কলকাতা: জেলায় জেলায় আলু ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট (Potato Traders on Strike ) মঙ্গলবার তিনদিনে পা দিল। কলকাতা থেকে শুরু করে বর্ধমান, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, ছবিটা প্রায় সব জায়গাতেই সমান। বাজারে আলুর জোগান কমছে, বাড়ছে খুচরো বাজারে আলুর দামও (Potato Price Hike )। কোথাও কোথাও আবার আলু উধাও। সরকার ও আলু ব্যবসায়ীদের টানাপড়েনে ভোগান্তি বাড়ছে ক্রেতাদের। রাজ্য সরকার ভিনরাজ্যে আলু রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় সোমবার থেকে ধর্মঘট নেমেছে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। তার জেরে মঙ্গলবার বাজারে বাজারে চড়ছে আলুর দাম।
এদিকে সূত্রের খবর, তৃণমূল পাল্টা সংগঠন গড়ে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতিকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে। এর জন্য কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না এবং কৃষিমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন বিধানসভা ভবনে রাজ্ মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলু ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট নিয়ে আলোচনা হয়। তৃণমূলের দাবি, প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতিতে সিপিএম এবং বিজেপির পাল্লা ভারী। তারা সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করছে। ২০১৪ সালেও রাজ্যে আলু নিয়ে এই রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।
অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে নেমেছেন আলু ব্যবসায়ীরা। চন্দ্রমুখী আলু প্রায় মিলছে না বাজারে। কোথাও কোথাও জ্যোতি আলু পাওয়া গেলেও, তা কিনতে হচ্ছে চড়া দাম দিয়ে। কলকাতায় আলুর দাম কোথাও ৪০ তো কোথায় ৩৫ টাকায় বিকোচ্ছে। জামালপুরের বাজারে ৩৫ টাকা কেজি জ্যোতি আলু আর চন্দ্রমুখী আলুর দাম ৪০ টাকা কেজি। পাশাপাশি বাঁকুড়ার বিভিন্ন বাজারে আলুর দাম এক ধাক্কায় কিলোপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০টাকা। মেদিনীপুর পুরসভা রোডের একটি দোকানে ৩৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। হুগলির বাজারে কেজি প্রতি ৩২-৩৩ টাকায় পাওয়া যাচ্ছিল, তা মঙ্গলবার বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। চন্দ্রমুখী আলুর দাম মঙ্গলবার ৪০ টাকা প্রতি কেজি। বীরভূমের প্রায় সব বাজারেই ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে সাধারণ জ্যোতি আলু। মাথায় হাত ক্রেতাদের।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় বাজেটে একাধিক সড়ক প্রকল্পের ঘোষণা নির্মলার
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আলুর দাম কমাতে ক্রমাগত সরকারি চাপ বাড়ছে। ভিনরাজ্যে রফতানিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্য। তবে কোনও সরকারি নির্দেশিকা নেই। কোনও কোনও জাতের আলু রফতানি করতেই হয়। জেলায় জেলায় পুলিশ আলুর গাড়ি আটকাচ্ছে। এর প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে আলু ব্যবসায়ী সমিতি। তাঁরা জানিয়েছেন, ফলন কম হওয়ার জন্যই আলুর দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, মুনাফার আশায় চাষিরাও এখন হিমঘরে আলু রাখছেন। রফতানি বন্ধে বিপদে পড়েছেন আলু চাষিরাও।
আলু ব্যবসায়ীদের লাগাতার এই ধর্মঘটের জেরে কোতুলপুরের খুচরো বাজারে এবার আলুর জোগানে টান। পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করেছে আলুর দামও। এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় সাধারণ গৃহস্থ। ধর্মঘটের জেরে সমস্যায় পড়েছেন হিমঘর মালিক থেকে শুরু করে ছোট আলু চাষী ও খুচরো আলু ব্যবসায়ীরাও। রবিবার থেকেই হিমঘর থেকে আলু বের হওয়া বন্ধ। হিমঘর থেকে আলু খুচরো বাজারে না এলেও আড়তদার ও খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা মজুত আলু দিয়ে রবি ও সোমবার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজ্যের বাজারগুলিতে দিয়েছে আলুর ঘাটতি। খুচরো বাজারে আলু না আসায় আড়তদার ও খুচরো ব্যবসায়ীদের মজুত আলু এখন প্রায় শেষের দিকে। বাঁকুড়ার বিভিন্ন বাজারে আলুর দাম এক ধাক্কায় কিলোপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০টাকা।
অন্য খবর দেখুন