কলকাতা: বাঙালির নতুন বছর শুরু হয় পয়লা বৈশাখ (Poila Baisakh 2025) থেকে। এই দিনটি শুভ কাজের জন্য খুবই শুভ। বছরের আর পাঁচটা দিন যতই বিদেশি রীতিনীতি অনুকরণ করি না কেন পয়লা বৈশাখের দিন সাজপোশাক থেকে খাওয়াদাওয়াতে ১৬ আনা বাঙালিয়ানা চাই। নববর্ষের (Bangla New Year) কয়েক দিন আগে থেকে সমাজমাধ্যম খুললেই শাড়ি আর পাঞ্জাবির রমরমা, রেস্তরাঁগুলিতে নববর্ষ ‘স্পেশাল’ মেনুর বাড়বাড়ন্ত! নববর্ষ মানেই বাঙালিদের রসনাতৃপ্তি। কিছু বছর পিছিয়ে গেলে দেখা যাবে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে প্রায় সকলের বাড়িতে দুপুরের মেনুতে পায়েস মাস্ট। দুপুরে ডাল, ভাজা, মাছ, মাংসের পদ দিয়ে হত জমিয়ে ভূরিভোজ। বিকেলে মা ঠাকুমাদের হাতে মাংসের ঘুগনী, ডিমের ডেবিল। কনফ্লেক্স সিরিয়াল পিৎজার যুগে অনেক বাঙালি খাওয়ার হারিয়ে যেতে বসেছে।
এই নববর্ষ বরণ করুন হারিয়ে যাওয়ার সেই সব খাবারকে ফিরিয়ে এনে। বছরভর যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, খাওয়াদাওয়ায় ভোজনরসিক বাঙালিকে হার মানাবে কার সাধ্যি! নববর্ষ মানেই তপসে মাছ ভাজা, বরিশালের মাংসের চপ, ঢাকাই মাছের ঝোল, ক্রিসপি ফিশ ইন পেনাং কারি, কুং পাও চিকেন, পটলের দোরমা। মিষ্টি দিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকে বাঙালি। তাই একবার হলেও ট্রাই করতে পারেন ঐতিহ্যবাহী দিলখুশ, রোজ ক্রিম, আবার খাব, মনোহর প্যারাডাইস, বেকড চকোলেট রসগোল্লা, তিরামিসু, জিলিপি, মালপোয়া দুপুরের ভুড়িভোজ জাস্ট জমে যাবে।
গরমে পয়েলা বৈশাখের একটি অন্যতম জনপ্রিয় খাবার পান্তা ভাত। এটি সাধারণত আগের দিনের ভাতকে পানিতে ভিজিয়ে রেখে তৈরি করা হয়। বৈশাখের সকালে পান্তা ভাতের সঙ্গে লবণ, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, আর কাঁচা আম পরিবেশন করা হয়। এই খাবারের তাজা স্বাদ এবং সহজ প্রস্তুতি বৈশাখের উষ্ণ আবহাওয়ায় এক বিশেষ প্রাসঙ্গিকতা বহন করে। বৈশাখের খাবারের তালিকায় ইলিশ মাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইলিশ সাধারণত সরষে দিয়ে রান্না করা হয় বা স্রেফ ভেজে পান্তা ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। বৈশাখী টেবিলে পান্তা ভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছ জমে যাবে, বরং খাবারের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতীক।
আরও পড়ুন: সৌভাগ্য বৃদ্ধি করতে রামনবমীর দিন এই কাজগুলো করুণ
বৈশাখী খাবারের তালিকায় ভর্তা এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বাঙালির বৈশাখী মেন্যুতে বিভিন্ন রকমের ভর্তা থাকে, যার মধ্যে আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, টমেটো ভর্তা, ধোঁয়া মরিচ ভর্তা অন্যতম। আলু ভর্তা তৈরি করা হয় সেদ্ধ আলু, সরিষার তেল, কাঁচা মরিচ এবং লবণ দিয়ে। বেগুন ভর্তা সাধারণত ভাজা বেগুন বা পোড়া বেগুন দিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়াও চিংড়ি বাটা। প্রতিটি ভর্তার স্বাদ ভিন্ন হলেও এগুলো বৈশাখী খাবারকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। ইলিশ কোরমা একটি খুবই মসলাদার রান্না যেখানে ইলিশ মাছ পেঁয়াজ রসুন আদা বাটা দিয়ে রান্না করা হয় আর তার সঙ্গে কাজু কিসমিস বাটা। এই খাওয়ার মুখে দিলেই ফিরে পাবেন পুরনো ঐতিহ্য।
কালের নিয়মে হারিয়ে গিয়েছে অনেক রান্না। লোকমুখে প্রচার পেয়ে পেয়ে ফিরে এসেছে মোচা, থোড়, ডুমুর, কোফতা, দোলমা। কিন্তু পানিফলের ডালনা, কিংবা নালতে পাতা দিয়ে সজনে ফুলের ঘণ্ট, তাল আঁটির ডালনা, শাক শশ্শরি, রসজ, বেগুনের বিরিঞ্চি, তিলেপটেশ্বরী, গলদা চিংড়ির ধোঁকা, ডিমের জিলিপি, কপির দম্পক্ত, ভেড়ার হাঁড়ি কাবাব, পিটুলি বাটা দিয়ে মাছের শুক্তো, থোড়ের কড়ুই, যা বাঙালি একেবারে ভুলে গিয়েছে। এই নববর্ষে বাড়িতে ট্রাই করতে পারেন।
নববর্ষে দিন যারা নিরামিষ খেতে চান তাদের জন্য ভাপা পনির আদর্শ। নারকোল চিংড়ির বড়া,রুই মাছের মাথা দিয়ে কলার মোচা, কই মাছের গঙ্গা যমুনা। কাঁচালঙ্কা মুরগি একটি ঐতিহ্যবাহী বাঙালি রান্না যাতে তেল বা তেমন কোনো মশলা ব্যবহার হয়না বলে এটি একটি স্বাস্থ্যকর পদ হিসেবেই পরিচিত। খুব সামান্য ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে খুব সহজেই বানিয়ে নেওয়া যায় এই রান্নাটি। পোস্ত মুরগি একটি অতি পরিচিত বাঙালি রান্না যেখানে পোস্ত বাটা দিয়ে মুরগির মাংস রান্না করা হয়। এটি খুব চটজলদি রান্না করা যায় এবং খেতে খুবই ভালো হয়। আম আদা পার্সলে ফিস, রাঙা আলু ও কিডনি বিন ক্রোকেট, আজওয়াইন পনির ফ্রিটার, স্টিমড রাইস, বাসমতী পোলাও, লুচি, স্যালাড, সোনা মুগ ডাল, ঝুরি আলু ভাজা, ভাঙাবড়ি শুক্তো, ভাজা মশলা আলুরদম, চিংড়ি মালাইকারি, ভেটকি পাতুড়ি, মুরগির ঘটি গরম কিংবা মটন সিপাহী। দুপুরে খাওয়ার পর শেষ পাতে খান কাঁচা আমের শরবত।
অন্য খবর দেখুন