কলকাতা: নাবালকের শিক্ষা নিয়ে ছেলে খেলা করবেন না। আপনাদের স্বামী স্ত্রীর সমস্যায় নাবালক পুত্র কেন উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে? মন্তব্য কলকাতা হাইকোর্টের (High Court) বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যর। নিম্ন আদালতের নজরদারিতে চলবে নাবালকের বিদ্যালয় শিক্ষা, নির্দেশ বিচারপতি ভট্টাচার্যের। প্রবীণ আইনজীবীদের মতে কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশিকা বিচার ব্যবস্থায় নিদর্শন হয়ে থাকবে।
২০১৩ সালে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথ গঞ্জের বাসিন্দা সোমনাথ সরকারের সঙ্গে জিয়াগঞ্জের বাসিন্দা কুহুমিতা ব্রহ্মের বিবাহ হয়। বিগত ৫ বছর ধরে শুরু হয় সম্পর্কের টানাপড়েন। ১১ বছরের নাবালক পুত্রকে নিয়ে কুহুমিতা থাকেন জিয়াগঞ্জে। কুহুমিতার অভিযোগের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতে চলে বধু নির্যাতন মামলা। মামলা পাল্টা মামলা চলে নিম্ন আদালতে। আদালতের নির্দেশে মাসে দুবার করে ছেলের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পান সোমনাথ। জিয়াগঞ্জের একটি বাংলা মাধ্যমে পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র ওই নাবালক পুত্র।
আরও পড়ুন: কলেজ কর্তৃপক্ষের আস্কারাতেই মনোজিৎ মিত্রের বাড়বাড়ন্ত?
কুহুমিতার আর্থিক সামর্থ্য নেই। তাই নাবালক পুত্রকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সোমনাথ বাবু। স্বামী ও স্ত্রীর সমস্যার জন্য একজন নাবালক পুত্র উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। এক্ষেত্রে আদালত কোনভাবেই ওই নাবালক পুত্রকে তার শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে দেবে না। একজন নাবালক পুত্রের শিক্ষা নিয়ে এভাবে খেলা করবেন না। স্ত্রীর ক্ষমতা নাও থাকতে পারে। এক্ষেত্রে পিতা সমস্ত দায়িত্বভার বহন করবে। যেখানে পিতা চাইছেন পুত্রকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে সেখানে কখনোই তা থেকে বঞ্চিত করা যায় না। নাবালক পুত্রের শিক্ষার কথা ভেবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ইগোর লড়াই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
নাবালক পুত্রকে সরকারি কোনো ভালো বিদ্যালয় ভর্তি করানো যায় কিনা সে বিষয়ে বিচারপতি রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের এক আইনজীবীকে এজলাসে ডেকে পাঠান। সমস্ত খোঁজ খবর নেয়ার পর দুপক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতেই বিচারপতির কড়া নির্দেশ। অবিলম্বে ওই নাবালক পুত্রকে বাংলা মাধ্যম থেকে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ এর ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে হবে। এক্ষেত্রে দুটি বিদ্যালয় কেই তার ভর্তির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করতে হবে। বাবা সোমনাথ বাবুকে এই ভর্তির ক্ষেত্রে সমস্ত রকমের আর্থিক ভার বহন করতে হবে। মা কুহুমিতা দেবীকে সব রকমের সহযোগিতা করতে হবে। নাবালক পুত্রের বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার জন্য সম্পূর্ণ আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। নাবালক পড়তে শিক্ষার সমস্ত খরচ বহন করতে হবে বাবাকে। আদালতের এই নির্দেশ সঠিকভাবে কার্যকরী হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে সম্পূর্ণ নজরদারি করবেন বহরমপুরের অতিরিক্ত বিচারক। আদালতের এই নির্দেশ কোথাও গাফেলতি হলে উভয়পক্ষই নিম্ন আদালতের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবে।
দেখুন আরও খবর: