কলকাতা: সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) রায়ে যেন বজ্রাঘাত হয়েছে হুগলির রিষড়ার এক নবদম্পতির জীবনে। ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৯ সালে একসঙ্গে সরকারি শিক্ষকতার চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা। তবে সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে সেই নিয়োগপত্র বাতিল হওয়ায় কার্যত পথে বসেছেন ওই দম্পতি।
স্বামী কুণাল মণ্ডল ছিলেন রিষড়া বিদ্যাপীঠের সহকারী শিক্ষক এবং তাঁর স্ত্রী উত্তরবঙ্গের এক স্কুলে অ্যাসিস্ট্যান্ট শিক্ষিকা পদে কর্মরত ছিলেন। চাকরি পেয়ে বিয়ে, তারপর একসঙ্গে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা—সবই ছিল ছকে বাঁধা। সংসারের স্বপ্নপূরণে ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে শুরু করেছিলেন নতুন জীবন। কিন্তু চাকরি হারানোর খবরে যেন ভেঙে পড়েছে সব কিছু। এখন মাথায় কেবল ঋণের চাপ আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয়।
আরও পড়ুন: অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বৃষ্টি! আর কোন উপায়ে কমবে দিল্লির দূষণ?
কুণাল বলেন, “আমরা দু’জনেই শিক্ষকতা করতাম। চাকরি পাওয়ার পর বিয়েটা হয়। সংসার গড়ার স্বপ্নে বাড়ির জন্য লোন নিই। এখন দু’জনেরই চাকরি বাতিল, পথে বসে গেছি। ব্যাঙ্ক তো আমাদের কাহিনি শুনে ঋণ মাফ করবে না। আবার নতুন করে পরীক্ষা দেওয়ার কথা আদালত বললেও, সেই মানসিক প্রস্তুতি এখন আর নেই।”
এই রায় শুধু এই দম্পতিই নয়, গোটা রিষড়া বিদ্যাপীঠ স্কুলকেও নড়বড়ে করে দিয়েছে। হিন্দি মাধ্যম এই স্কুলে প্রায় ২০০০ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। ১৯ জন শিক্ষকের মধ্যে ১২ জনের চাকরি বাতিল হয়ে গেছে। বাকি মাত্র ৭ জন শিক্ষক। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ার মুখে।
প্রধান শিক্ষক রোশন কুমার মাল বলেন, “স্কুল প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। এত বড় ক্ষতির মুখে পড়ব ভাবিনি। ওয়েবসাইটে নাম না থাকা সত্ত্বেও আমাদের স্কুলের বহু শিক্ষকের চাকরি চলে গেল। আমি নিজেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সহকর্মীরা আমার পরিবারের মতো ছিল। এই রায় শিক্ষাক্ষেত্রে অন্ধকার নামিয়ে আনল।”
একদিকে কর্মহীনতা, অন্যদিকে ঋণের বোঝা আর মানসিক যন্ত্রণায় বিপর্যস্ত বহু পরিবার। আদালতের রায় যে কতটা গভীরভাবে মানুষকে নাড়া দিয়েছে, তার প্রতিচ্ছবি রিষড়ার এই ঘটনা।
দেখুন আরও খবর: