পবিত্র ত্রিবেদী, কলকাতা
মহিলারা শুধুই সংসারের চালিকাশক্তি নন। ক্ষমতায় কাকে বসানো হবে তার নির্ণায়ক এখন মহিলারাই। মহরাষ্ট্র ভোটে তা ফের একবার প্রমাণিত হল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে মহিলাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করতে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা পাঠিয়ে ইতিহাস গড়েন। অনেকেই বলেন পরের পর নির্বাচনে বাংলায় সবুজ ঝড়ের জন্য তা অনেকটাই প্রভাব ফেলেছে। একই পথে এখন হাঁটতে শুরু করেছে প্রায় সব রাজ্যই। একই পথে পা বাড়াতে ‘বাধ্য’ হচ্ছে মমতা-বিরোধী বিজেপি শিবিরও। গত লোকসভা ভোটে বিপুল ধাক্কার পরে মহারাষ্ট্রের (Maharastra) এনডিএ (NDA) সরকারও একইভাবে মহিলাদের জন্য ‘লড়কি বহিন’ প্রকল্প চালু করে। ঠিক এক বছর আগে এই নভম্বের মাসেই মধ্যপ্রদেশে এনডিএর সঙ্কটজনক অবস্থা থেকে সাফল্য দিয়েছিল মহিলাদের জন্য চালু ‘লাডলা বেহনা’ প্রকল্প। শনিবার বেলা ১টা পর্যন্ত গণনায় যা ফল প্রকাশিত হয়েছে তাতে ২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় এনডিএ জোট ‘মহাযুতি’ এগিয়ে রয়েছে ২২৩ আসনে। অর্থাৎ ১৪৫ ম্যাজিক ফিগার পার করে ‘রেকর্ড’ গড়ে ফের সরকার গড়তে চলেছে এনডিএ-র মহাযুতি জোট। এর আগে কোনও জোটই মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ২০০-র গণ্ডী পার করতে পারেনি। বিজেপি এগিয়ে ১২৫ আসনে, একনাথ শিন্দের শিবসনে ৫৫টি আসনে, অজিত পওয়ারের এনসিপি ৩৮ আসনে এগিয়ে রয়েছে। ইন্ডিয়া জোটের ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’ এগিয়ে মাত্র ৫৬ আসনে। অথচ মাত্র মাস ছয়েক আগে হওয়া লোকসভা ভোটে মুখ থুবরে পড়েছিল এনডিএ। মহারাষ্ট্রে ৪৮টি আসনের মধ্যে এনডিএ পেয়েছিল মাত্র ১৭টি আসন। ফলে মহারাষ্ট্রে ‘নভেম্বর বিপ্লব (ইতিহাসে বিখ্যাত)’-এর জন্য ওই প্রকল্পের সুফল কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে ২০টি আসনে, শরদ পওয়ারের এনসিপি এগিয়ে ১৯টি আসনে, উদ্বব ঠাকরের শিবসেনা এগিয়ে ১৩টি আসনে।
গত ২৮ জুন বাজেটে মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী অজিত পাওয়ার ‘মুখ্যমন্ত্রী মাঝি লড়কি বহিন যোজনা (মুখ্যমন্ত্রীর আমার প্রিয় বোন যোজনা)’ ঘোষণা করেন। তাতে বরাদ্দ করা হয় ৪৬ হাজার কোটি টাকা। প্রতি মাসে ২.৫ কোটি মহিলাকে ওই টাকা দেওয়ার ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন: অসমে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত ৮, তিনজন কোচবিহারের বাসিন্দা
গত লোকসভা নির্বাচন ও হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষা মেলেনি। তবে মহারাষ্ট্রে বুথ ফেরত সমীক্ষা ভুল প্রমাণিত হল না। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বই-মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে এনডিএ। তবে অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষায় মহাযুতি জোটকে গড়ে ১৫৫টি আসন পাবে বলা হয়েছিল। কিন্তু, তাকেও ছাপিয়ে গেল বিজেপি জোট। ত্রিশঙ্কু না হওয়ায় কংগ্রেস, উদ্ধব ঠাকরে, শরদ পওয়ারদের মহাবিকাশ আঘাড়ী জোট এনডিএ থেকে একনাথ শিন্দে বা অজিত পওয়ারকে ভাঙিয়ে এনে সরকার গড়তে পারবে সেই সম্ভাবনা রইল না। একইসঙ্গে শিবসেনার নতুন ‘মালিক’ একনাথ শিন্দে, এনসিপির নতুন ‘মালিক’ হিসেবে অজিত পওয়ারকেই স্বীকৃতি দিলেন মারাঠাবাসী। বালাসাহেব ঠাকরের শিবসেনা ভেঙে একনাথ শিন্দে এনডিএ শিবিরে যোগ দিয়ে নিজেকেই শিবসেনার মালিক হিসেবে দাবি করেন। সেখানে কার্যত নৈতিকভাবে পরাজিত উদ্ধব ঠাকরে। একইভাবে মরাঠা স্ট্রংম্যান শরদ পওয়ারের এনসিপি ভেঙে ভাইপো অজিত পওয়ারও নিজেকে ‘আসল’ এনসিপি বলে দাবি করেন। প্রতীকের স্বীকৃতিও মিলেছে একনাথ-অজিতের। এবার জনতা কিন্তু তাতেই সিলমোহর দিল। এমনিতেই লোকসভায় ৪০০ আসনের দাবি করে দেশে মাত্র ২৪০ আসনে থেমে যেতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। নীতীশ কুমারের জেডিইউ ও চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপির ভরসায় নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বার কেন্দ্রে সরকার গড়েছেন। ফলে কিছুটা হলেও মহারাষ্ট্রের এই ফল মোদিকে অক্সিজেন জোগাবে। গত লোকসভা নির্বাচনে মোদির আত্মপ্রত্যয়ের জোরে আরএসএস না কি সেভাবে মাঠেনি নামেনি বলে শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু, মহারাষ্ট্রে আরএসএস কোমর বেঁধে নেমেছিল। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে নাগপুরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ নীতিন গাদকারিকেই মহরাষ্ট্রের ভোটে প্রচারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। মহাযুতি জোট- বিজেপি, শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে) এবং ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (অজিত পাওয়ার)-এর মধ্যে এখন কে মুখ্যমন্ত্রী হন সেটাই দেখার। কারণ বিজেপির দেবেন্দ্র ফডনবিশ, শিবসেনার একনাথ শিন্দে দুজনেই দলীয়ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ভাসিয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার মহারাষ্ট্র বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগেই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। না হলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে। তাই জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত লোকসভা ভোটেও বিজেপিকে দুরমুশ করে রাজ্যে ২৯টি আসন পেয়েছে তৃণমূল। মহিলাদের জন্য শুধু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর নয়, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ট্রেনে ফ্রি মাসিক মান্থলি পাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দেখুন অন্য খবর: