জয়জ্যোতি ঘোষ
পরনে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি। চোখে সু-প্রশাসন গড়ার অদম্য ইচ্ছে। লাল মহাকরণে তাঁর পায়চারির ছবি এখনও ভীষণভাবে স্পষ্ট। রাজনীতির পাশাপাশি খেলাধূলায় কতটা আসক্ত ছিলেন রাজ্যের দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী?
ছোটবেলায় শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় এবং পরে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক হন। কলেজের প্রথম পর্বে ছাত্র রাজনীতিতে খুব বেশি আগ্রহ ছিল না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। রাজনীতির থেকে বরং আগ্রহ ছিল কবাডি এবং ক্রিকেটে। সুযোগ পেলেই ক্রিকেটে মেতে উঠতেন সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভ্রাতুষ্পুত্র। উইকেটকিপিং করতে পছন্দ করতেন। পরবর্তীতে চোখের সমস্যার কারণে ক্রিকেট ছাড়তে বাধ্য হন। কিন্তু ক্রিকেট ছেড়ে দিলেও ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালোবাসা থেকেই গিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের টুকিটাকি খবর সবসময় রাখতেন।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন, সেইসময় ভারতীয় দলের অধিনায়কের নাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ক্রিকেটের প্রতি তীব্র ভালোবাসা সেই সময়ে এক বিন্দুতে নিয়ে এসেছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। সময়ে-অসময়ে সৌরভ গঙ্গোপাধায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন সেই সময়র রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। গ্রেগ চ্যাপেল পর্বে সৌরভের প্রতি সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। বেশ কয়েকবারই এক মঞ্চে দেখা গিয়েছে তদকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তবে সৌরভের সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে কোনও কথা বলতেন না। নির্ভেজাল ক্রিকেটীয় আড্ডায় মেতে উঠতেন দুজনে। শুধু বর্তমান ক্রিকেট নয়। পুরনো দিনের ক্রিকেট নিয়েও কথা হত দুজনের মধ্যে। আড্ডায় উঠে আসত পঙ্কজ রায়ের ব্যাটিং টেকনিকের কথাও। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ভারত রানার্স আপ হওয়ার পর সৌরভ গঙ্গোপাধায়কে সংবর্ধনা দেওয়ার হয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের তরফে।
পরবর্তীতে সিএবি নির্বাচনী প্রক্রিয়াতেও জগমোহন ডালমিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ক্রিকেট আঙিনাতেও পরিচ্ছন্ন প্রশাসন গড়ার স্বপ্ন দেখতেন তদকালীন মুখ্যমন্ত্রী।
আজ সবই স্মৃতি। তারাদের দেশে ভালো থাকুন ক্রিকেট রোম্যান্টিক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। চোখের সামনে সেই দৃশ্যটা আজও ভেসে আসছে। ট্র্যাডিশনল সাদা ধুতি-পাঞ্জাবিতে মহাকরণ থেকে বেরিয়ে আসছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য…মুখে সেই চেনা হাসি…