নয়াদিল্লি: খাবার খাওয়ার পরে সিগারেটে সুখটান দেওয়া ধূমপায়ীদের কাছে কার্যত বাধ্যতামূলক। শরীরের ক্ষতির চিন্তা করে ধূমপায়ীদের (Smokers) অনেকেই সিগারেট (Cigarettes) খাওয়া কমিয়ে দেন। কিন্তু, তাঁদেরকেও জিজ্ঞাসা করলে বলেন, কমিয়ে দিয়েছি। ওই খাবার পর একটা-আধটা খায়। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ সিগারেটের মারাত্মক ক্ষতির কথা জেনেও নেশার আসক্তিতে ধূমপান করে যান। সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের সামনে হোক, কিংবা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে, নন্দন চত্বরে গেলে যুবক, যুবতীদের নজরকাড়া ধোঁয়া ছাড়ার দৃশ্য এখন দেখা যায়। বিখ্যাত মানুষদেরও এই ধোঁয়া ছাড়ার নেশার কথা সর্বজনবিদিত। সে কিংবদন্তী চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, কিংবা পশ্চিমঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিংবা বলিউড বাদশা শাহরুখ খানকে (এখন ধূমপান ছাড়ার ঘোষণা করেছেন) প্রকাশ্যেই সিগারেট হাতে যেত। মৃণাল সেনের ইন্টারভিউ সিনেমায় নবাগত অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক ট্রামের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় ধূমপান ছাড়তে ছাড়তে চাকরি খুঁজতে যাচ্ছেন, এই দৃশ্য বিখ্যাত। এই বিড়ি-সিগারেটের আসক্তি অনেক পুরনো। তথ্যে জানা গিয়েছে, খাবার খাওয়ার পর সিগারেটের টান সবচেয়ে বেশি ধরে। “খাবার পরে ধোঁয়ার মতো কিছুই নেই”- আটের দশকে আমেরিকান চলচ্চিত্র স্ট্যান্ড বাই মি-তে অভিনেতার কণ্ঠের এই কথা এখনকার জেনওয়াই-দেরও অনেকেরই মনের। কিন্তু কেন? এবার সমীক্ষা থেকে পাওয়া গেল বিশেষ রিপোর্ট।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুযায়ী ধূমপান শরীরের উপর বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। হৃদয়, ফুসফুস এমনকী মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারে খারাপ প্রভাব বিস্তার করে। গবেষণায় উঠে এসেছে জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক কারণগুলির সংমিশ্রণ ধূমপান করার জন্য আকাঙ্ক্ষার মনোবৃত্তির কাজ করে। ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মতে, ধূমপান মস্তিষ্কে রাসায়নিকে হস্তক্ষেপ করে। ধূমপান না করলে তা ধূমপায়ীদের খিটখিটে এবং উদ্বিগ্ন করে। সিগারেটে থাকা নিকোটিন মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশকে উদ্দীপিত করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের চারপাশ নিকোটিন থাকায় অভ্যস্ত হয়ে যায়। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুযায়ী, নিকোটিন মস্তিষ্কের কাজকে পরিবর্তন করে। ধীরে ধীরে ধূমপায়ীরা যখন ধূমপান করে তখন তাঁরা ঠিক বোধ করেন। এবং ধূমপান না করলে বিরক্ত হন। খাবারের পরে ধূমপানের তাগিদ শুধুমাত্র একটি নৈমিত্তিক আকাঙ্ক্ষা নয়। বরং জীববিজ্ঞান মনোবিজ্ঞান অভ্যাসের একটি জটিল ঘটনা। ডক্টর বিনীত বঙ্গের মতে, এটা প্রাথমিকভাবে সামাজিক পরিবেশ থেকেও প্রভাবিত হওয়ার ঘটনা। যেখানে একজন ব্যক্তি সাধারণত খাবার পরে ধূমপান করেন। পিয়ার-রিভিউড জার্নাল অ্যাডিকটিভ বিহেভিয়ার্সে প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন ধরনের খাবার কীভাবে সিগারেটের আকাঙ্ক্ষা এবং সন্তুষ্টিকে প্রভাবিত করে। নির্দিষ্ট সংখ্যক ধূমপায়ীদের পরীক্ষা করা হয়েছিল। প্রতিদিন, তাঁরা তিনটি সিগারেট-ধূমপান করতেন। এবং তাঁদের একটি শক্ত খাবার, একই ক্যালোরিযুক্ত একটি তরল খাবার দেওয়া হত, কিংবা কোনও খাবার দেওয়া হত না। পরীক্ষায় প্রথম সিগারেটটি ৩০ মিনিটের মধ্যে খাওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয়টি খাবার শেষ করার ঠিক পরেই ধূমপান করা হয়। তৃতীয়টি দ্বিতীয়টির ৩৫ মিনিট পরে ধূমপান করা হয়। এই সংক্রান্ত ফলাফলগুলি বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় যে শক্ত খাবার খাওয়ার পরে সিগারেটের আকাঙ্ক্ষা সবচেয়ে শক্তিশালী। তরল খাবারের পরে কিংবা খাবার না খাওয়ার পরে চাহিদা কম। খাবার খাওয়ার পর সিগারেটের স্বাদ বেশি ভালো লাগে বলে ধূমপায়ীরা জানিয়েছেন।
(ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। Smoking is Injurious to Health)
আরও পড়ুন: ৭৮ এর পা, সোনিয়া গান্ধীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা মোদির
দেখুন অন্য খবর: