জয়জ্যোতি ঘোষ
অভিজ্ঞতা ১– উপলক্ষ ২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপ। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে নামার আগে তাজ বেঙ্গলে বিশেষ প্রেস কনফারেন্সে ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।
তাজ বেঙ্গলে ঢোকার ঠিক আগে দেখলাম প্রায় জনা দশেক শর্ট স্কার্টে সুন্দরী জোড়া গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধোনির ফ্যান। আর বাকিটা কোহলির। মনে মনে ভাবলাম ২২ গজের বাইরে এখনও ধোনি ধামাকা অব্যাহত। লম্বা হেয়ার স্টাইলের ক্যারিসম্যাটিক ধোনি লুক এখন উধাও। বর্তমানে মাহির গালে খোঁচা খোঁচা পাকা দাড়ি ভীষণ ভাবে স্পষ্ট। কিন্তু তা নিয়েও এই সময়ের হার্টথ্রব বিরাট কোহলিকে দিব্যি টেক্কা দিচ্ছেন। অতীতে কলকাতাতে ধোনিকে নিয়ে যতই সমালোচনার ঝড় উঠুক হাজার হলেও বাংলার এলিট জামাই লিস্টে এমএসডি-র নামও অন্তর্ভুক্ত। এই প্রেমের শহরেই ‘ধোনি-সাক্ষী’-র প্রথম আলাপ-প্রথম ভালোবাসা। তিলোত্তমারই কোনও প্রান্তে সাক্ষীর গালে বা ঠোঁটে ধোনির ঠোঁট স্পর্শ করেছিল কিনা সেটা তদন্ত সাপেক্ষ। তাই এই শহর-কে নিয়ে তিক্ততা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার ‘সিটি অব জয়’-ভীষণ স্পেশ্যাল ধোনির কাছে।
যাগগে যেটা বলছিলাম, তাজবেঙ্গলের সাংবাদিক সম্মেলনে সেদিন ভীষণ আত্মবিশ্বাসী দেখায় মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। সটাং করে বলে বসেন-‘আমরা এই মুহূর্তে সিক্সথ গিয়ারে। যেকোনও পরিস্থিতিতে যেকোনও দলকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে টিম ইন্ডিয়া।’ ওই প্রেস কনফারেন্সেই ফিনিশার প্রসঙ্গে গৌতম গম্ভীরকে একহাত নেন মাহি। উল্লেখ্য, ধোনির নেতৃত্বে ভারতের দুটি বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক কিন্তু এই গৌতম গম্ভীর। সাংবাদিক সম্মেলন শেষে ধোনির সঙ্গে করমর্দন করে কানের কাছে গিয়ে বলি-‘বিশ্বকাপের জন্য অনেক শুভ কামনা রইল মাহি ভাই। ২০০৭- এ শেষবার টি-২০ বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। ২০১৬-তে আরও একবার টি-২০ বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে আপনাকে দেখতে চায় দেশবাসী।’
প্রত্যুত্তরে বললেন ‘সেরাটা দেব। আপনারা অর্থাৎ ভারতীয় মিডিয়া এধরনের বড় টুর্নামেন্টের সময় শুধু পাশে থাকুন।’
অভিজ্ঞতা ২– ২০১৭-র প্রথমদিক। কোনোও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট নয়, সর্বভারতীয় ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলার জন্য কলকাতার ‘পিয়ারলেস ইন’-এ ঘাঁটি গেড়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ইডেনে মাহির প্রথম দিনের প্র্যাক্টিস দেখতে হাজির আমি। যেটা লক্ষ্য করলাম সেটা হল তাঁর মধ্যে অদম্য খিদে। এমন নেট প্র্যাক্টিস করলেন যেন মনে হচ্ছে কয়েক ঘন্টা বাদেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলতে নামবেন। বলে বলে এক একটা বল পাঠালেন বাউন্ডারির বাইরে। একইসঙ্গে তরুণ ক্রিকেটারদের দিলেন নিজের অমূল্য ক্রিকেটীয় জ্ঞান। সতীর্থদের ভুল ধরিয়ে দিলেন- কোনটা করা উচিত কোনটা নয়, কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল।
প্র্যাক্টিস শেষে ধোনির কাছে জানতে চাইলাম ‘এই ঘরোয়া টুর্নামেন্ট কী আগামী বড় টুর্নামেন্টের ড্রেস রিহার্সাল?’
আবার সেই স্বভাবসিদ্ধ স্টাইলে ধোনি জানান-‘ড্রেস রিহার্সাল কিনা বলতে পারব না। তবে আমার কাছে প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা ঘরোয়া টুর্নামেন্ট হোক বা আন্তর্জাতিক। খেলেঙ্গে জি জান সে।’ মনে মনে ভাবলাম যিনি দুটি বিশ্বকাপ জয়ের মালিক তিনি সামান্য একটা ঘরোয়া টুর্নামেন্টকে এতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন! আর এই মাইন্ডসেটই হয়ত আলাদা করে দিয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। কেউ ধোনি-ভক্ত হোক বা না হোক একটা কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ধোনির মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। আজকের দিনেও ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক মহেন্দ্র সিং ধোনি। মাহি মানে ম্যাজিক! মাহি মানে একটি থ্রিলার মুভি! যার শেষে কী আছে কেউ জানে না…
অন্য খবর দেখতে ক্লিক করুন: