দেবাশিস দাশগুপ্ত: আগামিকাল বুধবার বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে বাংলারও ছটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন (By-elections)। ছটি কেন্দ্রের জয়ী বিধায়করা সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটে (Lok Sabha poll) প্রার্থী হয়ে জিতে যান। তাঁদের ছেড়ে যাওয়া আসনগুলিতেই বুধবার ভোট হতে চলেছে।
এই ভোটে প্রার্থীদের হারজিতের ফলে রাজ্যের সরকার পরিবর্তনের কোনও বিষয় নেই। তবু এই উপনির্বাচনের দিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের। আগামী ১৭ মাস পরই রাজ্য বিধানসভার ভোট। পাশাপাশি আর জি কর-কাণ্ডের পর এই প্রথম রাজ্যে কোনও নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আর জি কর হাসপাতালে চেস্ট মেডিসিন বিভাগের মধ্যে মেধাবী তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা ঘিরে সারা রাজ্যে তোলপাড় চলে গত তিন মাস ধরে। সেই ঘটনার সিবিআই তদন্ত চলছে। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের বিচার প্রক্রিয়া সোমবার থেকে শুরু হয়েছে শিয়ালদহ আদালতে।
ওই ধর্ষণ এবং খুনের প্রতিবাদে রাজ্যে নাগরিক আন্দোলন গড়ে ওঠে রাজনৈতিক ছোঁয়া বাঁচিয়ে। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা তাঁদের কর্মসূচিতে রাজনৈতিক পতাকা নিয়ে কাউকে ঢুকতে দেননি। শাসকদল তৃণমূলের দাবি, এই আন্দোলনের পিছনে বাম এবং অতিবামদের মদত রয়েছে। তৃণমূলকে হেয় করতেই জুনিয়র ডাক্তাররা এই আন্দোলন করছেন।
বাম, অতিবামদের দাবি, এটা নাগরিক আন্দোলন। তার প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে। আবার বিজেপি নেতারা মনে করছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের এই আন্দোলনের অপমৃত্যু ঘটেছে।
আরও পড়ুন:৭০০ বছরের পুরনো সৌধে জবরদখল! ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট
শাসকদল তৃণমূল মনে করছে, আর জি কর আন্দোলনের আঁচ শুধু শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তার ছোঁয়া গ্রাম-বাংলায় লাগেনি। বুধবার যে ছটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন, তার মধ্যে নৈহাটি এবং মেদিনীপুরের আসনদুটি মোটামুটি শহরকেন্দ্রিক। বাকি চারটি কেন্দ্র হাড়োয়া, তালড্যাংরা, সিতাই এবং মাদারিহাট একেবারেই গ্রামীণ এলাকা।
এই সব এলাকায় আর জি কর নিয়ে নাগরিক আন্দোলনের ছোঁয়া তেমনভাবে লাগেনি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এবারের এই নাগরিক আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন মূলত মহিলারা। এই মহিলা মহলের ভোট তৃণমূলের বড় সম্পদ। আর জি করের নাগরিক আন্দোলনের প্রভাব ভোট মেশিনে কতটা পড়বে, তার দিকে অবশ্যই নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।
ছটি কেন্দ্রের মধ্যে শুধু মাদারিহাট আসনটি ছিল বিজেপির হাতে। বাকি পাঁচটিই তৃণমূলের দখলে ছিল। ফলাফল ৫-১ থাকবে নাকি ৬-০ হবে, কৌতূহল থাকবে তা নিয়েও। প্রশ্ন উঠছে, বামেরা কি শূন্যের গেরো কাটাতে পারবে ? বামেরা অবশ্য নিজেরাও এমন দাবি জোর গলায় করতে পারছে না। তাদের বক্তব্য, মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে অঘটন ঘটলেও ঘটতে পারে। এবার উপনির্বাচনে লড়াই হচ্ছে চতুর্মুখী। তৃণমূল এবং বিজেপি ছাড়াও ময়দানে রয়েছে বাম এবং কংগ্রেস।
বৃহত্তর বাম ঐক্যের স্বার্থে বামেরা এবার সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে। লিবারেশন বামফ্রন্টে নেই। গত লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটেও লিবারেশন তৃণমূলের পক্ষে কথা বলেছিল। বাংলায় এই প্রথম বামেরা কোনও নকশালপন্থী দলের সঙ্গে সমঝোতায় গেল। লিবারেশনকে নৈহাটি আসনটি ছেড়েছে বামেরা।
হাড়োয়া আসনটি তারা ছেড়েছে আইএসএফকে। লোকসভায় আসন সমঝোতা হলেও এই উপনির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের রফা হয়নি। কংগ্রেস ছটি আসনেই এককভাবে লড়াই করছে।
দেখুন অন্য খবর: