হুগলি: একটানা ভারী বৃষ্টি অন্যদিকে ডিভিসির জল ছাড়া ফলে বানভাসি দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা। এই বন্যা পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী ডিভিসিকে দায়ী করেছেন। মেন মেড বন্যা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই সুর মিলিয়ে বন্যার জন্য ডিভিসিকেই কাঠগড়ায় তুলল হুগলির তৃণূমূল সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় (Rachana Banerjee)। বুধবার বলাগড়ের ভাঙন পরির্দশনে যান তৃণমূল সাংসদ। গ্রামবাসীর খোভের মুখে পড়েন হুগলি সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, কুইন্টাল কুইন্টাল জল বেরিয়ে আসছে। মানুষের বাড়িঘর কিচ্ছু নেই! সবাই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন। আর ডিভিসি বলছে, জানিয়ে পাঠিয়েছে! রচনা জানান, সত্যিটা কি এই মুহূর্তে তাঁর জানা নেই। তবে যা হয়েছে, ঠিক হয়নি। তবে সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। যদিও রচনার কিউসেক ও কুইন্টালের মধ্যে গুলিয়ে ফেলা নিয়ে খোঁচা দিয়েছে বিজেপি।
গত কয়েকদিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টি ও নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হুগলি জেলার বলাগড় (Flood Effected Balagarh) বিধানসভা। গঙ্গার ধারাবাহিক ভাঙনের ফলে সারা বছরই এলাকার মানুষদের সমস্যায় পড়তে হয়। প্রায় প্রতি বছরই নদীর ভাঙনে বাসস্থান, স্কুল, ব্রিজসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বলাগড়ের মিলনগড়, চড়খয়রামারি এবং অন্যান্য এলাকাগুলির বাসিন্দারা এই সমস্যার কারণে চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন। নদী ভাঙনের ফলে তাঁদের অনেকেরই ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও জীবিকা সমস্যার মুখে পড়েছে। এছাড়া পারাপারের জন্য ব্যবহৃত ব্রিজগুলোও ভাঙনের কবলে পড়েছে, যার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
বুধবার হুগলির নবনির্বাচিত সংসদ রচনা ব্যানার্জি এলাকাটি পরিদর্শনে আসেন। প্রথমে তিনি বলাগড়ের চাদরা কলোনির ভাঙন পরিদর্শনে যান। বলাগর চাদরা কলোনি একটা বৃহৎ অংশ গঙ্গায় ভাঙনের কবলে। সাংসদ বলাগড়ের বন্যা কবলিত এলাকায় পরিদর্শনে গেলে সেখানকার মানুষ তাঁকে ঘিরে নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দেয়। বিভিন্ন রকম অভাব অভিযোগের কথা সাংসদকে জানান। যাদের বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে তাদের আবাসের ঘর মেলেনি বলেও অভিযোগ জানান তারা। রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সাংসদ হিসেবে পাশে আছি। সমস্ত কথা শুনে তাদের আশ্বাস দেন বিষয়টি পার্লামেন্টে তুলেবেন। তিনি চেষ্টা করবেন যত তাড়াতাড়ি এই সমস্যা সমাধান করা যায় সেটা দেখার। হুগলির বলাগর এর তিনটি গ্রাম ডিভিসির জল ছাড়ার ফলে প্লাবিত হয়। বিশেষ করে চর খইরামারী এবং মিলনগড় দুটি গ্রামে জল ঢুকে যাওয়ায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এদিন ওই তিনটি গ্রামে বন্যাকবলিত মানুষের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাসও দেন। মিলনগড় বন্যা কবলিত গ্রামে গিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় খাবার, শাড়ি কাপড় তুলে দেন। বন্যা কবলিত মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং তারপর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
আরও পড়ুন: কেষ্ট বীরভূমে ফিরতেই কি পট পরিবর্তন হতে চলেছে!
সাংবাদিকরা যখন তাকে প্রশ্ন করে রাজ্যে বন্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন ম্যান মেড বন্যা। কিন্তু DVC বলছে জানিয়ে জল ছাড়া হয়েছে তখন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যেটা হয়েছে সেটা খুব খারাপ হয়েছে আমার সে ব্যাপারে কোন মন্তব্য করার কিছু নেই। মুখ্যমন্ত্রী যেটা বলছে সেটা ঠিকই বলছেন। তিনি যখন কোন বক্তব্য করেন সমস্ত কিছু ভেবেচিন্তেই বলেন। তিনি বলেন, তাছাড়াও এমন একটা পরিস্থিতি হয়েছে ডিভিসি না জানিয়ে কুইন্টাল কুইন্টাল জল ছেড়ে দিয়েছে। রচনা বলেন, প্রশাসনের তরফ থেকে এই সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এও বলেন যে, নদী ভাঙন রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে যাতে আগামীতে এই ধরনের পরিস্থিতি আর সৃষ্টি না হয়।
দেখুন ভিডিও