কলকাতা: আজ থেকে অনেক দিন আগের কথা। একটি হিমশৈল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে। তারপর থেকে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা দশক। এটি সমুদ্রের স্রোতে বিশাল পরিবর্তন ঘটায়। এমন ঘটনা শেষবার বরফ যুগে ঘটেছিল। সেই সময় উত্তর আমেরিকার লরেন্টাইড থেকে ভেঙে গিয়েছিল অনেক আইসবার্গ। এই ঘটনা ‘হেনরিক ইভেন্ট’ নামে পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক সময়ের এই ঘটনা নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। এর কারণ হল গ্লোবাল ওয়ার্মিং। মানুষের কার্যকলাপের কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি হয়। এর প্রভাবেই হয় জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ঘটনা। এর ফলে মেরু অঞ্চল এবং হিমবাহের বরফ দ্রুত গলছে। এই ঘটনা একদিকে পৃথিবীর অতীতের বরফ যুগের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত, অন্যদিকে এটি ভবিষ্যতে মানব সভ্যতার জন্য সম্ভাব্য বিপদ সংকেত বহন করছে।
বরফ যুগ ছিল পৃথিবীর এমন একটি সময়কাল, যখন বিশ্বের একটা বৃহৎ অংশ স্থায়ীভাবে বরফে আবৃত ছিল। সর্বশেষ বরফ যুগ প্লেইস্টোসিন যুগ নামে পরিচিত। এই যুগ প্রায় ২.৫৮ মিলিয়ন বছর আগে শুরু হয় এবং প্রায় ১১,৭০০ বছর আগে শেষ হয়। এর প্রধান কারণ ছিল পৃথিবীর অক্ষের কৌণিক পরিবর্তন, সৌর বিকিরণ পরিবর্তন এবং মহাসাগরের কার্বন ডাই অক্সাইড চক্র। বরফ যুগে হিমশৈল এবং বরফের প্রলেপ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১২০ মিটার পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। এর ফলে গড়ে ওঠে নতুন ভূমি অঞ্চল এবং জীববৈচিত্র্যের নতুন বণ্টন। তবে এখন গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে মেরু অঞ্চলের বরফের চাদর ক্রমাগত পাতলা হয়ে যাচ্ছে। তথ্য বলছে, গত ৩০ বছরে আর্কটিক বরফ ৪০%-এর বেশি হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে, অ্যান্টার্কটিকার লারসেন-সি বরফখণ্ডের মতো বিশাল হিমশৈলটিও গলে গিয়েছে। এছাড়াও হিমালয় এবং আল্পস অঞ্চলের হিমবাহও দ্রুত গলছে। এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধি ঘটছে ব্যপকভাবে।
আরও পড়ুন: মানুষ বিলুপ্ত হয়ে গেলেও পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে এই প্রাণী
পরিসংখ্যান বলছে, হিমশৈল গলনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৯০১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বর্তমান হার অনুযায়ী, এটি ২১০০ সালের মধ্যে ১ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর ফলে জলবায়ুর উপরেও ব্যপক প্রভাব পড়ছে। তৈরি হচ্ছে চরম আবহাওয়া। পাশাপাশি, ঝড়, বন্যা, এবং তীব্র খরা বেড়েই চলেছে। জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিও হচ্ছে এর কারণে। পোলার বিয়ার এবং অন্যান্য মেরু অঞ্চলের প্রাণী আজ বিলুপ্তির পথে। পাশাপাশি, মানব জীবনেও এর মারত্মক প্রভাব পড়তে চলেছে। উপকূলীয় এলাকা এবং দ্বীপ রাষ্ট্রগুলি এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জলের নিচে চলে যেতে পারে। এছাড়াও, হাইড্রোক্লাইমেটিক ব্যাঘাত হতে পারে। অর্থাৎ, বরফ গলনের ফলে সাগরের স্রোতের ধরণ বদলে যেতে পারে, যা চরম তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটাবে।
পাশাপাশি, জমে থাকা পার্মাফ্রস্ট গলে প্রচুর মিথেন গ্যাস মুক্তি পেতে পারে, যা গ্রিনহাউস প্রভাব আরও বাড়াবে। গ্লোবাল রিফিউজি সংকটও দেখা যেতে পারে এই কারণে। ফলে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের জন্য নতুন বাসস্থান খুঁজে পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। অর্থাৎ, এভাবে যদি দিনের পর দিন জলবায়ু পরিবর্তন হতে থাকে, তাহলে একদিন একই বিরাট বিপর্যয় নেমে আসবে পৃথিবীর বুকে। হয়তো, এর ফলে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাবে মানব সভ্যতা। তাই আমাদের সকলের পরিবেশকে বাঁচানোর অঙ্গীকার নেওয়া উচিত।
দেখুন আরও খবর: