজার সাতটি এলাকার বাসিন্দাদের ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলেছে।
৫। গাজায় অনেক পরিবার ঘর ছেড়ে পালানো শুরু করেছে। তারা রাষ্ট্রসঙ্ঘ পরিচালিত স্কুলগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে।
৬। সামাজিক মাধ্যম এক্সে গাজাবাসী ইজরায়েলের বিমান হামলার বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ইজরায়েল নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে। ইজরায়েলি সেনাবাহিনী এখনও গাজায় বোমা ফেলছে। আজ, রবিবার সকালে ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র আল জাজিরাকে বলেছেন, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বন্দুকধারীদের সঙ্গে ইজরায়েলি বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। ইজরায়েলের পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
৭। হামাসের নেতারা বলেছেন, গাজায় শুরু হওয়া হামলা দখলিকৃত পশ্চিম উপসাগর ও জেরুজালেমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৮। গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা শনিবার সারা রাত অন্ধকারে কাটিয়েছেন। ইজরায়েলি বাহিনী গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ঘনবসতি–অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করছে। এসব হামলার পাল্টা জবাবে রকেট ছুড়ছে হামাস। তবে সেগুলোর বেশিরভাগই মাঝ আকাশে প্রতিহত করা হয়েছে।
৯। ইজরায়েল নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে প্যালেস্তানীয় সংগঠন হামাসের রকেট হামলাকে জঙ্গি হামলা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। তিনি বলেছেন, এ কঠিন সময়ে আমরা ইজরায়েলের পাশে আছি। মোদি লিখেছেন, ইজরায়েলে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার খবর শুনে গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছি। এই কঠিন সময়ে আমরা ইজরায়েলের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি, পাশে আছি।
১০। ইজরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় হামাস মাত্র ২০ মিনিটে ৫ হাজারের বেশি রকেট ছোড়ে। ইজরায়েলে চালানো এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’। একই সঙ্গে ইজরায়েলে আবার সক্রিয় হয় ‘আয়রন ডোম’। ‘আয়রন ডোম’ বিশ্বের অন্যতম সেরা ও অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। হামাসের ছোড়া রকেট মাঝ আকাশে ধ্বংস করতে থাকে ইজরায়েলের ‘আয়রন ডোম’। তবে এবার হামাসের রকেট হামলার মাত্রা ছিল নজিরবিহীন। তাই গাজা থেকে ছোড়া অনেক রকেট ইজরায়েলের আয়রন ডোমের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়। এ কারণে ইজরায়েলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে।
দেখুন অন্য খবর