কলকাতা: এই কাহিনী যেন সিনেমার চিত্রনাট্য। জেলে বসে প্রস্তাব, আদালতে বিয়ে, অবাক কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। জেলে বসেই বিয়ের প্রস্তাব। ফেসবুকের মাধ্যমে প্রস্তাব। আদালতে বিবাহ। ঘটনায় স্থম্ভিত কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দ্বারস্থ প্রতারিত মহিলা (Women)। জেল সুপারের কাছে রিপোর্ট তলব কীভাবে জেলে বসেই ইন্টারনেটে ব্যাবহার, জানতে চায় হাইকোর্ট। পাশাপাশি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বিষয়েও রিপোর্ট তলব বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের।
রাকেশ রায় চৌধুরী, প্রশাসনের খাতায় একজন বড়সড় প্রতারক। তার বিরুদ্ধে ৮৬ টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে। সিঙ্গুর ও নিমতা থানা সহ বিভিন্ন থানায় তার নামে অভিযোগ জমা পড়ে। এমনকী সিবিআইয়ের ডিআইজির আপ্ত সহায়কের পরিচয় দিয়েও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সেই পরিচয়ের ভিত্তিতে লালবাতি লাগানো গাড়িও ব্যাবহার করতো। রাকেশের প্রতারণার মূল লক্ষ্য ছিল, বিবাহ বিচ্ছিন্না ও সিঙ্গেল মাদাররা। নানান আছিলায় সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে তাদের থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করতো সে। বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তীকালে কলকাতার একটি গেস্ট হাউস থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে ।
আরও পড়ুন: তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভুয়ো শংসাপত্র মনোনয়নে জমা দেওয়ার অভিযোগ
এতেও নিজের স্বভাবের কোনও সংশোধন ঘটেনি রাকেশের। জেলে বসেই সে নাম পরিবর্তন করে বাবাই রায় চৌধুরী নামে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলে। সেখানে সে ফের প্রতারণার ফাঁদ পাততে শুরু করে। নিজেকে সে একজন জমিদার পরিবারের ছেলে এবং বড় ব্যাবসায়ী বলে পরিচয় দেয়। এবং বিবাহের প্রস্তাব দেয় সে। বাবাইয়ের পাতা ফাঁদেই পা দেয় নিমতা থানা এলাকার বাসিন্দা নমিতা(পরিবর্তিত নাম)। প্রেসিডেন্সি জেলে বসেই ব্যারাকপুর আদালতে আসার প্রস্তাব দেয়। সেই সময় নমিতাকে সে জানায় তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। অবিলম্বে সে জেল থেকে মুক্তি পাবে। রাকেশকে যখন ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হয় রাকেশের প্রেমে অন্ধ হয়ে নমিতা হাজির হয় আদালত চত্ত্বরে। সেখানেই রাকেশ তাকে সিঁদুর পরিয়ে বিবাহ করে।
এরপরেই ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় নমিতার কাছে রাকেশের আসল পরিচয়। নমিতার অভিযোগ প্রতিদিন রাতে জেল থেকে ফোন করে শারীরিক সম্পর্ক সংক্রান্ত বিভিন্ন কথাবার্তা ও প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করতে শুরু করে সে। এমনকী জেল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় সে নমিতার জীবনে ক্ষতিকরারও হুমকি দিতে থাকে। এই প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে উপযুক্ত বিচার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন নমিতা।
ঘটনায় স্তম্ভিত বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়। বিচারপতির নির্দেশ, একজন জেলে থাকা অভিযুক্ত কী করে জেল থেকে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যাবহার করতে পারলো? জেলের ভিতরে বসে কী করে সে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারল ও এই সমস্ত বিষয়ে জেল কর্তৃপক্ষকে একটি হলফনামা জমা করতে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের রেগুলার বেঞ্চে।
দেখুন অন্য খবর: