কলকাতা: বাংলায় ৬ কেন্দ্রে উপনির্বাচনে (West Bengal Assembly By-Election 2024 Results) তৃণমূলের জয়জয়কার। আরজি করের আবহে শহর থেকে গ্রামে সরকার বিরোধী স্বর উঠে ছিল। তৃণমূলের জমানায় শিক্ষা থেকে খাদ্য পাহাড়-প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ। এই আবহেই উপনির্বাচনী পরীক্ষায় দাপুটে ফল করল তৃণমূল কংগ্রেস। উপনির্বাচনে একেবারে ছক্কা হাঁকিয়ে রাজ্যবাসীকে জয়ের জন্য ধন্যবাদ জানালেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee )। মমতা বলেন, “আমরা জমিদার নই, মানুষের পাহারাদার।” এই জয়ের জন্য তিনি বাংলার জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এই জয় তৃণমূলের প্রতি জনগণের আস্থার প্রতিফলন। মা-মাটি-মানুষকে জানাই বিনম্র চিত্তে অভিবাদন। জয় বাংলা। দলের কর্মী এবং জেলাস্তরের নেতাদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য ধন্যবাদ জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
নৈহাটি, মেদিনীপুর, তালডাংড়া, মাদারিহাট, সিতাই, হাড়োয়া রাজ্যের এই ছয় আসনে বিপুল ব্যবধানে জিতেছে শাসক দল। উপনির্বাচনে বিরোধীরা ধরাশায়ী। তৃণমূলের এই ফলাফল প্রত্যাশিত ছিল। মাদারিহাট আসন নিয়ে শংসয় ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাদারিহাটের গেরুয়া গড়ও ঘাসফুলের দাপট বজায় রাখল। উপনির্বাচনে আগেই শহরের বুকে ঘটে গিয়েছিল আরজি করের মতো নারকীয় ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা। যার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল শহর থেকে গ্রাম। নাগরিক আন্দোলনে সরকারের বিরোধিতা সুর চড়েছিল। জ্বলছে আরজি করের প্রতিবাদের আগুন। এখনও তিলোত্তমার সুবিচারের দাবিতে উঠছে স্লোগান। বিশেষ করে কলকাতা ও শহরতলির বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বা ক্ষোভ রয়েছে। তার ছাপ পড়ল না উপনির্বাচনে। বিশেষ করে কলকাতা লাগোয়া নৈহাটি। আরজি করের নির্যাচিতার বাড়ি নৈহাটির একে বারে কাছে। সেখানে তৃণমূলের সবুজ ঝড়ে দাঁড়াতে পারলনা বিরোধীরা। এই উপনির্বাচনে লক্ষ্ণীর ভাণ্ডারের প্রভাব রয়েছে। আবার সংখ্যালঘু ভোটের মেরুকরণের জেরেই জল গড়িয়েছে তৃণমূলের দিকে।
আরও পড়ুন: ‘আমি পাহারাদার, জমিদার নই’, ভোটের রেজাল্টের পরেই বিজেপিকে কটাক্ষ অভিষেকের
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোটের ইতিহাস দেখলে দেখা যায় উপনির্বাচনে সিংহভাগ আসনেই শাসকদলগুলি নিজেদের দখলে পাখে। শত চাপানউতোরের মধ্যে সেই ট্রেন্ডই বজায় থেকেছে। খুব একটা কাজ করেনি আরজি কর ফ্যাক্টর। অন্যদিকে লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় উপনির্বাচনে বামেদের ভোট আরও কমে গেল। যে দল ৩৪ বছর বাংলায় শাসন ক্ষমতাকে ধরে রেখে ছিল সেই দল আজ বিধানসভায় শূণ্য। মিছিলে প্রতিবাদে লাল ঝাণ্ডা দেখা গেলেও ভোট ব্যাঙ্কে তাঁ প্রতিফলন নেই। দূবল হয়ে পড়েছে বামেদের সংগঠন। মাদারিহাট, সিতাই, মেদিনীপুর ও তালড্যাংরায় বিজেপির যাও কিছু সংগঠন রয়েছে। সিপিএমের তাও নেই। তৃণমূলের নিচুতলার সংগঠনও তেমন জোরদার নয়, এখানেই একজনের ক্যারিশ্মা কাজ করেছে, তা হল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা ভোটের আগে এই উপনির্বাচনকে তৃণমূলের প্রি টেস্ট বলা যেতেই পারে। উপনির্বাচনের ফলাফল যে বাড়তি অক্সিজেন দিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সামনেই ২০২৬-এর আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন। চতুর্থবারের জন্য নীল বাড়ি দখলের নকশা তৈরি করতে, সোমবারই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সঙ্গে আলোচনায় বসে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকের আগে উপনির্বাচনে দলের এই সাফল্যের উপর ভর করে নিজেদের মাটি আরও শক্ত করতে খড়সা তৈরি হতে পারে কালীঘাটের বৈঠকে।
দেখুন ভিডিও