পূর্ব বর্ধমান: ৩০০ বছরেরও বেশী প্রাচীন পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রামের গোস্বামী খন্ড গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দূর্গাপুজো (Durga Puja 2024)। আজও একই নিষ্ঠা ও ভক্তি ভরে দুর্গাপুজোয় মাতে আউসগ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি। বন্দ্যোপাধ্যায়দের এই পুজোর বিশেষত্ব তাদের প্রতিমাকে সপ্তমী থেকে দশমীর ঘট বিসর্জন পর্যন্ত বেঁধে রাখা হয় দড়ি দিয়ে। আগে যা শিকল দিয়ে বাঁধা হত বলে জানান বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের অষ্টম পুরুষ অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই বংশের আদি পুরুষ গোপীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। তাঁর নির্মিত দুর্গা মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পুরনো মন্দিরটির পাশে একটি নতুন দুর্গা মন্দির নির্মাণ করা হয়। এই মন্দিরেই বর্তমানে দুর্গাপুজো হয়। এক সময় জমিদারি ছিল, দুর্গাপুজোও হত ধুমধাম করে। ঝাড়বাতির আলোতে মন্দির প্রাঙ্গন ঝলমল করত। মন্দিরের ভেতরের চার কোণে চারটি সুদৃশ্য বিশাল আকারের ঝাড়বাতি ছিল। সময়ের সঙ্গে পুরনো জৌলুস হারিয়েছে। জৌলুস কমলেও এখনও পুরনো রীতিমেনে পুজো হয়। রথযাত্রার দিন সকালে হয় কাঠামো পুজো। ওই দিনই মায়ের গায়ে প্রথম গঙ্গামাটি দেন কুলপুরোহিত। এখানে দূর্গার রং শিউলি ফুলের বোঁটার মতো। আগে একচালার প্রতিমা হলেও বর্তমানে সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে প্রতিমায়। মায়ের শোলার সাজও বংশপরম্পরায় তৈরি করেন স্থানীয় মালাকাররা।
আরও পড়ুন: দোলায়া মায়ের আগমন কী বার্তা দেয় ?
পরিবারের সদস্যরা জানান, বহু বছর আগে অষ্টমীর সন্ধি পুজোর সময় একবার প্রতিমার নড়ে উঠেছিল , তারপর থেকেই প্রতিমা বেঁধে রাখা হয় এখানে। সপ্তমী থেকে নবমী প্রত্যেক দিন মায়ের ভোগের প্রধান পদ হল কচুর শাক। এ ছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন রকমের তরকারি, পায়েস, মিষ্টি ইত্যাদি তো থাকেই। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিন দিনই বারোটি বিশালাকার থালায় নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। নৈবেদ্য, মিষ্টি, শরবত ও চিনির নৈবেদ্য, নাড়ু ও মুরকির নৈবেদ্য পানমশলা নিবেদন করা হয়। দশমীর দিন চিড়ে, মুড়কি, দই বিভিন্ন রকমের নাড়ু, ফল ইত্যাদির ভোগ নিবেদন করা হয়। দশমীতে কুমারী পুজোর রীতি আছে। সেই কুমারী বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের অংশ হন না এমনই কুমারী পূজা হয়। পুজোয় মন্ত্র উচ্চারণ ও তন্ত্র মন্ত্রে পুরুষ পুরোহিত থাকলেও মুখ্য পুজোর দায়িত্বে থাকেন বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির মহিলারা। বর্তমানে যিনি পুজো করছেন তিনি ও প্রায় পাঁচ বছর হল দায়িত্ব পেয়েছেন পুজোর। পুজোর দিন গুলোয় গ্রামের বাসিন্দারা ভিড় জমান বন্দ্যোপাধ্যায় দের পুজোয়। বর্ধমানের এই প্রাচীন পুজোর আনাচে-কানাচে লুকিয়ে আছে আরও অনেক না জানা ইতিহাস। এই পুজো দেখতে আসতে হলে আউসগ্রামের জঙ্গলের পথ পেরিয়ে আপনাকে আসতে হবে আরও কিছুটা। পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে এই পুজো হয়।
অন্য খবর দেখুন