কলকাতা: স্টার থিয়েটারের (Star Theatre) নাম বদল করে বিনোদিনী থিয়েটারের করা হবে বলে সন্দেশখালিতে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তার পরেই তৎপরতা কলকাতা পুরসভা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন মেয়র পরিষদ হেরিটেজ বিভাগ স্বপন সমাদ্দার। তার দাবি স্টার থিয়েটারের নাম আসলে নটি বিনোদিনী নামের নামকরণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তৎকালীন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার ফলে তার নামের বদলে স্টার থিয়েটারের হয়েছিল। মেয়র পরিষদ হেরিটেজ বিভাগ স্বপন সমাদ্দার জানান যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণায় আমরা খুশি। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্টারের নাম বদলে হল বিনোদিনী থিয়েটার। সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে নতুন নামের অস্থায়ী ফলক লাগিয়ে ফেলেছে কলকাতা পুরসভা (Kolkata municipal corporation)।
সন্দেশখালিতে দাঁড়িয়ে সোমবার দুপুরে এই নামবদলের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিকেলেই নামফলক বদল করে দেয় পুরসভা। মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) জানান, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর আমরা স্টার নামের ফলক সরিয়ে দিয়েছি। এখন অস্থায়ী ফলক লাগানো হয়েছে। এরপর স্থায়ী ফলক লাগানো হবে। মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বে কলকাতা পুরসভা হেরিটেজ কনজারভেন্সি কমিশনের নামকরণের সুপারিশের পর মেয়র পরিষদ বৈঠকে এবং তার পর কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশনে স্টার থিয়েটারের নাম বদলে বিনোদিনী থিয়েটারের নাম প্রস্তাব পাস করা হবে। তার পরেই নাম পরিবর্তনের পদ্ধতিগত কর্মকাণ্ড শুরু হবে বলে জানালেন মেয়র পরিষদ হেরিটেজ বিভাগ স্বপন সমাদ্দার।
আরও পড়ুন: বদলে যাচ্ছে স্টার থিয়েটারের নাম! জনালেন মুখ্যমন্ত্রী
প্রসঙ্গত নটি বিনোদিনী সমাজের সকল স্তরের মানুষই তার অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। তার প্রশংসকদের তালিকায় ছিলেন রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র, ফাদার লাঁফো, এডুইন আরনল্ড, কর্ণেল অলকট প্রমুখ। রামকৃষ্ণদেব তার চৈতন্যলীলার অভিনয় দেখে তাকে গ্রীনরুমে গিয়ে চৈতন্য হোক বলে আশীর্বাদ করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র তার উপন্যাসের চরিত্রগুলিকে বিনোদিনীর মধ্যে দিয়ে সফলভাবে গড়ে উঠতে দেখেছিলেন। তার অভিনয়ের গুরু গিরিশচন্দ্র ঘোষ তার বহু প্রশংসা করেছিলেন। বিনোদিনীর ত্যাগ স্বীকারে যে নতুন থিয়েটার তৈরি হয় বিনোদিনীর নাম তাতে থাকেনি। এই নতুন থিয়েটারের নাম হয় স্টার থিয়েটার। এই বিশ্বাসঘাতকতায় যখন বিনোদিনী দুঃখে বেদনায় মন ভেঙে পড়ে। ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে মাত্র ২২-২৩ বছর বয়েসে তিনি রঙ্গমঞ্চ ত্যাগ করে যান। তারপর দীর্ঘদিন জীবিত থাকলেও কখনও অভিনয়ে ফিরে আসেননি। ফলে বাংলা থিয়েটার বঞ্চিত হয় এক অসামান্য অভিনেত্রীর প্রতিভা এবং অভিনয় থেকে।যৌনকর্মীর সন্তান হওয়ার পর থেকে বারবার জীবনের নানা মুহূর্তে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন নটী বিনোদিনী। ১৮৮৩ সালে ৬৮ বিডন স্ট্রিটে নির্মিত হল থিয়েটার ভবন। কথা ছিল, বিনোদিনীর নাম অনুসারে তার নাম হবে বি থিয়েটার, কিন্তু গিরিশচন্দ্র ও অন্য পুরুষ অভিনেতাদের চক্রান্তে থিয়েটারটি ‘স্টার থিয়েটার’ নামে রেজিস্ট্রি হল। বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হলেন বিনোদিনী। কিন্তু আজকে থ্রেটের জগতের তারা অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্টার থিয়েটারের নাম বিনোদিনী থিয়েটার করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সমস্ত স্তরের মানুষ। আজকেই স্টার থিয়েটারের নাম তুলে দিয়ে বিনোদিনী থিয়েটারের বোর্ড লাগানো হছে।
অন্য খবর দেখুন
