পবিত্রি ত্রিবেদী
পাড়ায় দল বেঁধে ছুটে ছুটে খেলছে শিশুর (Children) দল। ঠিক পাখির কলতানের মতো কিচিরমিচির করতে করতে লুকোচুরি। নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে করতে বদমায়েশি করবি না বলে স্নেহের শাসন করছেন বড়রা। এসব তো এখন অনেকের স্মৃতিতে অতীতের পাতায়। ঠিক যেমন হারিয়ে যাচ্ছে মিঠে বিকেলগুলোও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্কুলে, টিউশনের জন্য পিঠে বইয়ের ভারী ব্যাগ বওয়া, কিংবা ‘এক্স্ট্রা কারিকুলার’ শিক্ষার অতিরিক্ত চাপে হাঁসফাঁস করা। ঘরবন্দি জীবনে বাকি সময় বিনোদন বলতে মোবাইলের স্ক্রিনে মুখ গোঁজা। এটাই কি এখন শৈশব? ফার্স্ট হওয়ার প্রতিযোগিতার জীবনে সাফল্যের কারিকুরি শেখাতে গিয়ে শৈশবকে অজান্তেই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না তো? থেমে যাচ্ছে না তো মানসিক বিকাশ? সমাজবদ্ধ জীবনের শিক্ষার পাঠ অনুভব করতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে না তো? বেড়ে ওঠার আনন্দ উপভোগের সুযোগ নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে না তো? কল্পনাপ্রবণ শিশু ‘অমল’ কি ‘দইওয়ালা’-কে খোঁজে না? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখনীতে ঘরবন্দি শিশু অমল দইওয়ালাকে জানালা দিয়ে বলেছিল, ‘আমি কক্খনো পণ্ডিত হব না। আমি তোমাদের রাঙা রাস্তার ধারে তোমাদের বুড়ো বটের তলায় গোয়ালপাড়া থেকে দই নিয়ে এসে দূরে দূরে গ্রামে গ্রামে বেচে বেচে বেড়াব। কী রকম করে তুমি বল, দই, দই, দই― ভালো দই। আমাকে সুরটা শিখিয়ে দাও।’ কিংবা কাজি নজরুল ইসলামের ভাষায় শিশুর ভাবনা, ‘আমি হব সকাল বেলার পাখি–সবার আগে কুসুম বাগে উঠব আমি ডাকি—সূর্য্যমামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে—‘হয়নি সকাল ঘুমো এখন’ মা-বলবেন রেগে’-সদ্য প্রস্ফুটিত কুঁড়িদের এই কল্পনা শক্তির বিকাশকে কোথাও থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে না তো? এই প্রশ্ন উদ্বিগ্ন মহলের।
আগামীকাল, বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস (Childrens Day)। ১৯৬৪ সালে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর (Jawaharlal nehru) মৃত্যুর পর তাঁর জন্মবার্ষিকী স্মরণে দেশ শিশু দিবস পালন করে। জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, “শিশুরা বাগানের কুঁড়ির মতো। তাদের যত্ন সহকারে এবং ভালবাসার সঙ্গে লালনপালন করা উচিত। কারণ তারা জাতির ভবিষ্যত এবং আগামী দিনের নাগরিক।”-একটি তথ্য অনুযায়ী এখন ভারতের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের বেশি শিশু। এদের হাতেই থাকবে আগামীর ভার। এরা বড় হচ্ছে নেট নির্ভর মোবাইলের ‘কৃত্রিম’ যুগে। প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত স্মৃতি হাতড়ে ছাত্রজীবনের কথা বলতে গিয়ে একটি ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, সেসময় মজার ছিল। যখন যে খুশি যে কোনও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্লাস করে নিতাম।
আরও পড়ুন: ঐতিহ্য মেনে শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীর মাঠে হতে চলেছে পৌষ মেলা
এক শিক্ষকের কথায়, মোবাইল ফোন নিঃসন্দেহে জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। প্রযুক্তির সুফল নিশ্চয় আছে, তবে মোবাইল ফোনের সম্ভাব্য ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলিকে মোকাবিলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে তা শিশুদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। যান্ত্রিক জীবনে মানসিক অসুস্থতায় ডাক্তারখানায় ভিড় বাড়ছে। এক বিশিষ্টজনের কথায়, আগে পাড়া, এলাকার অভিভাবকরাই শৃঙ্খলার পাঠ দিত। এখনতো দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে শিশুরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে প্রতিবেশী বয়ঃজ্যেষ্ঠর কাছেও। তাই শিশু দিবসের আগে সবার একটাই প্রার্থনা, শিশুর বিশ্ব সুন্দর হোক। এই ভাবনার দায়িত্ব নেওয়া হোক, ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
দেখুন অন্য খবর: