নয়াদিল্লি: ‘প্রিয়াঙ্কা নেহি ইয়ে আঁধী হ্যায়, দুসরি ইন্দিরা গান্ধী হ্যায়’-এর অর্থ, প্রিয়াঙ্কা নয় এটা ঝড়, দ্বিতীয় ইন্দিরা গান্ধী। প্রিয়াঙ্কা (Priyanka Gandhi Vadra) রোডশো করলে জনতার ভিড় থেকে এই আওয়াজই ওঠে। বৃহস্পতিবার সংবিধান হাতে শপথ নিয়ে সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করলেন গান্ধী পরিবারের নবতম সংযোজন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র। স্বয়ং ইন্দিরা গান্ধীই (Indira Gandhi) বলে গিয়েছিলেন, প্রিয়াঙ্কাই হবেন তাঁর উত্তরসূরি। কংগ্রেসের এই সঙ্কটকালে ইন্দিরা গান্ধী কি হতে পারবেন প্রিয়ঙ্গা গান্ধী ভদ্র? কী বলেছিলেন ইন্দিরা? ‘মানুষ তাঁকে দেখে আমাকে মনে রাখবেন। তাঁর হাতেই শতাব্দীর ভার থাকবে’। দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস রাজনীতির নেপথ্য নায়ক হয়ে মা সোনিয়া গান্ধী ও দাদা রাহুল গান্ধীর নির্বাচনী কেন্দ্র, প্রচার সামলেছেন। উত্তরপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসের ক্রাইসিস ম্যানেজারের ভূমিকা পালন করেছেন। এবার সরাসরি সংসদীয় রাজনীতিতে ফ্রন্টফুটে নামলেন প্রিয়াঙ্কা। মুখের আদল, বাচনভঙ্গী, ক্রাইসিস ম্যানেজারের ভূমিকায় অনেকেই ইন্দিরার সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার মিল পান। কংগ্রেস নেতা এমএল ফোতেদার তাঁর বইয়ে লেখেন, ইন্দিরা গান্ধী ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে তাঁর মৃত্যুর মাত্র দু’দিন আগে তাঁকে বলেছিলেন, তিনি বেশি দিন বাঁচবেন না। প্রিয়াঙ্কাকে কংগ্রেসের লাগাম নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হবে। জনতা পার্টি দেশের ক্ষমতায় থাকার সময় ছোট্ট প্রিয়াঙ্কা তাঁর মা সোনিয়ার সঙ্গে ইন্দিরাকে জেলে দেখতে যেতেন। ইন্দিরার খুনের পরে ফোতেদার রাজীব এবং সোনিয়া উভয়কেই ইন্দিরা গান্ধীর তাঁকে বলা সেকথা জানিয়েছিলেন।
প্রিয়াঙ্কা শুধু তাঁর ঠাকুরমা ইন্দিরার চেহারাই উত্তরাধিকার সূত্রে পাননি। ইন্দিরার রাজনৈতিক দক্ষতা, বক্তব্য পেশের ভঙ্গী, জনমোহিনী ভূমিকায় তাঁর মিল রয়েছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত। ইন্দিরাকে ক্ষমতা ধরে রাখার কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বেশি সামলাতে হয়েছিল। সেই ভূমিকায় না হলেও উত্তরপ্রদেশে গত লোকসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট গড়ে সাফল্য পাওয়ার কাণ্ডারী অনেকে বলেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি রাজস্থান, ছত্তিশগড় এবং হিমাচল প্রদেশের সঙ্কট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংয়ের পরিবারের সদস্য এবং অনুগতরা বিদ্রোহ করার পরে প্রিয়াঙ্কা সুখবিন্দর সিং সুখুকে পতন থেকে রক্ষা করেছিলেন।
আরও পড়ুন: মুম্বই দখলে রাখতে চান উদ্ধব, বিধানসভায় হেরে কংগ্রেসের সঙ্গ ছাড়বেন?
কী কী মিল আছে ইন্দিরা ও প্রিয়াঙ্কার মধ্যে?
ইন্দিরা গান্ধীকে ১৯৫২ সালে ভারতের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস ইউনিটের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু, ছোট্ট রাজীব ও সঞ্জয় গান্ধীর দেখভালের জন্য সেই দায়িত্ব নেননি। বরং কংগ্রেসের ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করেছিলেন। নেপথ্যে কাজ করেছিলেন। তার ১৫ বছর পরে ১৯৬৭ সালে নির্বাচনে নেমে ঝড় তোলেন ইন্দিরা। একইভাবে প্রিয়াঙ্কাও সন্তানের কথা ভেবে অনেক পরে সরাসরি রাজনীতিতে আসেন। ১৯৯৮ সালের ১১ জানুয়ারি। তামিলনাড়ুর শ্রীপেদুমবুরুরে রাজনীতিতে নেমে প্রথম মিছিল করেছিলেন সোনিয়া গান্ধী। সেখানে তাঁর পাশে আলো করেছিলেন ২৬ বছরের প্রিয়াঙ্কা। জনতাকে সম্বোধন করে প্রিয়াঙ্কা সেদিন বলেছিলেন, আপনারা কংগ্রেসকে ভোট দিন। পাল্টা জনতা চিৎকার করে বলেছিল, ‘আমাদের ভবিষ্যতের নেত্রী’। লেখক রশিদ কিদোয়াই তাঁর বইয়ে একথা উল্লেখ করেছেন। দীর্ঘদিন নেপথ্যে কাজ করে অবশেষে দাদা রাহুলের ছেড়ে যাওয়া কেরলের ওয়েনাড় থেকে উপনির্বাচনে ৪ লাখেরও বেশি ভোটে জিতে সংসদে প্রবেশ করলেন প্রিয়াঙ্কা। নির্বাচনে জিতেই প্রিয়াঙ্কা বলেছিলেন, ‘আমি আপনাদের কণ্ঠস্বর’। সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ নেওয়ার পরে প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, ‘প্রাধান্য হবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি উত্থাপন করা। আমাদের জন্য সংবিধানের ঊর্ধ্বে কিছু নেই। আমরা এর জন্য লড়াই চালিয়ে যাব’। লোকসভায় ৫৪৩ আসনের মধ্যে কংগ্রেস এখন প্রাপ্তি ১০১। দলে মাথার উপরে দাদা রাহুল গান্ধী, সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে ও মা সোনিয়া গান্ধী। দেশের কংগ্রেসকর্মী ও কৌতূহলীরা তাকিয়ে তাঁর দিকেই। আসমুদ্র হিমাচলে স্লোগান কি উঠবে? ইয়ে প্রিয়াঙ্কা নেহি আঁধী (ঝড়)….।
(বেশিরভাগ তথ্য, ছবি একটি জাতীয়স্তরের সংবাদমাধ্যম সূত্রে প্রাপ্ত)