আলিপুর আদালতে বিচার চলছিল, তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল তিন মাসের মাথায়, তারপর আদালতে ট্রায়াল শুরু হয় এবং ১৮ মাসের মাথায় এক জঘন্য ধর্ষণ আর হত্যার অভিযোগে আসামীর ফাঁসির সাজা শোনালেন বিচারপতি। মঙ্গল গ্রহের খবর নয়, এই কলকাতার খবর, তদন্ত চালিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। সেদিন এক সাত বছরের বাচ্চা মেয়ের ওপর ওই নির্যাতন আর তার হত্যার ঘটনায় রাজপথ দখল হয়নি, না কোথাও কোনও প্রতিবাদী মিছিল হয়নি, কিন্তু তদন্ত হয়েছিল আর সেই তদন্তের ভিত্তিতেই বিচারক অপরাধীকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছেন। অর্থৎ কলকাতা পুলিশ পারে, এর আগেও বহু ঘটনায় কিনারা করেছে, অবশ্যই সারা পৃথিবীর পুলিশ যেমনভাবে রাজনৈতিক কত্ত্রিত্বের কাছে অসহায়, কলকাতা পুলিশ তার ব্যতিক্রম নয়, ইন ফ্যাক্ট কোনও এজেন্সিই নয়। আজ সিবিআই বা ইডি বা ইউনিয়ন গভর্নমেন্টের যে কোনও এজেন্সি যে তাদের পোষা কাকাতুয়া তা তো কোনও ধারণা নয়, তা বার বার সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকেরাও বলেছেন। কাজেই কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police) করলে বিলা আর সিবিআই (CBI) করলে লীলা এরকম ভাবার কোনও কারণ নেই। আর সেটার উদাহরণও হাতে নাতে, সেই ১২ তারিখে আর জি কর ধর্ষণ আর হত্যানিয়ে যা যা জানা গিয়েছিল, যে তথ্য বেরিয়ে এসেছিল, আজ পর্যন্ত তার বাইরে কোনও তথ্য সি বি আই এর হাতে আসেনি। সেটাই বিষয় আজকে,কলকাতা পুলিশ করলে বিলা, আর সি বি আই করলে লীলা?
২৬ মার্চ তিলজলা এলাকাতে একটি সাত বছরের মেয়ের হারিয়ে যাবার খবর আসে। এলাকাতে মানুষজন জড় হয়, মেয়েটি বাড়ির নোংরা আবর্জনা বাড়ির বাইরে ফেলে সামনের একটা দোকান থেকে দুধ আনতে গিয়েছিল, তারপর আর ফেরেনি। রেল লাইন অবরোধ শুরু হয়, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে, পুলিশ এসে সি সি টিভির সাহায্য নিয়ে এক বাড়ির চারতলা থেকে মেয়েটির ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করে, সারা দেহে ২৬ টা আঘাতের চিহ্ন ছিল। কলকাতা পুলিশ সেদিনেই অলোক কুমার সাও কে গ্রেফতার করে। সেদিনের সাব ইন্সপেক্টর ছিলেন মধুসূদন সরকার। চার্জশিট দেওয়া হয় ১৬ জুন এ, মানে তিন মাসের মাথায়, আদালতের সামনে চার্জ ফ্রেম করা হয় ২৪ জুলাই, ৪৫ জন সাক্ষীকে আনা হয়, তাদের সাক্ষ্য আর সেই জায়গা থেকে পাওয়া প্রমাণের ওপর দাঁড়িয়ে ১৮ মাসের মাথায় গতকাল বিচারক রায় দিলেন। হ্যাঁ কেবল এতাই নয় বহু ক্ষেত্রেই কলকাতা পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই তদন্ত করে দোষীদের ধরেছে, প্রমাণ জোগাড় করেছে, আদালতে তাদের শাস্তিও হয়েছে।
আরও পড়ুন: Aajke| আর ৫ শতাংশ, তাহলেই বিজেপি ক্ষমতায়?
সবক্ষেত্রে? না, কখনই নয়, রাজনৈতিক চাপ, বিরাট প্রভাবশালীদের চাপ তাদের ওপরে থাকে, আছেও, এ জামানাতে আছে, আগের জামানাতেও ছিল। শাসক পুলিশ আমলাদের ব্যবহার করে, করতে চায়। কিন্তু যদি কেউ লালবাজারে গিয়ে হাতে করে তাঁদের শিরদাঁড়া দিয়ে আসেন আর তারপরে সেই শিরদাঁড়ার অভাবেই সেই শিরদাঁড়ার প্রশ্ন নিয়ে সিজিও কম্পপ্লেক্স এ যাওয়ার সাহস যুগিয়ে উঠতে পারেন না, তাদের শিরদাঁড়া নিয়েও প্রশ্ন উঠবে বৈকি। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেষ করেছিলাম যে কলকাতা পুলিশ ২০২৩ এর ২৬ মার্চ ঘটে যাওয়া নারকীয় হত্যাকান্ডের অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নিয়ে যায়, সেই তদন্তের ভিত্তিতেই অপরাধীর ফাঁসির সাহা ঘোষণা করেছেন বিচারক। সাম্প্রতিক যে ঘটনায় দেশ আলোড়িত তার তদন্ত কলকাতা পুলিশ করলে কি এমন দ্রুত শাস্তি হত, নাকি সিবিআই ভরসা ?
আজ নয় পুলিশ প্রশাসনের হাত পা বেঁধে রেখে তাকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে তার সম্পর্কে মানুষের ধারনাকে বিষিয়েছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গাতে ক্ষ্মতায় থাকা রাজনৈতিক দল, আর সময়ে সময়ে কাজের স্বাধীনতা পেলেই কলকাতা পুলিশ তার দক্ষতাও দেখিয়েছে বার বার। কিন্তু অন্তত দুটো বড় মামলাতে দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাদেরকেই ভিলেন বানানো হয়েছে এবং দুবারই তার কারণ ১০০% রাজনৈতিক। প্রথমবার আমরা দেখেছিলাম রেজওয়ানুর আত্মহত্যা মামলার সময়ে, দ্বিতীয়বার এই তিলোত্তমা ধর্ষণ হত্যা মামলার সময়ে। কিন্তু আরও হতাশার ব্যাপার হল সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ এক এজেন্সি সিবিআই এর ওপর কিছু মানুষের বিরাট ভরসা, যাঁরা গরুচুরির মামলাও দাঁড় করাতে পারে না, তাদের উপরে এই ভরসার কারণ যে রাজনৈতিক তাও আমরা বুঝি। তাই বলতেই হয় কলকাতা পুলিশ করলে বিলা আর সিবিআই করলে লীলা, এই তামাশা বন্ধ হোক।